দেশ লাগামছাড়া করোনা সংক্রমণ। সেই সঙ্গে বাড়ছে আরটিপিসিআর (rt-pcr) টেস্ট করানোর চাহিদা। কিন্তু জেলায় জেলায় টেস্ট করানোর সেন্টারের অপ্রতুলতা ও সোয়্যাব নেওয়ার কর্মীরও অভাবের খবরও সামনে আসছে। বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে rt-pcr টেস্টের জন্য যা ব্যবস্থা রয়েছে, তার থেকে তিন-চার গুণ বেশি স্যাম্পল আসছে পরীক্ষার জন্য । কিন্তু এই পরীক্ষা ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানোও কার্যত অসম্ভব, করোনার উপসর্গ থাকলেও। 
যাঁরা ইতিমধ্যেই rt-pcr করিয়েছেন, তাঁরা দেখে থাকবেন, রিপোর্টে করণা পজিটিভ না নেগেটিভ ছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা লেখা থাকে, যা হল সিটি ভ্যালু (CT Value)। কারও কারও ধারণা, এই CT Value থেকেই জানা যায়, রোগ কতটা গুরুতর, ভাইরাস কতটা শরীরকে ঘায়েল করতে পারে । যদিও হিসেবটা এতটা সরল নয়, বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা । কী এই CT Value? এর সঙ্গে অসুখের প্রকোপের সম্পর্কটা ঠিক কী?  বিস্তারিত জানালেন, বিশিষ্ট চিকিত্সক ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার


  কী এই CT Value?    


 ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া মত নয় যে মাইক্রোস্কোপের নিচে আনলেই দেখা যাবে । করোনাভাইরাস শরীরে থাবা বসিয়েছে কিনা তা জানতে নাক ও গলা থেকে লালা রস সংগ্রহ করা হয় । এই লালা রস থেকে আরএনএ বের করে নেওয়া হয় । এবার এই আরএনএ কে ৩৫ দিয়ে গুণ করার পরও যদি ভাইরাসের অস্তিত্ব যদি না পাওয়া যায়, তাহলে বুঝতে হবে করোনাভাইরাস আপনার শরীরকে আক্রমণ করেনি । অন্যদিকে যদি দেখা যায় আরএনএ কে ৩৫ এর অনেক কম সংখ্যা দিয়ে গুণ করলেই যদি ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলে, তাহলে রোগী করোনা পজিটিভ । সিটি ভ্যালু যত কম ততই আপনার শরীরের ভাইরাল লোড বেশি  অর্থাৎ আপনার শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ততটাই বেশি হয়েছে । আবার ৩৫ এর কাছাকাছি সংখ্যা যদি আপনার CT Value হয় তাহলে বুঝতে হবে ভাইরাল লোড ততটাও বেশি নয় । এবার অনেকের মনেই এই প্রশ্নটা জাগে, ভাইরাল লোড বেশ হওয়া মানে কি তিনি বিপদ মুক্ত ? আবার অনেকে মনে করেন ভাইরাল লোড বেশি মানেই যেকোনো মুহূর্তে তার বড় রকমের ক্ষতি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। যদিও সমীকরণটা এতটা সরল নয়, বললেন, চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার । এবিপি লাইভ কে জানালেন,  rt-pcr টেস্ট করে যদি দেখা যায়, রোগীর শরীরে ভাইরাল লোড বেশি অর্থাৎ সিটি ভ্যালু কম, তাহলে শরীরে সংক্রমণ বেশি হয়েছে । কিন্তু তার মানে যে তিনি বিপদসীমায় রয়েছেন এমনটা নয় । আবার  অনেক কম ভাইরাল লোড থাকা রোগীকেও দেখা গেছে আইসিইউতে অ্যাডমিট করতে হয়েছে । 


করোনা ভাইরাস শরীরে ঢুকে ঠিক কী ঘটায় ?


ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে শরীর তার নিজের নিয়মে ইমিউনোলজিক্যাল রিয়াকশন করে । অর্থাৎ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। শরীরে ইমিউনোলজিক্যাল রিঅ্যাকশন বেশি হলেই ইমিউন স্টর্ম বা সাইটোকাইনিন স্টর্ম তৈরি হয় । ভাইরাস যখন ফুসফুসে ঢোকে তখন তা ফরেন বডির মত আচরণ করে । শরীর এই ভাইরাসকে আটকাতে চায় । এই আটকাতে গিয়েই ইমিউন স্টর্ম তৈরি হয় । এবার কার শরীরের ইমিউন স্টর্ম কতটা বেশি হবে, তার ওপরই নির্ভর করছে রোগীর শারীরিক অবস্থা কোনদিকে যাবে। শরীরের মধ্যে এই ঝড় সৃষ্টি হলে সেই ঝাপটা সহ্য করার মতো শরীরের বাকি অর্গান গুলিকেও সুস্থ হতে হয়। কিন্তু শরীরের অন্যান্য অর্গানের কোনওটি যদি কোমরবি়ড কন্ডিশনে থাকে, তাহলে মুশকিল। ইদানিংকালে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, সিটি ভ্যালুর সঙ্গে এই ইমিউন স্টর্মের সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই । অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে সিটি ভ্যালু বেশি হলে রোগীর লক্ষণ কম, তা বলে যে তার থেকে সংক্রমণ হবে না, এরকম কোনও মানে নেই । আবার ঘটতে পারে ঠিক এর বিপরীতটাও। ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার জানালেন, ৮ থেকে ১০ সিটি ভ্যালু হলেও রোগী যে সাংঘাতিক অবস্থা হবে, এমনটা নয়। আবার বেশি সিটি ভ্যালুতেও বড় বিপদ ঘটতেই পারে।


 আরও পড়ুন :  ২৪ ঘণ্টাও বাঁচার আশা নেই, এমন রোগীও সুস্থ হয়ে কাজ করছেন, সৌজন্যে ECMO, বললেন ডা. কুণাল সরকার


করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পেলে পরবর্তী কী কী বিষয়ে নজর রাখা আবশ্যক?



  • করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, করে শ্বাসকষ্ট শুরু হচ্ছে এবং তা এতটাই তীব্র হচ্ছে চিকিৎসার সময় পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ, ন্যূনতম উপসর্গ দেখা দিলেই rt-pcr টেস্ট করাতেই হবে।

  •  করোনা আক্রান্ত হলে অবশ্যই সঙ্গে রাখুন পালস অক্সিমিটার । বারবার করে অক্সিজেন স্যাচুরেশন চেক করুন। বেশি কাশি হলে সতর্ক হন । চিকিৎসকের পরামর্শ নিন 

  •  এছাড়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ রক্ত পরীক্ষা করাতেই হবে । যেমন D Dimer, Complete blood count  এবং CRP। আক্রান্ত হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা থাকে সেই জন্যD Dimer ব্লাড টেস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা

  •  ফুসফুসের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য অনেক সময় সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।