পায়েল মজুমদার, কলকাতা: খাতায় কলমে এখনও বিদায় নেয়নি শীত। বরং ভোরের দিকে হিমেল আঁচ থাকছে। কিন্তু বেলা বাড়লেই গরম। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বছরের এই সময় থেকেই 'চিকেন পক্স' (chicken pox season) বা জলবসন্ত সংক্রমণের দাপট বাড়ে। ভাইরাসঘটিত এই রোগ নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কিন্তু তাকে আটকাতে কী করবেন (how to prevent chicken pox)? সংক্রমণ হলেই বা কী করণীয়? 


 জলবসন্ত নিয়ে দু'কথা...
চেনা রোগ। তবে ব্যতিক্রমী কিছু ক্ষেত্রে অচেনা ও মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনতে পারে, সাবধান করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষত প্রসূতি এবং কোনও কারণে যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম, তাঁদের দেহে সংক্রমণ হলে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হতে পারে। তাই কয়েকটি বিষয় আগে থেকে জেনে রাখা জরুরি।



  • ভাইরাস থেকে চিকেনপক্সের সংক্রমণ ছড়ায়

  • ভাইরাসের নাম varicella-zoster 

  • ভাইরাসটি অত্য়ন্ত সংক্রামক। অতীতে কারও বসন্ত না হয়ে থাকলে বা এর প্রতিষেধক না নেওয়া থাকলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানো অত্যন্ত কঠিন।

  • সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে অন্যের দেহে ছড়ায়

  • সাধারণত একবার জলবসন্ত হয়ে গেলে দ্বিতীয় বার হওয়ার কথা নয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই একাধিক বার এটি হতে পারে।

  • 'চিকেন পক্স'-র টিকা রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধে যথেষ্ট কার্যকরী।



উপসর্গ...
    সাধারণত এই ভাইরাল সংক্রমণের ক্ষেত্রে জ্বর অন্যতম উপসর্গ। তবে যেটি দেখে জলবসন্ত চেনা যায়, তা হল rash। প্রথমে মুখ, পিঠ ও বুকে দেখা গেলেও ধীরে ধীরে গোটা দেহেই rash ছড়িয়ে পড়ে। তার পর একসময়ে সেটি জলভর্তি ফোসকার চেহারা নেয়। কিছু দিন পর সেই ফোসকা শুকিয়ে গিয়ে ছাল উঠতে শুরু করে। ভয়ঙ্কর চুলকানি হতে পারে এই rash গুলিতে। কারও কারও ক্ষেত্রে ভীষণ ব্যথাও থাকে। সঙ্গে অসহ্য মাথাব্যথা, শরীরে যন্ত্রণা, খিদে না থাকা ও ক্লান্তির মতো উপসর্গও দেখা যায়।


সংক্রমণ কখন ছড়ায়?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, rash বেরোনোর ১/২ দিন আগে থেকে ফোসকা শুকিয়ে ছাল না ওঠা পর্যন্ত সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাই এই গোটা সময়টা আইসোলেশনে থাকাই একমাত্র উপায়। আমেরিকার সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের আরও সংযোজন,  varicella-zoster থেকে একবার চিকেন পক্স হয়ে যাওয়ার পরও সেটি দেহে নিষ্ক্রিয় হয়ে লুকিয়ে থাকতে পারে। পরে অনুকূল পরিবেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে সেটি 'হারপিস' হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। সেখান থেকেও অন্যদের সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে, জানাচ্ছে সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন।


কী ভাবে মোকাবিলা?
মুকুন্দপুরের আর এন টেগোর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বললেন, 'রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় টিকা। এতে সংক্রমণ আটকানোর সম্ভাবনা অনেকটাই। তাই প্রতিষেধক দিয়ে নিতে হবে।' তা ছাড়া সংক্রমিত কারও কাছে না যাওয়ার পরামর্শ তো রয়েছেই। আর যাঁদের সংক্রমণ হয়ে গিয়েছে তাঁদের জন্য চিকিৎসক বিশ্বাসের পরামর্শ, 'অ্যাসাইক্লোভির অ্য়ান্টি ভাইরাল খাওয়া শুরু করে দিতে হবে। একেবারে rash বেরোনোর শুরুতেই যদি এটি খাওয়া যায় তাতে অনেক রোগের প্রকোপ বা তীব্রতা কমতে পারে।' আর খাওয়াদাওয়া? বাড়িতে থাকার পাশাপাশি বাড়ির সাধারণ খাওয়াদাওয়ার উপরই জোর দিলেন তিনি। তবে এক্ষেত্রে শুধু নিরামিষ নয়, আমিষ প্রোটিনও খাওয়া দরকার। মনে করেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। 


আরও পড়ুন:সিনিয়র দলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতাই লক্ষ্য, ঘরে ফিরেই জানালেন অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বজয়ীরা