কলকাতা : করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউতে জর্জরিত হয়েছে ভারত । সেকেন্ড ওয়েভ যে একেবারে চলে গেছে এমনটা বলার সময় আসেনি । ইতিমধ্যেই শিয়রে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা । তার মধ্যে আবার কেউ কেউ ভুগছেন, করোনা পরবর্তী নানারকম অসুখে।  করোনা মুক্ত হলেই যে এক্কেবারে স্বস্তি তা কিন্তু একদমই নয়। নানারকম সমস্যার উদ্রেক হচ্ছে শরীরে, যা হয়ত আগে কখনও হয়নি রোগীর। যেমন  দীর্ঘদিন স্বাদ ফিরে না আসা। আবার কেউ কেউ করোনা থেকে সেরে ওঠার পর হারাচ্ছেন শ্রবণ ক্ষমতা । কিংবা করোনাভাইরাসের ধাক্কা ঘায়েল করছে কিডনিকে। এর পাশাপাশি করোনার পর বেশ কিছু চোখের সমস্যা প্রকট হচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরে যেমন ভয়াবহ হয়েছিল ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ, তাতে চোখ হারিয়েছেন বেশ কিছু মানুষ । তাছাড়াও সমস্যায় ফেলছে রেটিনায় রক্ত জমাট বাঁধা বা ব্লাড ক্লট  ( Retinal Occlusion) করে যাওয়ার সমস্যা। এ বিষয়ে বিস্তারিত বললেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়



কেন রক্ত জমাট বাঁধে রেটিনায় ? 

আমাদের শরীরে কোথাও কেটে ছিঁড়ে গেলে রক্ত একটা সময়ের পর জমাট বেঁধে যায়। এই রক্ত জমাট বাঁধার পিছনে থাকে রক্ত তঞ্চক উপকরণ গুলি । যার মধ্যে প্লেটলেট (platelets) বা অনুচক্রিকা অন্যতম। প্লেটলেট রক্তের মধ্যে স্থিত আরও কতগুলি সহযোগী উপকরণ  নিয়ে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে । করোনায় আক্রান্ত হলে অনেকের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেড়ে যায়। অর্থাৎ শরীরের বিভিন্ন অংশে যেমন থ্রম্বোসিস দেখা যায়, ঠিক তেমনই হতে পারে চোখে। ঠিক সেই কারণেই করোনা হলে রোগীদের d-dimer পরীক্ষা করতে বলা হয়,  যার মাধ্যমে বোঝা যায় শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা কতটা । তা যদি অস্বাভাবিক হয় তাহলে মাথায় রাখতে হবে রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ খাওয়ার বিষয়টি । যদিও এর কোনওটিই রোগী নিজে নিজে করতে পারবেন না, করা উচিতও নয় । চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান এবং কোনও পরীক্ষায় যদি অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে তাহলে প্রয়োজন অনুসারে তার চিকিৎসা করাতে হবে।

কীভাবে রক্ত জমাট বাঁধে রেটিনায়? 

করোনা পরবর্তীতে রেটিনার ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধার মতো ঘটনা ঘটে, যাকে চিকিত্সা শাস্ত্রের ভাষায় বলে রেটিনাল আর্টারি অক্লুশন (retinal artery occlusion) । ধমনীতে ক্লট তৈরি হওয়ার জন্য রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়, যা রাতারাতি একটি মানুষকে দৃষ্টিহীন করে দিতে পারে । তবে এমন নয় এই ঘটনা ঘটছে অহরহ , আবার সংখ্যাটা নেহাত উড়িয়ে দেওয়ার মতোও নয়! রক্ত জমাট বাঁধে রেটিনার শিরাতেও। যাকে বলা হয় Retinal vein occlusion ।  ডাক্তাররা বলছেন, এই ধরনের সমস্যায় দৃষ্টি ফিরে পাওয়া খুব কঠিন।  যেসব মানুষের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা রয়েছে তারা সাধারণত কোভিড পরবর্তীকালে এই ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন ।  
রেটিনায় ব্লাড ক্লট হওয়া অনেকটা চোখে হার্ট অ্যাটাকের মত ঘটনা।  যেখানে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়ে দৃষ্টিশক্তি চলে যায় ।


Tuberculosis In Child: জ্বর-কাশি, পেট-ব্যথা, নিয়ে আসছে শিশুরা, পরীক্ষা করে ধরা পড়ছে টিবিও ! প্রথমেই সতর্ক হোন


 


ডক্টর শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন,  করোনা এবং মিউকরমাইকোসিস-এর পর এই ধরনের সমস্যায় রোগীরা বেশি পড়েছেন । চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিমাদ্রি দত্ত জানালেন, করোনা পরবর্তীতে এই ধরনের সমস্যা নিয়ে বেশ কয়েকজন রোগী এসেছেন তাঁর কাছে । অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে,  করোনা পরবর্তীতে রেটিনার হ‍্যামারেজ দৃষ্টিশক্তি কে হঠাত কমিয়ে দিয়েছে। যদিও ডা. দত্ত জানাচ্ছেন, ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে পারেন মানুষ ।


এর থেকে বাঁচার উপায় কী?  

মনে রাখতে হবে , এই ধরনের অসুখ হঠাৎই ঘটে।  তবে করোনাকালে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালে, সমস্যা বড় হওয়ার আগেই চিকিত্সা শুরু করা যায়।  মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটেও বলা হয়েছে কোভিড-১৯ এর সঙ্গে রেটিনার অসুখের সম্পর্কে আছে। সেন্ট্রাল রেটিনাল আর্টারি অক্লুসান বা সেন্ট্রাল রেটিনাল ভেইন অক্লুসান খুব বিরল নয়। তবে আগে থেকে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা ধরা পড়লে স্টেরয়েড এবং অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে।