কলকাতা: আরজি কর কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় চলছে রাজ্য এবং রাজ্য-দেশের সীমান ছাড়িয়ে বিদেশেও। ঠিক এইসময়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দেখা গিয়েছে। কুণাল ঘোষের এবং আরও কিছু হ্যান্ডেল থেকে এবিপি আনন্দ স্বাস্থ্যসম্মান ২০২২ -এর একটি ছবি বা অনুষ্ঠানের ভিডিও লিঙ্ক পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে ওই অনুষ্ঠানে পুরস্কার হাতে নিচ্ছেন আরজি কর হাসপাতালের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং অধুনা সিবিআই জেরার মুখোমুখি হওয়া সন্দীপ ঘোষ। অনেক ক্ষেত্রেই দাবি করা হয়েছে এবিপি আনন্দ চিকিৎসক সন্দীপ ঘোষকে সম্মান জানিয়েছিল- যা পুরোপুরি মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর। আসল সত্যিটা কী? কাকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল? বুধবার ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন অনুষ্ঠানে স্পষ্ট জানালেন এবিপি আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে। এরপরেই দেখা যায় কেউ কেউ x পোস্ট ডিলিট করেছেন।


 












 






 



 






 








সুমন দে: ২০২২ সালে সন্দীপ ঘোষকে এবিপি আনন্দে স্বাস্থ্য সম্মান দেওয়া হয়েছিল বলে যে অপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। তার কারণ শুরু থেকে আজ অবধি, এই অবধি এবিপি আনন্দ স্বাস্থ্য সম্মান কখনও কোনও ব্যক্তিকে দেওয়া হয় না। একমাত্র দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানকে। ২০২২ সালে স্বাস্থ্যরত্ন দেওয়া হল প্রতিষ্ঠান হিসেবে আরজি কর কলেজ ও হাসপাতালকে। ঠিক যেমন ওই বছরই আমরা স্বাস্থ্যরত্ন দিয়ে সম্মানিত করেছিলাম ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনকে। এরপর ২০২৩ সালে এসএসকেএম-কে দিই এবং এ বছর কল্যাণী এমসকে সম্মানিত করেছি আমরা। আবার বলছি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আরজি কর হাসপাতালের হাতে ২০২২ সালে স্বাস্থ্যরত্ন সম্মান দিতে পেরে আমরা গর্বিত। গর্বিত ছিলাম, গর্বিত আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। এই পুরস্কার নিতে সেই প্রতিষ্ঠান কাকে পাঠাচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যাপার। স্বাস্থ্য দফতর বা স্বাস্থ্যমন্ত্রক বা রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপার। প্রতিষ্ঠান বা সরকার বা স্বাস্থ্য দফতর ঠিক করে পুরস্কার নিতে সুপার আসবেন, প্রিন্সিপাল আসবেন না কি প্রথিতযশা কোনও শিক্ষক আসবেন। ২০২২ সালে ১৩৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী আরজি কর হাসপাতালের পুরস্কার নিতে কে আসবেন সেটা তখনও ঠিক করেছিলেন নিয়োগকর্তারা।


কোন পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল?
এবিপি আনন্দ ২০২২ সালে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালকে স্বাস্থ্যরত্ন সম্মান দিয়েছে। পুরস্কারের বিভাগের নাম আনন্দ স্বাস্থ্য রত্ন ২০২২ এবং প্রাপক আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। বুধবারের ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন অনুষ্ঠানে সেই পুরনো অনুষ্ঠানের ভিডিও ফুটেজ বারবার দেখানো হয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মীর পুরস্কার ঘোষণা করার পর সেই পুরস্কার নিতে উঠে আসেন সেই সময় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। পুরস্কার হাতে তুলে দেওয়ার সময় পিছনের স্ক্রিনজুড়ে লেখা ছিল পুরস্কারের বিভাগ ও পুরস্কার প্রাপের নাম- 'আনন্দ স্বাস্থ্য রত্ন ২০২২। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল' ওই পুরস্কারের সঙ্গে যে শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল তাতেও স্পষ্ট লেখা হয়েছে পুরস্কার প্রাপক আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।  


ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন অনুষ্ঠানে এবিপি আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে স্পষ্ট জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য সম্মান 'সেরা বাঙালি' নয়। এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যক্তিকে সম্মান দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র কোনও প্রতিষ্ঠানকেই সম্মান জানানো হয়েছে।


এদিনের অনুষ্ঠানে এবিপি আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে জানিয়েছেন, সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ছিল এবিপি আনন্দে তার খবরও দেখানো হয়েছিল। আর সেটাও আরজি কর হাসপাতালকে স্বাস্থ্যরত্ন সম্মান দেওয়ার অন্তত এক বছর আগে। ২টি টার্মে সন্দীপ ঘোষ আরজি কর হাসপাতালের প্রিন্সিপাল ছিলেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এবং ১০ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ১২ অগাস্ট ২০২৪-এই ২টি টার্ম। ১৩৮ বছরের প্রতিষ্ঠান আরজি কর কলেজ ও হাসপাতাল। যে আরজি কর-কে প্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্মানিত করা হয়েছে তার অধ্যক্ষ থাকাকালীন সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে হস্টেলের পড়ুয়ারা আন্দোলন করেছেন। সেই সময়েও পড়ুয়ারা তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছিলেন। কিন্তু সমস্যা না মিটিয়ে অধ্যক্ষ দুর্ব্যবহার করেছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিশকে দিয়েও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় পড়ুয়াদের দিকে পোস্টার ছুড়ে দিয়েছিলেন এই সন্দীপ ঘোষ, তারপরেই ভোররাতে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন সন্দীপ ঘোষ। আন্দোলনরত পড়ুয়ারা ধাওয়া করায় ছুটে পালান সন্দীপ ঘোষ। পুলিশের গাড়িতে উঠে পড়েছিলেন সন্দীপ ঘোষ। সেই গাড়িটিকেও ধাওয়া করেছিলেন পড়ুয়ারা। সেই খবরও পুঙ্খানুপুঙ্খু দেখিয়েছিল এবিপি আনন্দ। এবিপি আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে স্পষ্ট জানান, আরজি কর-সংক্রান্ত ভাল ও খারাপ সব খবরই দেখানো হয়েছে এবিপি আনন্দে। তিনি আরও জানান, একটি মাপকাঠিতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ১৯ নম্বর স্থানে ছিল আরজি কর। ১৩৮ বছরের এই প্রতিষ্ঠানকেই পুরস্কৃত করেছিল এবিপি আনন্দ। এই সম্মানের সঙ্গে কোথাও চ্যানেলের এডিটোরিয়াল পলিসির যোগ নেই। আর ঠিক তাই প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে যদি কোনও গর্হিত অপরাধ হয় তাহলে সেটা নিয়ে খবর করাও সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব বলেও স্পষ্ট বার্তা তাঁর। 



আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে। 


আরও পড়ুন: বোনাস বাড়ল সিভিক ভলান্টিয়ারদের, কত টাকা বাড়াল রাজ্য?