নয়াদিল্লি: ২০০৫ সালে, অপর্ণা সেনের '১৫ পার্ক অ্যাভিনিউ' ছবিতে মেথির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কঙ্কনা সেন শর্মা (Konkona Sen Sharma)। সেখানে মেথি স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় (Schizophrenia) আক্রান্ত ছিলেন যিনি একটি মর্মান্তিক ঘটনার পর নিজের মনে একটি সমান্তরাল জগৎ গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর কল্পনায় প্রাক্তন বাগদত্তা জয়দীপের সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি তাঁর মানসিক পরিস্থিতি মেনে নিতে পারতেন না। যখন তাঁর সঙ্গে মেথির দেখা হয়, সে তাঁর বিকল্প পৃথিবীতে তাঁকে চিনতে পারে না। তবে এই ব্যক্তি তাঁকে কথা দেয় যে সে কাল্পনিক '১৫ পার্ক অ্যাভিনিউ'-তে নিয়ে যাবেন যেখানে মেথির কথায় সে তাঁর পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে থাকে। ছবির শেষে মেথি তাঁদের 'খুঁজে' পায়। এরপর সে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং তাঁকে আর কখনও দেখা যায় না। ভয়ঙ্কর, কিন্তু টানটান — ছবিটি মানসিক অসুস্থতার ভয়াবহতা এবং রোগীর পাশাপাশি তাঁদের আশেপাশের ব্যক্তিদের উপর যে চাপ সৃষ্টি হয় তা তুলে ধরে। 


২০১৬ সালের বিখ্যাত ছবি 'ডিয়ার জিন্দেগি'। সেখানে আলিয়া ভট্টকে দেখা যায় ডিপ্রেশনের রোগী হিসেবে। হালকা ভাবে তৈরি হলেও গভীর প্রভাব ফেলে এই ছবিটি। প্রত্যেকদিনের জীবনে বারবার প্রত্যাখ্যাত হতে হতে যে মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়, তা তুলে ধরে। 


ওপরে আলোচিত দুই ছবিতেই মানসিক অসুস্থতার কথা তুলে ধরা হয়েছে এবং মেনস্ট্রিম ছবির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে।


আরও পড়ুন: John Abraham Covid Positive: করোনা আক্রান্ত সস্ত্রীক বলি তারকা জন আব্রাহাম


২০২১ সালে, বলিউডে মুক্তি পেয়েছে নতুন ছবি 'অতরঙ্গি রে'। সারা আলি খান অভিনীত ছবিতে তাঁর চরিত্রটিও খানিকটা মানসিক রোগাক্রান্ত। ছবির 'রিঙ্কু' একজন আঘাতপ্রাপ্ত মহিলা যিনি শৈশবে তার বাবা-মাকে নির্মমভাবে খুন হতে দেখেছিল। 'অতরঙ্গি' কথার মানেই হল খানিক মজার কিন্তু অদ্ভূত। 


সেই ট্রমা থেকে বেরোতে না পেরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও রিঙ্কু বিশ্বাস করত যে সে সাজ্জাদ (অক্ষয় কুমার) নামের একজনের প্রেমে পড়েছে। তার সঙ্গে একাধিকবার পালিয়ে গেছে সে, শুধুমাত্র তার পরিবার ফিরিয়ে নিয়ে আসত। ধনুশের সঙ্গে তার জোর করে বিয়ে দেওয়া হয় এবং ধনুশ তার প্রেমে পড়ে। তবে শীঘ্রই এও বুঝতে পারে যে সে গুরুতর মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে। ধনুশের বন্ধু মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, ডাঃ মধুসূদন। সে সারাকে ওষুধ দেয় — যিনি বলতে থাকেন যে তিনি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং 'মহিলাদের বোঝেন'। তাঁরা রিঙ্কুকে বিশ্বাস করায় যে সাজ্জাদ সেখানে রক্তে মাংসে রয়েছে। এমনকী তারা সাজ্জাদকে সত্য প্রমাণ করার জন্য দর্শকদের টাকাও দেয়। যতক্ষণ না রিঙ্কু শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং সত্য উপলব্ধি করে, ততক্ষণ এসব নানা কাণ্ড চলতে থাকে। এরপর হঠাৎই সব বুঝতে পেরে বিশুর কাছে ফিরে আসে রিঙ্কু।


কিন্তু ছবিতে যেভাবে মানসিক অসুস্থতাকে দেখানো হয়েছে তাতেই আপত্তি জানিয়েছেন দর্শক ও সমালোচকদের একাংশ। তার অসুস্থতা হাসির কারণ করে তোলা হয়। রীতিমতো সেখানে স্কিৎজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, ওসিডি ইত্যাদি মানসিক রোগকে একত্রিত করে ফেলা হয়। ছবিতে দেখা যায় সারাকে ওষুধ খাওয়াচ্ছে ধনুশ ও তার বন্ধু। কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকেই মেডিক্যালের ছাত্র, কেউই সার্টিফায়েড ডাক্তার নন। কীসের ওষুধ জিজ্ঞেস করা হলে, 'ডেভিড, কোভিডের ভাই' বলেও মজা করা হয় ছবিতে। ফলে গোটা ব্যাপারটিকে খুবই খাটো করে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি অনেকের।


যদিও এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ছবির পরিচালক বলেন ছবিতে কোনও রোগের নাম উল্লেখ করা নেই, কারণ তিনি ওভাবেই ব্যাপারটা রাখতে চেয়েছিলেন। এক বিনোদনের প্রতিবেদনে তিনি জানান যে ওই চরিত্ররা কখনও এমন কঠিন মানসিক রোগের কথা শোনেইনি। তাই নামোল্লেখও নেই। ছবির লেখক হিমাংশু শর্মা সমালোচকদের কম 'জাজমেন্টাল' হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানান, 'অতরঙ্গি রে' ছবির গল্পটি নিয়ে অনেক কথা বলার আছে। এটি প্রেম, ক্ষতি এবং ট্রমাকেও স্পর্শ করে। ছবিটিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে ট্রমা বা মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে প্রেমই একমাত্র সমাধান হতে পারে।