কলকাতা: কাজ বা ব্যক্তিগত জীবন, সবদিক থেকেই ২০২১ সালটা ভালোমন্দ মিশিয়ে কেটেছে তাঁর। তবে এই বছরেই কলেজের গণ্ডি পেরিয়েছেন তরুণ এই অভিনেতা। কিন্তু সেই সঙ্গে দেখেছেন করোনার চোখরাঙানি, হারিয়েছেন কাছের মানুষদেরও। ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় (Rwitobroto Mukherjee)। ফেলে আসা বছরের কালো-আলো, আর নতুন বছরের প্রত্যাশা নিয়ে এবিপি লাইভকে গল্প শোনালেন অভিনেতা। 


২০২১ সালটা নাকি বড়ই 'অদ্ভুত' কেটেছে তাঁর। তবুও ভালোমন্দের মধ্যে ফেলে আসা বছরের সেরা মুহূর্ত খুঁজে নিলেন ঋতব্রত। বললেন, 'এই বছর আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে স্নাতক হলাম। ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে। আমরা প্রায় ৪টে সেমিস্টার কলেজে পেয়েছি। শেষ বছরটা করোনার প্রকোপে অনলাইনেই ক্লাস হল। এরপর আমি স্নাতকোত্তর পড়াশোনার জন্য প্রাগ ফিল্ম স্কুল (Prague Film School) -এ আবেদন করেছিলাম। উত্তীর্ণ হয়েও বিদেশে যেতে পারলাম না করোনা পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিকল্পনা পিছিয়ে গিয়েছে। তারপরেও বলব, এই দুটো ফেলে আসা বছরে আমার সেরা মুহূর্ত।' আর খারাপের কথা? একটু হেসে ঋতব্রত বললেন, 'প্রায় গোটা বছরটাই খারাপ মুহূর্ত। চারপাশে এত মৃত্যু, এত মানুষের কাজ হারিয়ে যাওয়া.. নিজের পরিচিত মানুষের মৃত্যু দেখেছি, অসুস্থতা দেখেছি। তারপরেও বলব, আমার নিজের যখন কোভিড হল, সেই ১৪ দিন সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল গোটা বছরের মধ্যে। বিভ্রান্তের মত অবস্থা হয়েছিল। সেসময় চারপাশের পরিস্থিতিও ভীষণ খারাপ। ওই সময়টা বছরের সবচেয়ে কঠিন আর খারাপ কেটেছে। 


আরও পড়ুন: এই বছর রাজনীতিকে পাশে সরিয়ে অভিনয়ে মন দেব: বনি সেনগুপ্ত


নতুন বছরে কখনোই কোনও রেজ়োলিউশন নেননা ঋতব্রত। তবে অভিনেতা বললেন, 'বছরের শুরুতে মনে হচ্ছে, এই বছরটা যেন কোনওমতে পার করে দিতে পারি। করোনা পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হচ্ছে, মনে হয় একটা গোটা বছর বেঁচে থাকাটাই যেন কঠিন লড়াই।'


২০২১ সালেই পাটুলিতে ইন্টেরিম রিলিফ সেন্টার’ গড়ে তুলেছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (Parambrata Chatterjee), অনুপম রায় (Anupam Roy), ঋতব্রত মুখোপাধ্যয়, ঋদ্ধি সেন (Riddhi Sen) ও অন্যান্যরা। ‘সিটিজেন্স রেসপন্স’ নামে নাগরিক মঞ্চ গড়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন শিল্পীরা। করোনা আক্রান্ত রোগীর অক্সিজেনের সংকট হলে এখানে এসে অক্সিজেন নিয়ে সুস্থ হতে পারতেন অনেকেই। সেই অভিজ্ঞতাই গোটা বছরের মধ্যে অনন্য হয়ে থাকবে ঋতব্রতর কাছে। বললেন, 'অচেনা মানুষকেও যে মানুষ ভালোবাসতে পারে, তাঁর ওপর স্নেহ-ভালোবাসা নিয়ে চিকিৎসা বা সেবা-যত্ন করতে এগিয়ে আসতে পারে সেটা কোভিডকাল না হলে বোধহয় আমরা কেউ উপলব্ধিই করতাম না। সবাই যেভাবে নিজেদের উদ্যোগে মানুষের সেবা করতে এগিয়ে এসেছেন, আমি যেন রোজ অবাক হয়ে যেতাম। এটা একটা ভীষণ ভালো শিক্ষা।'


২০২১ শিখিয়েছে মানুষকে ভালোবাসতে, মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে। ঋতব্রত বলছেন, 'এই বছরটা আরও বড় একটা শিক্ষা দিয়ে গেল। সেটা হল, বেঁচে থাকা, লড়ে যাওয়াটা একটা চ্যালেঞ্জ। মানুষের চাহিদা যে আসলে কতটা অল্প, সেটা সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে গেল করোনা আর ২০২১। আগামী বছরটায় সব ভালো হোক...'