কলকাতা: বছর আসে, বছর যায়। তাঁকে ভোলাতে পারে না প্রজন্ম। তাঁর হাসি, অভিনয়, আবেগকে ছুঁয়ে যাওয়ার ক্ষমতা.. এখানে এসে চিরকাল মাথা নত করেছে বাঙালি। মনে নিয়েছে, তিনিই মহানায়ক। তাঁকে মনে করার জন্য যদিও কোনও বিশেষ দিন লাগে না, তবুও তাঁর জন্মদিন বাঙালির কাছে আবেগের। তিনি উত্তমকুমার। বিশেষ এই দিনে, ফিরে দেখা কিংবদন্তিকে.. ফিরে দেখা উত্তমকুমারকে।
একের পর এক হিট ছবি দিয়ে তরুণীদের মন কেড়েছেন যিনি, তাঁর কেরিয়ার কিন্তু শুরু হয়েছিল ফ্লপ ছবি দিয়েই। এককালে যাঁকে তাঁর অনুগামীরা 'গুরু' বলে ডাকতেন, ইন্ডাস্ট্রিতে কেরিয়ারের শুরুর দিকে তাঁর নাম ছিল 'ফ্লপমাস্টার জেনারেল'। বাবা-মায়ের যোগ ছিল না রুপোলি পর্দার সঙ্গে। মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়িতে জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তির আসল নাম উত্তমকুমার নয়, ছিল অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। সেই নামেই অভিনয় জগতে পা রেখেছিলেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একাধিক বার নাম বদলেছিলেন উত্তমকুমার। প্রথম ছবি 'মায়াডোর'-এ তিনি অভিনয় করেছিলেন স্বনামেই।
'মায়াডোর' ছিল হিন্দি ছিল। কোনও অজ্ঞাত কারণে, সেই ছবিটি শেষ হলেও মুক্তি পায়নি। এরপরে বাংলা ছবি 'দৃষ্টিদান'-এও তিনি অভিনয় করেছিলেন স্বনামেই। এরপরে, কামনা ছবিতে তিনি নিজের নাম বদলে রাখেন, 'উত্তম চট্টোপাধ্যায়'। সেই ছবিটিও দাগ কাটতে পারেনি দর্শকদের মনে। এরপরে 'মর্যাদা', 'ওরে যাত্রী', ও 'নষ্টনীড়' ছবিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন অরূপ কুমার নামে। এগুলিও সাফল্য পায়নি।
চিরকাল তাঁকে টানত অভিনয়, নাটকের মঞ্চ, রুপোলি পর্দা। কিন্তু একের পর এক ছবি বিফল হওয়ায়, অভিনয়ের কথা ছেড়ে দেবেন ভেবেছেন বহুবার। 'সহযাত্রী' ছবিতে অভিনয়ের সময় প্রথম তিনি ব্যবহার করেন 'উত্তমকুমার' নামটি। কিন্তু নামবদল কখনও ফেরাতে পারেনি মহানায়কের ভাগ্য। ফ্লপ হয় 'সহযাত্রী'। এরপরে, এই একই নামে 'সঞ্জীবনী' ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন উত্তম। সাফল্য দিতে পারেনি সেই ছবিও।
সেসময়ে অভিনয়ের পাশাপাশি চাকরিও করতেন উত্তমকুমার। সেটাই তাঁর মুখ্য উপার্জন হয়ে উঠেছিল। স্টুডিওপাড়ায় তাঁকে মস্করা করা হত দুর্গাদাস বা ছবি বিশ্বাসের নাম করে। উনিশশো বাহান্ন সালে মুক্তি পায় 'বসু পরিবার'। পাহাড়ি সান্যালের তত্ত্বাবধানে ঘুরে যায় তাঁর ভাগ্যের চাকা। বসু পরিবার' ছবিটি সাফল্য পায়, নজরে আসেন উত্তম কুমার। এরপরে উনিশশো তিপ্পান্ন ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ মুক্তির পরে কী ঘটেছিল তা আজ ইতিহাস। 'ফ্লপমাস্টার জেনারেল' থেকে মহানায়ক হয়ে ওঠার বাকি গল্প বাঙালির জানা। বছর ঘুরলেও উত্তমে আজও সম্মোহিত বাঙালি।