কলকাতা : ডায়াবেটিকদের (Diabetes )শরীরে যে কোনও ক্ষতই চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে। ডেকে আনতে পারে বড় সমস্যা। স্বাভাবিক কাটা-ছেঁড়াও  (wound healing )বাঁকা দিতে যেতে বেশি সময় লাগে না ! পায়ে পেরেক ফোটার মতো ঘটনা থেকে তৈরি হতে পারে পা বাদ দেওয়ার মতো পরিস্থিতিও (lower limb amputation)। কেন ? আলোচনায় ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়। 


আমাদের শরীরে কোনও কারণে ক্ষত তৈরি হলে শরীরে নানারকম ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। যার জেরে ক্ষত আস্তে আস্তে ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। কোথাও কেটে ছড়ে গেলে, রক্তের অনুচক্রিকা সহ বিভিন্ন উপাদান নিসৃত হয়। যা প্রাথমিক ভাবে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। তারপর সেখানে জমাট বাঁধতে শুরু করে রক্তের শ্বতকণিকা ও তার থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, যেগুলি সেখানে প্রদাহ তৈরি করে। এতে সেখানে ক্ষত মেরামতি শুরু হয়। দ্বিতীয়ত ক্ষতিগ্রস্ত চামড়ার ভিতরে একটি দ্বিতীয় স্তর তৈরি করে। এর ফলে বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস শরীরের ভিতরে প্রবেশের আগেই সেই স্তরে আটকা পড়ে বা মারা যায়। এভাবেই শরীরে যে কোনও ক্ষত সারে। 


মধুমেহ এমন একটা অবস্থা, যাতে শরীরে রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, কোনও কারণে ইনসুলিন কম সাপ্লাই হওয়ার ফলে। ইনসুলিনের ঘাটতির দুটি কারণ থাকে। টাইপ ওয়ান ডায়বেটিসের (সাধারণত অল্প বয়সে যাঁদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে) ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয়ের বিটাকোষগুলি  নষ্ট হয়ে যায়। এই কোষগুলি থেকেই ইনসুলিন ক্ষরণ হয়। এর ফলে খুব অল্প বয়সেই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। 


আরও পড়ুন :


ব্লাড সুগারের রোগী? শরীর কাঁপছে? অত্যধিক ঘাম? হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ কিন্তু


টাইপ টু ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে আবার সমস্যাটা অন্যরকম। শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা হয়ত ঠিক থাকে। কিন্তু যে কোষগুলির উপর ইনসুলিন কাজ করে, সেই কোষগুলিতে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়। অর্থাৎ ইনসুলিন ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে রক্তের শ্বেতকণিকা ক্ষতস্থানগুলি মেরামতি করতে বাধা দেয়। অ্যান্টি অক্সিডেন্টও কাজ করতে পারে না। ফলে ক্ষত সারতে সময় লাগে। 


এছাড়াও এর অন্যতম কারণ, ডায়াবেটিসের ফলে হওয়া নার্ভের সমস্যা।  পায়ে ও হাতের সামনের দিকের অংশে অসাড়ভাব তৈরি হয়। এর ফলে চামড়ায় কোনও ক্ষত তৈরি হলে সেখানে ক্ষত মেরামতি করার পদ্ধতিটি ব্যাহত হয়। 


ডায়াবেটিসে শিরা- ধমনীতে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। ক্ষত স্থানে রক্ত পৌঁছাতে দেরি হয়। ফলে ক্ষত সারানোর প্রক্রিয়াটি ঠিকমতো হয় না। ডায়াবেটিকদের মধ্যে সবথেকে বেশি দেখা যায় পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি । সাধারণত পা থেকে সমস্যা শুরু হয়। পায়ের পাতায় লক্ষণ চোখে পড়ে। হাতের আঙুল থেকে শুরু হতে পারে। লক্ষণ গুলি হল -অসাড় ভাব, ঝিম ধরে যাওয়া, শিরশিরানি হওয়া, পরবর্তীতে হাত-পা জ্বালা, রাতে শোওয়ার সময় বেশি জ্বালা । এর  ফলে অনেক সময় অবশ বোধ হয়। যাকে হাইপো অ্যাস্থেশিয়া বলে। আঘাত লাগলে সাড় না পাওয়া, ব্যথা না বোঝা, এই হাইপো অ্যাস্থেশিয়ার লক্ষণ। এর ফলে অনেক সময় হাতে গরম জল পড়লে বা পায়ে পেরেক ফুটলেও টের পাওয়া যায় না। অসাড়ে পায়ের গভীরে ইনফেকশন ছড়াতে থাকে। যাকে ডায়াবেটিক ফুট বলা হয়ে থাকে। হাড় অবধি ইনফেকশন ছড়িয়ে যায়। ডায়বেটিক ফুটে অনেক সময় ইনফেকশন এতদূর ছড়ায়, যাতে পায়ের একাংশ বাদও দেওয়া হতে পারে। যাকে বলে - diabetic foot amputation। 


তাই ডায়াবেটিক হলে কোনও মতেই অবহেলা করা যাবে না -



  • ছোটখাটো ঘা

  • ক্ষত 

  • ছড়ে যাওয়া

  • পেরেক ফুটে যাওয়া 

  • যে কোনও ক্ষতই রোজ ড্রেসিং এর প্রয়োজন

  • ২-৩ দিনে না সারলে সরাসরি চিকিৎসকের কাছে যান

  • চিকিৎসককে জানাতে ভুলবেন না, আপনার মধুমেহ আছে।