নয়াদিল্লি: কারও কোমর, কারও হাঁটু, কারও আবার অন্য কোথাও। বয়স পঞ্চাশের বেড়া টপকাতে না টপকাতেই শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা (pain) প্রায় 'ঘর ঘর কি কহানি'। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই হাড় (bone) ও গাঁটের (joints) ব্যথার নেপথ্যে খলনায়ক অস্টিওপোরোসিস (Osteoporosis)। একটি পরিসংখ্যান বলছে, পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলাদের প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জন ও পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষদের প্রতি পাঁচ জনের এক জন অস্টিওপোরোসিসের শিকার। অর্থাৎ এই রোগের দাপট ঠিক কতটা, সেটা এখান থেকেই স্পষ্ট। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সামান্য লাইফস্টাইল বদলালেই এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।


অস্টিওপোরোসিস কী?
সহজ ভাষায় bone mass কমতে থাকা যার জেরে হাড় ক্ষয়ে যেতে থাকে। ফল? খুব সহজে ভেঙে যেতে পারে। সাধারণ ভাবে শৈশব ও কৈশোরের বড় অংশ জুড়ে এই bone mass তৈরি হতে থাকে। তিরিশ বছরের মধ্যে তার চূড়ান্ত বিকাশ হয়ে যায়। আর বার্ধক্য হল এই bone mass কমার সময়। বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এই ক্ষয় আরও বাড়তে থাকে। ফলে অস্টিওপোরোসিসের সম্ভাবনা বাড়ে। তাই অল্পবয়সেই যদি সতর্কতা গ্রহণ না করা হয়, তা হলে হাড় ও গাঁটের সমস্যা শুধু যে তীব্র যন্ত্রণা হয়েই ভোগান্তি বাড়াবে তা নয়। আরও নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে, মনে করে বিশেষজ্ঞরা। লাইফস্টাইলে কয়েকটি বদল আনলে এই আশঙ্কা অনেকটাই কমানো সম্ভব, সংযোজন তাঁদের।


কী কী বদল?
খাবার থেকে সঠিক পুষ্টি আসা অত্য়ন্ত জরুরি। আর এই অভ্যাস যাতে অল্পবয়স থেকেই তৈরি হয়, সে দিকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন, ফল, শাকসব্জি ও দুগ্ধজাত খাবার যেন অতি অবশ্যই তালিকায় থাকে। এর ফলে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন ডি-র মতো হাড়ের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি উপকরণের জোগান বাড়ে। কোন বয়সসীমার মধ্য কতটা ক্য়ালসিয়াম নেওয়া দরকার, সে ব্যাপারেও নির্দিষ্ট রূপরেখা রয়েছে। তবে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে এগনোই ভাল। এছাড়াও যেখান থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মতো জরুরি উপকরণ পাওয়া যায় সেগুলি খাওয়ার উপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। যেমন দুধ, চিজ, ইয়োগার্ট, মাংস, ডিমসেদ্ধ ইত্যাদি। মনে রাখা দরকার ক্যালসিয়াম যাতে ঠিকঠাক শরীরে মেশে, সে জন্য ভিটামিন ডি অত্যন্ত জরুরি। তাই সয়া, মাশরুম, কড লিভার অয়েল-ও খেতে জোর দিচ্ছেন অনেকে। সূর্যের আলোয় থাকাটাও ভিটামিন ডি তৈরির পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে শুধু ভিটামিন ডি নয়, ভিটামিন ই-র দিকেও খেয়াল রাখা দরকার। এটি পেশিস্বাস্থ্যের পক্ষে জরুরি। সুষম ও পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি এক্সারসাইজ-ও করতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে অন্তত আধ ঘণ্টার ওয়ার্কআউট আবশ্যক। শিশুদের জন্য ওই মেয়াদ ১ ঘণ্টা। বিশেষ করে পিলাটে ও যোগাসন এক্ষেত্রে দারুণ কাজে দেয়। তাই এগুলিও জীবনচর্চায় সামিল করা দরকার। লক্ষ্য রাখতে হবে ওজন যাতে বাড়াবাড়ি রকম বেড়ে না যায়। পাশাপাশি ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাসও ছাড়া দরকার। সবচেয়ে বড় কথা, আপনি কী ভাবে দাঁড়ান ও বসেন, সেটাও কিন্তু অনেকাংশে হাড়ের স্বাস্থ্য নির্ধারণ করতে পারে। 


তাই সময় থাকতে সতর্ক হোন। তা হলে বার্ধক্যেও চাঙ্গা থাকবে হাড়, ভোগাবে না গাঁটের ব্যথা।


আরও পড়ুন:ফের বঙ্গোপসাগরে তৈরি হচ্ছে নিম্নচাপ, ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস একাধিক জেলায়