নয়াদিল্লি: আজ থেকে ঠিক চার বছর আগে মার্চের এক উষ্ণ সন্ধ্যায় কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ বৃদ্ধি ঠেকাতে ও ভারতের (India) জনগণকে এই ভয়াবহ মহামারীর হাত থেকে বাঁচাতে লকডাউনের (lockdown) পথে হেঁটেছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। দেশজুড়ে জারি করা হয়েছিল চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশিকা ও সমস্ত জনগণকে নিজের ঘরে আবদ্ধ রাখার বিজ্ঞপ্তি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যখন কোভিড-১৯-এর প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠছিল, বিভিন্ন দেশ এই ভয়াবহ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি ঠেকাতে নানা পরিকল্পনা করছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং মারাত্মক জীবনঘাতী এই রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে ও এর সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া থেকে বিশ্বের মানুষকে বাঁচাতে ২০২০ সালের ১১ মার্চ কোভিড-১৯-কে বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসেব ঘোষণা করা হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organisation) (WHO)-এর তরফে। এরপর থেকেই বিশ্বের এক দেশ যেমন অন্য দেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তেমনি মুখ দেখাদেখি কার্যত বন্ধ হয়ে যায় প্রতিবেশীদের মধ্যেও।
চিন থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভয়াবহ ভাইরাসের প্রকোপ দেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১১ মার্চ কোভিড-১৯-কে বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসেবে ঘোষণা করে। তার ঠিক কয়েকদিন পর ২৪ মার্চ থেকে ভারতজুড়ে অনির্দিষ্ট কালের জন্য লকডাউনের (Covid-19 lockdown) ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Prime Minister Narendra Modi)। ভয়াবহ এই মহামারীর হাত থেকে দেশের সহ-নাগরিকদের বাঁচাতে এই সিদ্ধান্ত নিতে তারা বাধ্য হয়েছে বলে জানানো হয় মোদি সরকারের পক্ষ থেকে। এরপর থেকেই কয়েকমাস দেশের সমস্ত শহর ও গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়ে কাঁপতে থাকেন প্রাণভয়ে। আজ সেই লকডাউন ঘোষণার চারবছর পূর্তির (Covid-19 Lockdown Anniversary) দিনে পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করলে দেখা যায় কী ভয়াবহ ছিল সেই দিনগুলি ! কীভাবে বনজঙ্গল ছেডে় নিশ্চিন্ত প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল পশুপাখিরা আর বেশিরভাগ মানুষ ছিল ঘরের খাঁচায়, তালাবন্ধ অবস্থায়।
আজ চারবছর পর কোভিড-১৯ অতিমারি বিশ্ব তথা ভারতের ক্ষেত্রে যে ভয়ানক ট্র্যাক রেকর্ড তৈরি করেছে তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে চোখ কপালে উঠছে অনেকেরই। কোভিড-১৯ ট্র্যাকার ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে মোট করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪ কোটি ৫০ লক্ষ ৩৩ হাজার ৩৩২ জন। যার মধ্যে ৫ লক্ষ ৩৩ হাজার ৫৩৫ জনের পরিস্থিতি মারাত্মক ছিল। অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও একনম্বর দেশ হিসেবে পরিচিত আমেরিকার পরিস্থিতি হয়েছিল ভয়াবহ। সেখানে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১১ কোটি ১৭ লক্ষ ২৭ হাজার ৫৯২ জন। আর মারাত্মক এই রোগের প্রকোপে মৃত্যু হয়েছিল ১২ লক্ষ ১৮ হাজার ৪৬৪ জন। যা ভারতের মৃত্যুর সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি। আর সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী গোটা বিশ্বে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন মোট ৭০ কোটি ৪৩ লক্ষ ১৮ হাজার ৯৩৬ জন। যার মধ্যে মারা গেছিলেন ৭০ লক্ষ ৭ হাজার ১১৪ জন।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তরফে ২২৯ দেশের যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, পশ্চিম সাহারা (দক্ষিণ আফ্রিকা)-তে কোভিড সেভাবে তার প্রকোপ বিস্তার করতে পারেনি। সেখানকার ৫ লক্ষের বেশি জনসংখ্যার মধ্যে ১০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। যার মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল একজনের। দূষণে বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হওয়া সত্ত্বেও সেখানে সেভাবে প্রকোপ দেখাতে পারেনি কোভিড-১৯ ভাইরাস। যেখানে বিশ্বের সবথেকে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটিতে পোপ-সহ আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৯ জন। আর টোকেলাউতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১০০ জনের নিচে মাত্র ৮০ জন। হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের নিকটবর্তী নিউ-তে কোভিড হয়েছিল ১০৫৯ জন। ব্রিটেনের অধীনস্ত ক্যারিববিন ইসলেসর মনসেরাটে আক্রান্ত ১৪০৩ আর মৃত ৮। অন্য একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ ফ্ল্যাকল্যান্ড দ্বীপে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৯৩০ জন।
আরও পড়ুন: Arvind Kejriwal Arrest:ইডির হেফাজত থেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম নির্দেশ কেজরিওয়ালের
তথ্যসূত্র : IANS