কলকাতা : সন্তান সময়ের আগে জন্মালে তা নিঃসন্দেহে মা ও পরিবারের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হলে অনেক ক্ষেত্রেই শিশুর সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ  ঠিকভাবে গঠিত হয় না। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিক মতো কাজ করতে শুরু করে না। গর্ভাবস্থার ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগে যে বাচ্চার জন্ম হয়, তাদেরই প্রিম্যাচিওর বেবি বলা হয়ে থাকে। জন্মের পর এই বাচ্চাদের বিশেষ যত্ন ও নজরে রাখার প্রয়োজন পড়ে। প্রিম্যাচিওর শিশুর ক্ষেত্রে কী কী বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে হবে ? বিস্তারিত আলোচনায় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার (Dr. Agnimita Giri Sarkar )



Pre-mature শিশুদের মধ্যে কয়েকটি ভাগ আছে।



  • ৩৪ থেকে ৩৬ সপ্তাহ সম্পূর্ণ করে জন্মায় যারা , তারা লেট প্রি ম্যাচিওর বেবি (Late preterm 

  • ৩২ থেকে ৩৪ সপ্তাহের মধ্যে জন্মালে সেই শিশুকে বলা হবে মডারেট প্রিম্যাচিওর বেবি (Moderately preterm 

  • ৩২ সপ্তাহ মাতৃগর্ভে পূরণ করার আগেই জন্মালে , তাকে বলে ভেরি প্রি ম্যাচিওর (Very preterm) বেবি। 

  • যারা ২৫ সপ্তাহের আগে জন্ম নিলে তাদের এক্সট্রিম প্রি ম্যাচিওর (Extremely preterm)  বেবি বলে

    Pre-mature
    শিশুদের মধ্যে যে সমস্যাগুলি থাকে, তা হল - 


  •  জন্ম থেকেই এঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে।

  • এই শিশুদের সারা গা লোমে ঢাকা থাকে, যাকে ল্যানুগো হেয়ার। 

  • ত্বকের নিচের ফ্যাট খুব কম থাকে, তাই শরীরের তাপমাত্রা মেইনটেন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।

  • ফুসফুস সেরকমভাবে পরিণত হয় না। তাই শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে সমস্যা হয়ে থাকে। 

  • হৃদস্পন্দনও দ্রুত থাকে।

  • দুধ টেনে খেতেও কষ্ট হয়। তাই আইভি চ্যানেল মারফৎ খাওয়াতে হয় শিশুকে। 

  • শরীরের গঠন মাথার আয়তনের থেকে ছোট হয়। 

    এইসব শিশুর জন্য প্রয়োজন বিশেষ যত্নের। এদের ক্ষেত্রে বিশেষ মনিটরিং প্রয়োজন। যেমন খেয়াল রাখতে হবে - 

  • ব্রিদিং রেটে নজর রাখতে হবে। 

  • ব্লাড প্রেসারেও নজর রাখতে হবে। 

  • কতটা ফ্লুইড ইনটেক হচ্ছে ও আউটপুট হচ্ছে তা খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ মল মূত্রের আউটপুটে নজর রাখতে হয়। 

  • রক্তপরীক্ষা করতে হবে বিভিন্ন প্যারামিটারে নজর রাখতে। 

  • কোনও ইনফেকশন আছে কি না, তাও দেখতে হবে।

  • ইকো কার্ডিওগ্রাফি করাতে হবে হার্টের কার্যকারিতার উপর নজর রাখতে। 

  • বারবার আই চেকআপ করাতে হবে, রেটিনোপ্যাথি অফ প্রিম্যাচিওরিটি হচ্ছে কি না দেখতে হবে। 

  • এছাড়াও আরও কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে হবে। 

  • ইকো কার্ডিওগ্রাফি করা হয় হার্টের কোনও সমস্যা আছে কি না দেখার জন্য।

  • আলট্রা সনোগ্রাফিও করা হয় মস্তিষ্ক ও পেটের। 

  • নজর রাখতে হবে লিভার ফাংশনের উপরও। প্রয়োজনে ফটোথেরাপি করতে হয়। যাতে বিলিরুবিন ভেঙে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। 
    ইনকিউবেটরে রেখে এদের চিকিৎসা করা হয়। এছাড়া লক্ষণ অনুসারে সবরকম চিকিৎসা করাতে হয়। তাই NICU তে রেখে ক্রমাগত নজর রাখতেই হয়। শুধু তাই নয়, শিশু যখন একটু পরিণত হয়, তখন আস্তে আস্তে মায়ের দুধ টানতে পারে কি না দেখতে হয়। কোনও ইনফেকশন থাকলে চিকিৎসা করতে হবে অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে। এরপর শিশুটি বাড়ি ফেরার পরও কীভাবে যত্ন করতে হবে, তা বলে দেন চিকিৎসকরা। 
    এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তী পর্বে। 


    ডা. অগ্নিমিতা গিরি সরকার