কলকাতা: দেখতে দেখতে আরও এক বছর পার। ২০২৩ সালে এগারো বছরে (11 Years Completed) পা দিল 'স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল' (Swara Samrat Festival)। দেশের অন্যতম সেরা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উৎসব বলে সারা দেশেই সমাদৃত এখন এই 'স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল'। দেশের তাবড় তাবড় পণ্ডিত ওস্তাদরা এই উৎসবে যোগদান করেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১৫, ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর, এই তিন দিন ধরে প্রতি বছরের মত নজরুল মঞ্চে বসেছিল এই উৎসবের আসর।


কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল 'স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল'


দীর্ঘ এগারো বছর ধরে দেশের অন্যতম সরোদ বাদক পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার এবং তাঁর পরিবার বিদুষী মানসী মজুমদার এবং পুত্র ইন্দ্রায়ুধ মজুমদার 'স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল'-এর আয়োজন করে আসছেন। দায়িত্বে আছে শ্রী রঞ্জনী ফাউন্ডেশন। পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ তাঁর গুরু স্বর সম্রাট ওস্তাদ আলি আকবর খানের নামেই এই উৎসব করে আসছেন। বলা যেতে পারে এই উৎসব শিষ্যের গুরু দক্ষিণা। দীর্ঘ এগারো বছরে স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল আয়োজনে এবং ব্যাপ্তিতে অনেক বড় হয়েছে। দেশের অন্যতম সেরা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উৎসব বলে পরিচিত এই ফেস্টিভ্যাল। তেজেন্দ্র নারায়ণের কথায়, 'এই ফেস্টিভ্যালের স্তম্ভ আমার পরিবার এবং দর্শকের ভালবাসা। এই ফেস্টিভ্যালের মধ্যে দিয়ে আমার গুরুর প্রতি আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য, গুরুর প্রতি আপনাদের শ্রদ্ধা যেন আরও বাড়ে, তার চেষ্টা। আরও বড় স্টেজে, আরও বড় আকারে এই ফেস্টিভ্যালকে যেন নিয়ে যেতে পারি, তাই আপনাদের কাছে আশীর্বাদ কাম্য।'


এ বছর 'স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল'-এ শিল্পীদের তালিকা ছিল চোখ ধাঁধানোর মত। দেশের তাবড় তাবড় শিল্পীরা এসেছিলেন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। এই প্রথম কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে এলেন দেশের অন্যতম শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী রাহুল দেশপাণ্ডে। মাওড়া বন্দিস দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করলেন। শেষ করলেন ভজন দিয়ে। প্রায় দেড় ঘণ্টা কলকাতা বুঁদ হয়ে রইল রাহুলের গায়কীতে। পরের বছর আবার ওঁকে নিয়ে আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন তেজেন্দ্র নারায়ণ। 


প্রথম দিনে তবলা বাদক পণ্ডিত সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের একক তবলার অনুষ্ঠান ছিল অনবদ্য। ওঁর গুরু পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের তৈরি করা বহু সুর-তাল-লয় তবলার বোলে শোনান তিনি। তিনি জানান পণ্ডিত জ্ঞান প্রকাশ ঘোষের তৈরি করা রাগ-রাগিনীকেই পণ্ডিত রবি শঙ্কর 'কলকাতা ঘরানা' নামে অভিহিত করে গিয়েছেন। প্রথম দিনে বিদুষী এন রাজম এবং বিদুষী সঙ্গীতা শঙ্করের বেহালার যুগলবন্দি ছিল মনে রাখার মত। তবলায় সঙ্গত করছিলেন ম্যাস্ট্রো কুমার বোস। দ্বিতীয় দিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ওস্তাদ শাহিদ পারভেজের সেতার বাদন। কলকাতার শ্রোতা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁর বাজনা শুনেছে। 


এই বছর জীবনকৃতি পুরস্কার দেওয়া হয় বর্ষীয়ান সঙ্গীতশিল্পী সঙ্গীতাচার্য অমিয় রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আঙিনায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। জীবনকৃতি পুরস্কার গ্রহণ করার পর তাঁর অনুষ্ঠান ছিল দ্বিতীয় দিনের সেরা প্রাপ্তি। তিনি বলেন, 'আমার জন্য যে এত কিছু আয়োজন করা হয়েছে, তাতেই আমি কৃতজ্ঞ।' এই বয়সেও তাঁর গায়কীতে মজে রইলেন শ্রোতারা। এই উৎসবের এটা অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। সরোদ বাদক পণ্ডিত দেবজ্যোতি বোস এবং তবলা ম্যাস্ট্রো পণ্ডিত স্বপন চৌধুরীর যুগলবন্দিও দ্বিতীয় দিনে দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। সেই দিন পণ্ডিত কুমার বসের আত্মজীবনী 'তবলাওয়ালা'-র প্রচ্ছদ উন্মোচিত হয়। 


আরও পড়ুন: SRK in Dubai: দুবাইয়ের আকাশে উড়ল ড্রোন, আলোয় ঝলমলে কিং খানের বিশেষ পোজ, জমজমাট 'ডাঙ্কি'র প্রচারপর্ব


শেষদিনের মূল আকর্ষণ বলাই বাহুল্য স্বয়ং জাকির হোসেন। তবলার ঈশ্বর যাঁকে বলা হয়। এদিন নজরুল মঞ্চ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যালে এই নিয়ে দশ বছর ধরে অনুষ্ঠান করে চলেছেন জাকির হোসেন। এবারেও তিনি বাজালেন এবং জয় করে নিলেন কলকাতার হৃদয়। 'শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এমন সমঝদার দর্শক কলকাতার মতো আর কোথাও নেই',বললেন জাকির। রাগ যোগ দিয়ে শুরু করেন তিনি। শেষ করেন মহাদেবের ডমরু এবং শঙ্খের ধ্বনি শুনিয়ে। গোটা নজরুল মঞ্চ তখন কানায় কানায় ভরা। মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছে দর্শক। শীতের আমেজ কাটিয়ে তখন কেবল জাকির-উষ্ণতা।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।