কলকাতা: সকালবেলা তখন দুর্গাপুরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছে গোটা টিম। আর ঠিক ৫ দিন পরে ছবির মুক্তি, জোরকদমে চলছে প্রচার। কিন্তু হঠাৎ একটা ট্যুইট যেন মুহূর্তের জন্য সবকিছু গোলমাল করে দিল। যে ছবির প্রচারে প্রায় দিন-রাত এক করে ফেলছেন নায়িকা তথা প্রযোজক এনা সাহা (Ena Saha) আর পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক (Shiladitya Maullick), সেই ছবি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন খোদ নায়কই! যশ দাশগুপ্ত ( Yash Dashgupta)!
সকালে ট্যুইটারে একটি বিবৃতি দিয়ে যশ জানান, প্রযোজনা সংস্থা 'জারেক এন্টারটেনমেন্ট' ও পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিকের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে মতবিরোধের কারণে নিজেকে 'চিনে বাদাম' প্রজেক্ট থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। তিনি লেখেন, 'আমি এই ছবির সঙ্গে কোনওভাবে নিজেকে জড়িত রাখতে চাই না। যদিও ছবির শ্যুটিংয়ে ও পোস্ট প্রোডাকশনে নিজের সবটা দিয়ে কাজ করেছি এবং সেটা সম্পূর্ণ বৃথা যাক চাইব না। নির্মাতাদের জন্য শুভেচ্ছা।'
আরও পড়ুন: Yash Dasgupta: 'চিনে বাদাম' থেকে সরে দাঁড়ালেন যশ, কেন?
এই ট্যুইট পড়ে যতটা অবাক হয়েছেন অনুরাগীরা, কার্যত আকাশ থেকে পড়েছেন ছবির প্রযোজক-নায়িকা এনা সাহাও। এবিপি লাইভের তরফ থেকে এনাকে ফোন করা হলে তাঁর গলায় স্পষ্ট বিস্ময় আর মনখারাপ। এনা বলছেন, 'বাকি সবাই যেখানে, আমিও ঠিক সেখানে। গতকাল আমাদের চিনে বাদাম ছবির টাইটেল ট্যাকটা মুক্তি পেয়েছিল। রাতে যশ মেসেজে আমায় লিখল, 'টাইটেল সঙ টা প্যাথেটিক হয়েছে। বেস্ট অফ লাক টু ইউ অ্যান্ড ইওর টিম।' এরপর আমি কারণ জানতে চাইলেও ও আর কোনও উত্তর দেয়নি। তারপরে সকালে এই ট্যুইট।'
ছবি নিয়ে কি কোনও মতবিরোধ হয়েছিল পরিচালক-প্রযোজন আর নায়কের মধ্যে? এনা বলছেন, 'ছবির প্রচার শুরু করার প্রথম থেকেই যশ খুব ব্য়স্ত ছিল। আমাদের প্রচারে সময় দিতে পারছিল না একেবারেই। আমি শুধু ছবির নায়িকা নই, প্রযোজকও। আমায় ব্যবসার দিকটাও দেখতে হয়। তাই অনেকবার ওকে বুঝিয়েছিলাম। বার বার বলত ভালো লাগছে না, আমায় ছেড়ে দাও। আমরা মনে করেছিলাম সাময়িক কোনও সমস্যা হয়েছে ওর। কিন্তু ছবি থেকে যশ সরে দাঁড়াবে এটা অকল্পনীয় গোটা টিমের কাছে। শিলাদাও (শিলাদিত্য) খুব হতাশ। শুনেছি ওঁর সঙ্গে যশের কথা হয়েছিল। ওঁকেও যশ বলেছিল টাইটেল ট্র্যাক নিয়ে ওর আপত্তির কথা। শিলাদা বলেছিলেন, উনি এভাবেই ছবি বানান। আর গানটা ছবিরই অংশ, আলাদা প্রচার নয়। আমি প্রযোজক হিসেবেও কোনোদিন শিলাদার সিদ্ধান্তের ওপর কথা বলিনি। তাতে একজন পরিচালকের কাজ করার স্বাধীনতা চলে যায়। আমি নিজের মতামত জানাতাম মাত্র। আমার বিশ্বাস শিলাদা যথেষ্ট পরিণত একজন পরিচালক।'
ট্যুইট করার পর আর কথা হয়েছে ছবির নায়ক নায়িকার মধ্যে? এনা বলছেন, 'আমি দুর্গাপুরে এসেছি প্রচারে। রাস্তায় খুব নেটওয়ার্কের সমস্যা ছিল। যশ আমায় ব্যক্তিগতভাবে কিছু জানায়নি, এমনকি মেসেজও উত্তর দেয়নি। লকডাউনের পরে আমার প্রযোজনা সংস্থা শুধুমাত্র যশের সঙ্গে পর পর ৩টে কাজ করল। প্রথমে 'এসওএস কলকাতা' তারপর 'চিনেবাদাম'। নতুন ছবি 'মাস্টারমশাই আপনি কিছু দেখেননি'-র শ্যুটিংও শেষ হয়ে গিয়েছে। টাকাপয়সা, সমস্ত চুক্তিও সারা। আমার প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে 'ক্রিয়েটিভ ডিফারেন্স' হচ্ছে এটা ৩টে ছবিতে কাজ করার পরে যশ বুঝতে পারল!'
প্রমোশনের কাজ তার ওপরে ছবির চিন্তা, বেশ বিব্রতই শোনাল এনার গলাটা। বললেন, 'ছবি মুক্তির ঠিক ৫ দিন বাকি। এই সময় হঠাৎ যশের এই সিদ্ধান্তে গোটা টিমের কপালে ভাঁজ। একটা ছবির সঙ্গে শুধু টাকাপয়সা নয়, অনেকটা স্বপ্ন, শ্যুটিংয়ের কষ্ট সমস্ত জড়িয়ে থাকে। আমাদের প্রচার চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমি এখনও বুঝতে পারছি না কেন এই সিদ্ধান্ত নিল যশ। প্রযোজক হিসেবে আমার কোথায় খামতি রয়ে গেল তাও আমায় ভাবাচ্ছে।'