কলকাতা: অভিনয় শুরু মাত্র ৮ বছর বয়সে। ২০০৭ সালে তখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রৌনক। জি বাংলার জনপ্রিয় 'এরাও শত্রু' ধারাবাহিকে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করেন। এরপর 'দাদামণি', 'মা', 'সুবর্ণলতা'র মতো একের পর এক ধারাবাহিকে কাজ চলতে থাকে ২০১৫ পর্যন্ত। এরপর পড়াশোনার জন্য বিরতি। প্রাপ্তবয়সে এসে ফের অভিনয় শুরু ২০২১ সালে। আরও এক জনপ্রিয় ধারাবাহিক 'কৃষ্ণকলি'র হাত ধরে। তারপর একের পর এক ধারাবাহিকে কাজের পাশাপাশি এবার ওটিটি ডেবিউ। তাও আবার অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের (Swastika Mukherjee) সঙ্গে। ৫ জুলাই হইচইয়ে মুক্তি পাচ্ছে সায়ন্তন ঘোষাল পরিচালিত 'বিজয়া' (Bijoya), তার আগে এবিপি লাইভের (ABP Live) সঙ্গে আড্ডায় রৌনক দে ভৌমিক (Raunak Dey Bhowmick)।
প্রশ্ন: প্রথম ওয়েব সিরিজে কাজ হলেও এর আগে দীর্ঘদিন ছোটপর্দায় কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কোন মাধ্যমটা বেশি উপভোগ করলেন?
রৌনক দে ভৌমিক: একটা বিষয় অনস্বীকার্য যে টেলিভিশনে ধারাবাহিকের গল্পের একটা নিজস্ব ভাষা, একটা চেনা ছক আছে। যার ফলে দীর্ঘদিন ধরে টেলিভিশনে অভিনয় করলে, ইতিবাচক হোক বা নেতিবাচক, সেই চরিত্রগুলোও একটা ধাঁচে পড়ে যায়। একজন অভিনেতা হিসেবে একই ধরনের চরিত্রকে আলাদা করে ফুটিয়ে তুলে ধারাবাহিকে টানা কাজ করাটা চ্যালেঞ্জ। সেটা আমি খুবই উপভোগ করি।
তবে এই প্রথমবার বাস্তব জীবন থেকে অনুপ্রাণিত একটা এই সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে মানানসই গল্পে, একটা একদম ভিন্ন স্বাদের চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে আনন্দ হয়েছে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই চরিত্রটা চিত্রনাট্যে উপস্থিত থাকার ফলে, গবেষণা, অভ্যাস ও স্বতঃস্ফূর্ততার মিশ্রণে চরিত্রটা তৈরি করার অভিজ্ঞতা নতুন ও অভিনব। তাই সৃজনশীলতার দিক থেকে খুবই আনন্দ পেয়েছি।
প্রশ্ন: কীভাবে এই সিরিজের সুযোগ এল?
রৌনক: 'তুঁতে' ও 'তুমিই যে আমার মা' - আমার এই দুটি ধারাবাহিক শেষ হয় জানুয়ারির শেষে। ফেব্রুয়ারি মাসে আমার পুরনো এক সহকর্মী, যাঁর সঙ্গে আমি ছোটবেলায় একটা প্রজেক্ট করেছিলাম, আমাকে হঠাৎ ফোন করে ফাঁকা আছি কিনা জানতে চায়। আমায় ওটিটি প্রজেক্টের কথা জানায়। আমি অডিশন দিই। তারপর স্ক্রিন টেস্ট, লুক সেট সব করে, সকলের পছন্দের পরে সবকিছু চূড়ান্ত হয়, আর আমি প্রজেক্টে যুক্ত হই। ওই সময়টা, আমার সেই সময় ফাঁকা থাকা, পুরোটাই কাকতালীয়ভাবে মিলে যায়, এবং যথাযথ বাছাই পর্বের পরই চূড়ান্ত হই আমি।
প্রশ্ন: মাত্র ৮ বছর বয়সে অভিনয়ে পা। শুরুটা কীভাবে?
রৌনক: ঘটনাটা মজার। দক্ষিণ কলকাতার এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে সপরিবারে বাজার করতে গিয়েছিলাম। সেখানে ওদের মার্কেটিং ম্যানেজার আমাকে দেখে আমার মা-বাবাকে প্রস্তাব দেয় ওদের একটা পারিবারিক বিজ্ঞাপনী ক্যাম্পেন হবে, যদি কোনও অসুবিধে না হয় তাহলে ওরা আমায় সেই বিজ্ঞাপনে কাস্ট করতে চায়। এরকম কাকতালীয়ভাবেই আমার কাজ শুরু।
তারপর আমার পরিবারের সকলে আগ্রহী হন, পোর্টফোলিও তৈরি করা হয়, স্টুডিওয় ঘুরে ঘুরে নানা প্রযোজনা সংস্থার অফিসে ছবি দেওয়া হয়। সেখান থেকেই 'ক্যালাইডোস্কোপ প্রোডাকশন হাউজ' থেকে অঞ্জন চৌধুরীর 'এরাও শত্রু' ধারাবাহিক থেকে ডাক আসে। অডিশন দিয়ে কাস্টিং হয় ২০০৭ সালে। তারপর পরপর এখনও চলছে...।
প্রশ্ন: পরিবারের লাগাতার সাপোর্ট পেয়েছেন নিশ্চয়ই?
রৌনক: হ্যাঁ। যেহেতু ছোটবেলায় আমার থেকে আমার পরিবারের ইচ্ছেটাই বেশি ছিল, তাই সাপোর্ট পেয়েছি। তারপর কাজ করতে করতে ধীরে ধীরে অভিনয়কে ভালবেসে ফেলা ও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে যাওয়া।
প্রশ্ন. আমরা শুনি যে ধারাবাহিকের শ্যুটিং খুবই ক্লান্তির, অনেকক্ষণ ধরে চলে। কীভাবে পড়াশোনার সঙ্গে সামলেছেন সবটা?
রৌনক: ২০০৭ থেকে ২০১৫, স্কুল আর অভিনয় একসঙ্গে চলেছে। সেটে, মেকআপ রুমে বসে চিত্রনাট্য পড়া আর বই পড়ার মধ্যে দিয়েই শৈশব কেটেছে। কী করে সামলাতাম আলাদা করে এখন বলা মুশকিল। খাটনি হত না তা নয়। কিন্তু সিরিয়াস ছিলাম, যেটুকু অবসর সময় পেতাম ফাঁকি দিতাম না। স্কুলে যেদিনগুলো যেতাম মন দিয়ে ক্লাসের পড়া শুনতাম, করতাম। তাই বোধ হয় মসৃণভাবে ম্যানেজ হয়ে গেছে। তারপর ২০১৫ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা ও উচ্চশিক্ষার জন্য সতর্কভাবেই অভিনয় থেকে বিরতি নিই।
আবার ২০২১ সালে করোনা অতিমারীর জন্য যখন আমার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনলাইনে হচ্ছে তখন 'কৃষ্ণকলি' ধারাবাহিকের সঙ্গে অভিনয় জীবন পুনরায় শুরু করি। পাশাপাশি ডিগ্রি পড়াশোনা, একটা বহুজাতিক সংস্থা মার্কেটিংয়ের চাকরির প্রস্তাব-সহ ইন্টার্নশিপ ও অভিনয় একসঙ্গে চালিয়ে যাই। অবশেষে ২০২২ সালে পড়াশোনা শেষ করে, এখন পুরোদস্তুর অভিনেতা।
প্রশ্ন: কখনও প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন? তা সে কোনও চরিত্রের জন্য বা কখনও অডিশনেই...
রৌনক: অবশ্যই। অনেক বার। কখনও বয়স, কখনও লুক, কখনও অডিশনে নার্ভাস হয়ে গিয়ে দুর্বল পারফর্ম্যান্স... নানা কারণে প্রত্যাখ্যাত হয়েছি। এটা আমাদের পেশার অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের শেখার, অভিজ্ঞতার অঙ্গও বটে। তবে গত ৩-৪ বছরে সেই অর্থে কোনও বড় প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হইনি।
প্রশ্ন: যাঁরা অভিনয় জগতে প্রবেশ করতে চাইছেন তাঁদের জন্য কোনও টিপস?
রৌনক: আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অর্থনৈতিক বিষয়ে অবগত হওয়া প্রয়োজন। ঝাঁ চকচকে দুনিয়া, টাকা, খ্যাতি এসবের জন্য অভিনয় জগতে আসা উচিত নয়। এই সমস্ত জিনিস থাকতেও পারে, নাও পারে। আবার থাকলেও হয়তো ক্ষণস্থায়ী। যা থাকবে তা হল আমাদের কাজ। তাই যদি কেউ অভিনয় ভালবাসে তবেই প্রবেশ করার কথা ভাবা উচিত এই জগতে... অভিনয় চর্চা করে যেতে হবে। তাহলে দিনের শেষে আর কিছু না থাকুক আনন্দ থাকবে কাজে। এছাড়া বাকি তো আমি নিজেই বয়সে ছোট, আর কীই বা বলব। আমার নিজের সফর তো সবে শুরু।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।