কলকাতা: তখন শক্তি সামন্তের অধীনে কাজ করেন তিনি। 'অমানুষ' ছবির চিত্রনাট্য শোনাতে যেতে হয়েছিল উত্তমকুমারের বাড়িতে। কিন্তু চিত্রনাট্য কিছুটা শোনার পরেই বেঁকে বসলেন উত্তম কুমার। সংলাপ পছন্দ হচ্ছে না। বললেন, সংলাপ যেন ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। চলতি কথার মতো নয়। তখন সেই যুবক বললেন, 'আপনি কীভাবে কথা বলেন আমি জানি।' উত্তম কুমার অবাক। বললেন কী ভাবে? সেই যুবক বললেন, 'আমি আপনার নাটক দেখেছি। আপনার অনুকরণ করে বাড়িতে অভিনয়ও করেছি। দেখাতেও পারি করে।' সেই যুবকের সংলাপ বলা শুনে তো উত্তম কুমারও অবাক। শক্তি সামন্তকে জানিয়ে দিলেন, আমার সংলাপগুলো লিখবে প্রভাতই। এই প্রভাত হলেন, প্রভাত রায়। একটা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা পরিচালক, চিত্রনাট্য লেখক।
প্রভাত রায়ের মনে হয়েছিল, তাঁর বর্ণময় কর্মজীবনকে বুঝি লিপিবদ্ধ করা উচিত। একসময়ে টলিউড, বলিউডে কীভাবে কাজ হত তাই তিনি লিখলেন একটি বইতে। জীবনে যেহেতু কাজ শুরু হয়েছিল ক্ল্যাপস্টিক হাতে নিয়েই, তাই বইয়ের নাম রাখলেন, 'ক্ল্যাপস্টিক'। কেন এই আত্মজীবনী লেখার কথা ভাবলেন প্রভাত রায়? শিল্পী বলছেন, 'ঘরোয়া বৈঠকে যখনই আমার কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতাম, সবাই বলতেন এগুলো লিখে রাখেন না কেন? আর আমার মেয়েও আমায় বারে বারে বলত আত্মজীবনী লিখতে। সেই থেকে ভাবলাম, যদি চিত্রনাট্য লিখতে পারি, তাহলে আত্মজীবনীই বা নয় কেন? সেই লেখা শুরু। বই লেখার কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। প্রিন্টিংয়ে চলে গিয়েছে। আশা করি বইটা হাতে পেলে পাঠক পাঠিকাদের ভাল লাগবে।'
তখন আর এখন, টলিউডে কী পার্থক্য দেখতে পান প্রভাত রায়? প্রবীণ পরিচালক বলছেন, 'একটা সময় টলিউডে এমন সিনেমা হত, যেটা গ্রামের মানুষেরও ভাল লাগবে। আবার শহরের মানুষরও ভাল লাগবে। কিন্তু এখন শুধু শহরের মানুষদের ভেবেই সিনেমা হয়। ছবির গল্পগুলো পাল্টে যাচ্ছে তাই গ্রামের মানুষেরা আর হলমুখো হচ্ছে না। ছবি হিট হচ্ছে না। এতে ছবির ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, টলিউড আগে অনেক আন্তরিক ছিল। এখন সবাই ভীষণ প্রফেসনাল হয়ে গিয়েছে।'
কর্মজীবনে সবচেয়ে বড় প্রেরণা ছিলেন প্রভাত রায়ের স্ত্রী। পরিচালক বলছেন, 'আমার দীর্ঘ কেরিয়ারে অনেক ছবিই পরিচালনা করেছি। সব ছবিই যে সবসময় হিট হত তা নয়। আমার স্ত্রী কখনও আমায় হেরে যেতে দেননি। সবসময়ে বলতেন, কী হয়েছে? একটা ছবি হিট হয়নি, পরেরটা হবে। কিন্তু ছবি নিয়ে কাজ করা থামিও না। মুম্বইতে গিয়ে এত স্ট্রাগল করতে হয়েছে, সেটা একা হলে আমি কখনোই পারতাম না। ক্ল্যাপস্টিক ধরে তখন কটা আর টাকা পেতাম। মনে আছে, সেই সময়ে স্ত্রী গয়না বিক্রি করেও টাকা জোগাড় করেছেন আমার জন্য। এখন মেয়ের থেকেও সেই প্রেরণাটাই পাই।'
নতুন বই ক্ল্যাপস্টিক-এ কি প্রভাত রায়ের ব্যক্তিগত জীবনকেও পাওয়া যাবে? পরিচালক বলছেন, 'আমার ব্যক্তিগত জীবনে খুব উল্লেখযোগ্য কিছু নেই। আমার কর্মজীবনটাই এত বর্ণময় যে সেটা নিয়েই লেখার ইচ্ছা ছিল। তবে হ্যাঁ.. আমার মেয়ে একতার কথা রয়েছে। ও নিজেও টলিউডেই কাজ করছে। একতার স্বপ্ন, আমার মতোই পরিচালক করে। আমি বিশ্বাস করি একতার মধ্যে সেই গুণ রয়েছে। ওকে নিয়ে আমারও অনেক স্বপ্ন রয়েছে। দেখা যাক।'
আরও পড়ুন: Dev-Rukmini Cricket: শাড়ি পরেই ব্যাট হাতে ছক্কা মারছেন রুক্মিণী, উইকেটকিপার দেব