নিবেদিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা : নিজেকে ফিট রাখতে দোকান থেকে কিনে ভিটামিন ট্যাবলেট ( Vitamin Tablet ) বা ক্যাপসুল ( Vitamin Capsule )  খাচ্ছেন কি? আপনি কি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন খান, নাকি নিজেই বেছে নেন ? কিন্তু ভিটামিন ট্যাবলেট খেয়ে সত্যিই কি ইমিউনিটি বাড়ানো যায়? সাধারণ মানুষ অনেক সময়ই , সামান্য গা ম্যাজম্যাজ থেকে করোনা অতিমারী, সবের সলিউশন ভিটামিন সাপ্লিমেন্টেই খোঁজেন। আর করোনা আবহে এই ভিটামিন কিনে খাওয়ার হিড়িকটা হঠাৎই গিয়েছে বেড়ে। শুধু বড়রাই নন, শিশুদেরও আগেভাগে অনেক অভিভাবক ভিটামিন খাওয়াচ্ছেন করোনা থেকে রক্ষা করার আশায়। কিন্তু, চিকিৎসকরা বলছেন 'না'। ভিটামিন মুঠো মুঠো খেয়ে উপকারের বদলে অপকারও হতে পারে। বিস্তারিত আলোচনায় ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় । 


কোনও খাদ্য থেকে যে পুষ্টিগুণ আমরা পাই, তা প্রাথমিকভাবে দু'ই ভাগে বিভক্ত। একটি হল



  • ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস, যা আমাদের এনার্জি দেয়। তার মধ্যে থাকে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট এবং প্রোটিন।

  • অন্যটি হলো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, যা থেকে ভিটামিন এবং মিনারেল শোষণ করে শরীর। এগুলি কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট এবং প্রোটিন শরীরে কাজে লাগাতে সাহায্য করে আর বিপাক পরিপাকে সাহায্য করে। এবার এই ভিটামিনের আবার প্রকারভেদ আছে। 


ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় বললেন, ভিটামিন দুই ধরনের । 



ভিটামিন এ অতিরিক্ত হয়ে গেলে কী হয় 


ভিটামিনের মাত্রা বেড়ে গেলে পরিপাক বিপাকে এফেক্ট করে। এ খুব চোখের কাজে লাগে। রেটিনায় প্রয়োজনীয় রঞ্জক তৈরিতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ র অভাবে রাতকানা রোগ হয়। কেউ যদি ভুল করে অনেকটা ভিটামিন এ খেয়ে নেয় তবে তার বমি, ডায়ারিয়া শরীরে অস্বস্তি হতে পারে। আর তার থেকেও খারাপ এফেক্ট হল মাথায় জলের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইডে (cerebrospinal fluid) প্রেসার বেড়ে যায়। এর ফলে খিঁচুনি হতে পারে, এর জন্য অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। রোজ বেশি বেশি ভিটামিন এ খেলে তা লিভারে ফ্যাটের সঙ্গে স্টোর হয়। কোনও কারণে লিভারের ক্ষতি থাকে, লিভারের কার্যকারিতা কমে গেলে ভিটামিন এ টক্সিসিটি ( Vitamin A toxicity ) হতে পারে। এতে ত্বকে ড্রাইনেস আসে। চুল শুষ্ক লাগে। হাঁত, হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। 


ভিটামিন ডি বেশি হয়ে গেলে

ভিটামিন ডি আমরা মূলত প্রাণিজাত জিনিস থেকে পাই। আর রোদ থেকে পাই। কড লিভার অয়েল, মেটে ইত্যাদিতে আসে। ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট অনেকে খান। ভিটামিন ডি এতিরিক্ত হয়ে গেলে হাইপার ক্যালসিমিয়া হতে পারে। মানে শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে কিডনি স্টোন হতে পারে। হাড়ে হাড়ে ব্যথা হতে পারে। হাইপার ভিটামিনোসিস হতে পারে। 


ভিটামিন ই অতিরিক্ত হয়ে গেলে 


ভিটামিন ই স্কিনের জন্য খুব ভাল। বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে সাহায্য করে। কিন্তু অতিরিক্ত হয়ে গেলে তা রক্ততঞ্চনে বাধা সৃষ্টি করে। যার যেরে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। 


ভিটামিন কে বেশি হয়ে গেলে


 এতে এতটা সমস্যা নেই। সেটা কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বড়জোর পেটের সমস্যা ও জন্ডিস হতে পারে। 


ওয়াটার সলিউবল ভিটামিন সি ও বি


ওয়াটার সলিউবল ভিটামিন , যা জলে দ্রাব্য। আর ওয়াটার সলিউবল ভিটামিন সি ও বি। ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ১২ ধরনের ভিটামিন রয়েছে, যা সবই জলে দ্রাব্য। ভিটামিন বি ও সি যেহেতু জলে দ্রাব্য, তা খেলেও মল বা মূত্র দিয়ে বেরিয়ে যায়। সমস্যা সৃষ্টি করে না।  কিডনি বা লিভারে সমস্যা থাকলে তবেই শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিন জমা হতে পারে। তবে এগুলি খুব সমস্যা তৈরি করে না। বড়জোর পেটের গোলমাল , ডায়ারিয়া পর্যন্ত হতে পারে। এই ভিটামিনগুলি কিন্তু অত্যন্ত জরুরি। তবে বিনা পরামর্শে  খাওয়া  নয়।


ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় বললেন,  



  • ডাক্তাররা অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে ভিটামিন দিয়ে থাকেন। সেটা প্রয়োজনে।

  • বড় অপারেশনের পরও লম্বা সময়ের জন্য ডাক্তাররা অনেক সময় ভিটামিন প্রেসক্রাইব করেন। বা নির্দিষ্ট কোনও

  • কোনও রোগের ক্ষেত্রে বাইরে থেকে ভিটামিনের সাপোর্ট দিতে লাগে। কিন্তু সেটা চিকিৎসকরাই বুঝবেন , কখন প্রয়োজন।

  • মনে রাখতে হবে, মানুষের শরীরে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়।

  • ছোট থেকে  দুর্বল শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে ভিটামিনের উপকারিতা আছে। কিন্তু সুস্থ মানুষ ভিটামিন বাইরে থেকে না খেয়ে, ফল বা শাকসবজি খাওয়া উপকারী।

  • ভিটামিন ট‍্যাবলেট খেতে হলে অতি অবশ‍্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


    চিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়