কলকাতা: গোটা বছরটা কোভিড, অসুস্থতা, গৃহবন্দি থাকা, কাছের মানুষদের হারিয়ে ফেলা। এত খারাপ মুহূর্তের মধ্যে ফেলে আসা বছরে ভালো সময় যেন খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। নিজের অসুস্থতা থেকে শুরু করে গৃহবন্দি জীবন, তার মধ্যেও আশার আলো দেখাল ২০২১? দিয়ে গেল নতুন কী কী শিক্ষা? বাইশে রয়েছে কী কী আশা? এবিপি লাইভের সঙ্গে নতুন বছরে দাঁড়িয়ে ২০২১-কে ফিরে দেখলেন অপরাজিতা আঢ্য (Aparajita Adhya)। 


কোভিডকালেও গোটা বছরে একাধিক নতুন ছবির কাজ করেছেন অপরাজিতা। নতুন মুক্তি পাওয়া ছবির জন্য প্রশংসিতও হয়েছেন। এদের মধ্যে সেরা মুহূর্ত বেছে নিতে বললে? অপরাজিতা বললেন, 'আমি 'চিনি'-র জন্য 'ফাফদা' পুরস্কার পেয়েছি। সবসময় জীবনে পুরস্কার মানেই ভালোলাগা।' অপরাজিতা মানেই পরিবার আর পারিবারিক বন্ধনের ছোঁয়া। সেই ছোঁয়া দিয়েই অভিনেত্রী বললেন, 'বছরের শেষে দার্জিলিং আর উটি ঘুরতে গিয়েছিলাম। এত খারাপের মধ্যে ওই ঘুরতে যাওয়াটুকু যেন একঝলক তরতাজা হাওয়া। আর ৬ বছর পর কাকাশ্বশুরের বাড়িতে পিকনিক করতে গিয়েছিলাম। আমায় আইবুড়োভাতের মতো করে থালায় সাজিয়ে খেতে দিয়েছিলেন। এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই ভালো থাকার রসদ হয়ে থেকে যায়... ও হ্যাঁ, আরও একটা দিন মনে পড়ে, ২৪ ডিসেম্বর রাতটা। আমরা পরিবারের সবাই রাস্তার শিশুদের জন্য একটা ব্যাগ তৈরি করছিলাম। তার মধ্যে জ্যাকেট, কেক, চকোলেট, আরও কিছু জিনিস ছিল। ওই রাত্রে ওদের ঘুম থেকে তুলে যখন জিনিসগুলো দিচ্ছি, ওদের আনন্দটা ভোলার নয়।'




গোটা বছরটায় একাধিক প্রিয়জনের মৃত্যু দেখেছেন। অপরাজিতা বলছেন, 'আমার শ্বশুরমশাই মারা গিয়েছেন। পরিবারের একাধিক সদস্য বিয়োগ হয়েছে। তবে আমায় সবচেয়ে ধাক্কা দিয়েছে আমার পাড়ার এক বোনের স্বামীর মৃত্যু। মাত্র ৪৪ বছর বয়স। বহু চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারলাম না। ২০২১ সাল শিখিয়ে গেল, কপাল খারাপ হলে পয়সা থাকলেও মানুষকে বাঁচানো যায় না। হাসপাতালে দেখেছি, মানুষ হাতে টাকা নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আর অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতর মানুষ মারা যাচ্ছেন। হাসপাতাল জায়গা দিতে পারছে না।'


নতুন বছরে নতুন রেজ়োলিউশন নিলেন অভিনেত্রী? অপরাজিতা হাসতে হাসতে বললেন, 'রেজ়োলিউশন একমাস মনে থাকে, পরের মাসে ভুলে যাই। রেজ়োলিউশন নয়, ভগবানের কাছে একটাই প্রার্থনা, যে পথে চলছি, যেন দিকভ্রষ্ট না হই। খুব সঠিক পথে বহু বছর ধরে হাঁটছি। এভাবেই জীবনটা কেটে যাবে। ঠাকুর যে পথে নিয়ে যাবেন যাব। সেই পথে ভালো খারাপ যা কিছু আছে সবের মোকাবিলা করব। তবে হ্যাঁ, আমি ইমোশানাল ফুল। ভীষণ বোকা। সবকিছু বেশি ভীষণ আবেগ দিয়ে ভাবি, আবেগ দিয়ে কাজ করি। সেটা উচিত না। বার বার এই একই কাজ করি। নতুন বছরে এতটা আবেগপ্রবণ হয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়ার চেষ্টা করব।'


আরও পড়ুন: 'অচেনা মানুষকেও ভালোবেসে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করা যায়, শিখিয়ে গেল ২০২১'


অপরাজিতা মানেই একরাশ ঝলমলে হাসি। সারা বছর এই হাসি অমলিন থাকে কী করে? অভিনেত্রী চির পরিচিত সেই হাসিটাই হেসে বললেন, 'গতকালই ইতিহাস আর আগামীকালটা জানি না। তাই আমি আজকে বাঁচি। জীবনে যত কম অভিযোগ করবে, তত ভালো থাকবে। আমার জীবন নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। আমি কেবল বর্তমানটা নিয়ে বাঁচি।'