কলকাতা: তখন বয়স ছিল মাত্র সাড়ে ৫ বছর। প্রথম মঞ্চকে চেনা শাঁওলি মিত্রের (Shaoli Mitra) হাত ধরে। নাটকের নাম ছিল 'ডাকঘর'। কোলে করে তাঁকে নিয়ে গিয়ে মঞ্চে বসিয়ে দিতেন শাঁওলি মিত্র, বিরতির সময় খাইয়ে যেতেন দুধ আর চকোলেট। নাট্যজগতের সবচেয়ে কাছের মানুষটা বিদায় নিলেন জীবনের মঞ্চ থেকে, অথচ শেষবারের মতো দেখা হল না তাঁর সঙ্গে। শাঁওলি মিত্রের প্রয়াণে পুরনো স্মৃতি হাতড়ালেন অভিনেত্রী চৈতী ঘোষাল (Chaiti Ghoshal)। 


এবিপি আনন্দকে চৈতি বলছেন, 'কোথা থেকে শুরু করব জানি না। তখনও ভালো ভাবে জ্ঞান হয়নি। আমার বয়স তখন মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর। ডাকঘর নাটকে অভিনয় করেছিলাম। অমলের চরিত্রে। শাঁওলিদি আমায় কোলে করে নিয়ে গিয়ে মঞ্চে বসিয়ে দিতেন। আর মাঝখানের বিরতির সময় এসে দুধ আর চকোলেট খাইয়ে যেতেন। জীবনে প্রথমবার শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলেন শাঁওলিদি। প্রথম কবিতা শিখেছি ওনার কাছে। ডাকঘর নাটকের উচ্চারণ সুধরে দিয়েছেন উনি। শাঁওলিদির জীবনটা অনেক কিছুর মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। ওনার জীবন যাপনের সবটাই ছিল নাটক নিয়ে। শাঁওলিদি থিয়েটারের মাধ্যমে মঞ্চে দর্শকদের যেটা বলতেন, সেটা নিজের জীবন যাপনেও অভ্যাস করতেন। শিল্পীসত্তা আর শাঁওলিদির সত্তা আলাদা ছিল না। অভিনেত্রী চৈতি আর মানুষ চৈতিকে গড়ে তোলার পিছনে শাঁওলিদির অনেক অবদান রয়েছে। আমার ছেলে ওঁকে শাঁওলিদি মাসি বলত। গত ৩ দিন ধরে আমি ভাবছি শাঁওলিদিকে ফোন করব। আমার কয়েকটা কথা বলার ছিল। নানান কারণে ফোন করা হয়ে উঠছিল না। আমি জানি না এটা কী টেলিপ্যাথি না আত্মীক যোগ। তবে এটুকু বলতে পারি, আমার ছেলেবেলাটা তছনছ হয়ে গেল।'


শাঁওলি মিত্রের অভিনয় হাঁ করে দেখে শিখতাম, অভিনয় কাকে বলে: দেবশঙ্কর


এবিপি আনন্দকে দেবশঙ্কর হালদার বলছেন, 'খুব কাছের থেকে শাঁওলি মিত্রকে দেখলেও একটা অন্যরকম সম্মানের দূরত্ব ছিল আমাদের মধ্যে। অথচ সেই দূরত্বটা উনি বুঝিয়ে দিতেন অভিনয় দিয়ে। যখন অভিনয় জগতে আসব বলে সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমাদের শিক্ষার অংশ ছিল শাঁওলি মিত্রের অভিনয় দেখা। উনি যখন অভিনয় করতেন আমরা হাঁ হয়ে দেখতাম আর শিখতাম অভিনয় কাকে বলে বা কোন পথে অভিনয় যেতে পারে। অভিনয় কোথায় কোথায় আমাদের স্পর্ধিত করে, শিখিয়ে দেয় কী কী করার আছে সেটা শাঁওলি মিত্রের অভিনয় দেখেই শেখা। শাঁওলি মিত্র আমাদের কখনও হাতে ধরে অভিনয়ের ক্লাস করাননি কিন্তু অভিনয় দিয়ে আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন একের পর এক পাঠ।'