কলকাতা: এখনও শ্যুটিং শুরু হয়নি নতুন ধারাবাহিকের। কিন্তু প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। ফের নতুন ভূমিকায় দর্শকদের দরবারে অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরী (Sabyasachi Chowdhury)। বামাক্ষ্যাপা এবার রামপ্রসাদের ভূমিকায় দেখা যাবে, মাধ্যম ছোটপর্দা। কিন্তু বামাক্ষ্যাপা থেকে রামপ্রসাদ হওয়ার এই সফরের মধ্যে সব্যসাচীর জীবন বদলেছে অনেকটা। প্রিয় মানুষকে হারিয়েছেন, সরে গিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও। ছেদ পড়েছে অভিনেতার বই লেখাতেও। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন অভিনেতা। অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে মাঝেমধ্যে সময় কাটিয়ে আসছেন তাঁদের ক্যাফেতেও। সব্যসাচীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থেকে শুরু করে মনের কথা... শুনল এবিপি লাইভ।


রামপ্রসাদের চরিত্র নিয়ে ছোটপর্দায় ফেরা ব্যক্তি সব্যসাচীর পক্ষে কতটা জরুরি ছিল? অভিনেতা বলছেন, 'আমার কাজে ফেরার কথা ছিল সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরেই। বলা যায় সেটা কিছুটা দেরি হল। তবে কাজ আর ব্যক্তিগত জায়গা আমি আলাদা রাখি, কাজে তো আমায় ফিরতেই হত। আর আমি একটু পিরিয়ডিক্যাল কাজ পছন্দ করি। বামাক্ষ্যাপা বা রামপ্রসাদ, মানুষের মনে এই চরিত্রগুলো নিয়ে একটা পূর্ব ধারণা থাকে। রক্তমাংসে সেই চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা একটা চ্যালেঞ্জ তো বটেই। তবে আমার এই চ্যালেঞ্জটা নিতে ভাল লাগে। আরও ভাল লাগে মানুষ চরিত্রটা ভালবাসলে। যখন মহাপীঠ তারাপীঠ শুরু করেছিলাম, অনেকে বলেছিলেন, বামদেবকে নিয়ে এত কাজ হয়েছে। নতুন করে মানুষ আদৌ আমায় পছন্দ করবেন তো? আমি আমার ১০০ শতাংশ দিয়ে চেষ্টা করেছি কেবল। এখনও তাই করব, বাকিটা মানুষের ওপর।'


অভিনয়ের পাশাপাশি সব্যসাচীর নতুন দায়িত্বও রয়েছে, হোঁদলস। ধারাবাহিকের শ্যুটিংয়ের চাপ সামলে ক্যাফেতে সময় দিতে পারবেন? সব্যসাচী বলছেন, 'ক্যাফেটা আমি, সৌরভ আর দিব্য মিলে ক্যাফেটা করেছিলাম। আমাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্ট আছে। আমার দায়িত্ব মেনু আর রেসিপি। হোঁদলস নিয়ে আরও নতুন ভাবনাচিন্তা রয়েছে, কাজ সামলেই সে সব করব আমরা।'


আরও পড়ুন: Virat Anushka: 'আমাদের মন তোমার সঙ্গে বড় হচ্ছে', ভামিকার জন্মদিনে লিখছেন বিরুষ্কা


অভিনয়ের পাশাপাশি লেখনীতেও মন কেড়েছিলেন সব্যসাচী। সেই লেখার অন্যতম মাধ্যম ছিল সোশ্যাল মিডিয়া। এই মুহূর্তে সামাজিক মাধ্যমে সব্যসাচীর চিহ্নমাত্র নেই। তাহলে অনুরাগীদের লেখা পড়ার উপায়? একটু হেসে সব্যসাচী বললেন, আমার নতুন বই প্রকাশের কথা ছিল এবারের বইমেলায়। বিভিন্ন ঝড়ঝাপটার জন্য সেটা শেষ করে উঠতে পারিনি। তবে আমার লেখা পুরনো বইগুলো পাওয়া যাবে। আপাতত সেটাই মাধ্যম। আর সোশ্য়াল মিডিয়ায় আমি লেখা শুরু করেছিলাম বিশেষ একটি পরিস্থিতিতে। মনে হয়েছিল প্রয়োজন। তা না হলে, ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ না আমি।'


ঐন্দ্রিলা শর্মা যখন ভীষণ অসুস্থ, সেই সময়েই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন সব্যসাচী। যে প্রোফাইল ছিল ঐন্দ্রিলাময়, সেই প্রোফাইল সরিয়ে নিয়েছিলেন অভিনেতা। আবেগের বসে নেওয়া সিদ্ধান্ত? সব্যসাচী বললেন, 'সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আবেগের বসে নয়। আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় পেজ, কোনও বিজ্ঞাপন কখনও করিনি। সামাজিক মাধ্যম থেকে এক পয়সাও আয় করতাম না কখনও। ১২-১৩ বছর ধরে একটা সাদামাটা প্রোফাইল ছিল আমার। গত দুই আড়াই বছর ধরে আমার মনে হয়েছিল কিছু বিষয় নিয়ে লেখা জরুরি, তাই লিখতাম। এখন লেখার কারণ নেই, তাই প্রোফাইলটারও দরকার নেই।'


সোশ্যাল মিডিয়ায় না থাকলেও সব্যসাচী নিশ্চয় জানেন তাঁকে নিয়ে কতটা তোলপাড় হয়েছে? 'আদর্শ প্রেমিক' বলা হয়েছে তাঁকে। একটু হেসে অভিনেতা বললেন, 'আমি এখনও বুঝতে পারি না কী বিশেষ কাজ আমি করেছি। ছোটবেলা থেকে শিখে এসেছি প্রিয়জন অসুস্থ হলে তাঁর পাশে দাঁড়াতে হয়। আমার বাবা-মা অসুস্থ হলেও এভাবেই পাশে দাঁড়াতাম আমি। এটাই তো স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষ যখন এটাকে গ্লোরিফাই করেছেন, আমি অবাক হয়েছি।'


অভিনেতা বলেই কী সব্যসাচীর কাজকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এতটা তুলে ধরা হল? অভিনেতা বলছেন, 'আমি বুঝি মানুষের আমাদের জীবন যাপন, সুখ-দুঃখ সবকিছু নিয়েই আগ্রহ থাকে। সেটা স্বাভাবিক। তবে আমি নিজেকে ভীষণ সাধারণ মানুষ মনে করি। আমার মতো অনেক পুরুষ, অনেক মহিলাই রোজ হাসপাতালে, নার্সিং হোমে তাঁদের প্রিয়জনের জন্য রাত জাগেন, বসে থাকেন। শুধু যদি আমার কাজটাতে তুলে ধরা হয়, তাহলে ওই মানুষগুলোকে অপমান করা হয়। তবে আমি দেখেছি প্রচুর মানুষ হাসপাতালে এসেছেন, খোঁজ নিয়েছেন, কেঁদেছেন। সত্যিকরের ভালো না বাসলে এটা হয় না। আমার কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। সেই সময়ে যাঁর যেটা ভাল মনে হয়েছে, সেটাই করেছেন।'


ইতিমধ্যেই ওয়েব সিরিজে কাজ করে ফেলেছেন সব্যসাচী, ধারাবাহিকের পাশাপাশি অন্যরকম কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে? অভিনেতা বললেন, 'অবশ্যই। তবে এই মুহূর্তে ধারাবাহিকের শ্যুটিং সামলে কিছু করা সম্ভব না। কিছুদিন যাক, তারপরে অন্যরকম কাজে ফিরব।'