পল্লবী দে, কলকাতা: মানবদেহের অভ্যন্তরে পরিচ্ছন্নতা বজায়ের দায়িত্ব যারা থাকে, তাদের মধ্যে অন্যতম হল- কিডনি বা বৃক্ক। অনাব্যশক বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে বের করে রক্তের পরিশোধনের কাজ করে এই কিডনি। কিন্তু শরীর খারাপ তারও হয়। কাজ করতে করতে অনেকসময় কার্যক্ষমতা কমে যায় কিংবা পুরোপুরি কাজ করাও বন্ধ করে দেয়। সেই সময় যে কৃত্রিম পদ্ধতিতে কিডনির কাজ চালানো হয় তাকেই বলে ডায়ালিসিস।  


ডায়ালিসিস তখনই হয় যখন কিডনির সমস্যা একেবারে শেষ ধাপে রয়েছে। একে বলা হয়, এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ বা ডায়ালিসিস। দু'রকমের ডায়ালিসিস হয়- একটি হিমোডায়ালিসিস (Haemodialysis) আর পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস (Peritonial Dialysis)। হিমোডায়ালিসিসে কৃত্রিম কিডনির কৃত্রিম ঝিল্লি আর পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিসে পেটের পেরিটোনিয়াম মেমব্রেন কিডনির মতো কাজ করে। 


ডায়ালিসিস চলাকালীন অনেক রোগী তাঁদের ডায়েট বা সুষম খাদ্য তালিকা নিয়ে নানা চিন্তায় ভোগেন। কোনটা খাওয়া ঠিক, কিংবা কোনটা খাওয়া একেবারেই অনুচিত তা নিয়ে মনের মধ্যেই চলতে থাকে দ্বিমত। কিন্তু পুষ্টিবিদ ও রেনাল ডায়েট বিশেষজ্ঞ  অরিত্র খাঁ জানাচ্ছেন, যখন একজন মানুষের ডায়ালিসিস চলে, তার প্রোটিনের ভাগটা অনেকটা বেশি এবং তার ক্যালোরি ভাগও অনেকটা বেশি দিতে হয়। কারণ যখন ডায়ালিসিস হয় তখন তো রক্তকে পরিস্রুত করা হচ্ছে তখন কিন্তু তাঁর খাবার ও ক্যালোরির প্রয়োজন হয়। একজন ডায়ালিসিস চলছে এমন রোগীর ক্ষেত্রে ৩৫ থেকে ৪০ কিলো ক্যালোরি/কেজি/দিন থেকে শুরু করে ১০০ কিলোক্যালোরিও তাঁকে দেওয়া যেতে পারে। এখন রোগীর দেহের ওজন, উচ্চতার ওপর সেই পরিমাণ নির্দিষ্ট করা হয়। 


আরও পড়ুন, কিডনির রোগ মানেই প্রোটিন বাদ নয়, কী কী খেলে সুস্থ থাকা যায়, জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ


একজন রোগীর যখন হিমোডায়ালিসিস চলে সেই সময় রোগীকে ১.২ থেকে ১.৫ গ্রাম/কেজি/দিন তাঁকে প্রোটিন দেওয়া হয়ে থাকে। উচ্চ জৈবিকমূল্য যুক্ত প্রোটিন, যেমন- ডিমসেদ্ধ, মাছ, মুরগির মাংস, দুধ বেশি করে দেওয়া হয়। সোডিয়ামও যথাযথ পরিমাণে গ্রহণ করানো হয়ে থাকে। পটাসিয়ামের মাত্রাও ঠিক রাখা হয়। কিন্তু অনেক সময় রোগীদের ক্ষেত্রে হাইপারক্যালামিয়াও দেখা যায়। সেক্ষেত্রে পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কম খেলেই ভাল। ভিটামিন, মিনারেলস সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণও ঠিক রাখতে হবে। ডায়ালিসিসের ক্ষেত্রে তাই ডায়েট কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খাওয়া খুব দরকার। 


এবিপি লাইভের সঙ্গে কথোপকথনে পুষ্টিবিদ বলেন,  "এমনও হয়েছে হাসপাতালে এই ধরনের রোগীকে চাউমিন পর্যন্ত খেতে দেওয়া হয়ে থাকে।" তাই ডায়ালিসিসের পর ডায়েট যেমন থাকবে, তেমন মন পসন্দ খাওয়ার থাক। যাতে শরীর ও মন দুইই ভাল রেখে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যাওয়া যেতে পারে।