কলকাতা: এসএসকেএমে (SSKM) শুরু হচ্ছে রোবটিক সার্জারি (Robotic Surgery)। এ খবর ইতিমধ্যেই হইচই ফেলেছে রাজ্যে (West Bengal)। কিন্তু কী এই পদ্ধতি? কীভাবে কাজ করবে রোবটের হাত? সাধারণ মানুষ কীভাবে উপকৃত হবেন? এবিপি লাইভকে রোবটিক সার্জারি নিয়ে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিলেন এসএসকেএমের শল্য বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার (Lead, Breast service)। 


কী এই রোবটিক সার্জারি: নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটি রোবট সহায়ক অস্ত্রোপচার। অপারেশন থিয়েটারে সার্জন একটি কম্পিউটর স্টেশনে বসে রোবটের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর চোখ থাকে কম্পিউটরের থ্রিডি স্ক্রিন। কীভাবে অস্ত্রোপচার হবে সেখান থেকেই রোবটকে নির্দেশ দেন সার্জন। সেই নির্দেশ কম্পিউটর থেকে পৌঁছে যায় রোবটিক আর্মসে। 


ধরা যাক, কোনও রোগীর শরীরে টিউমার রয়েছে। সেটা দেখতে সার্জনের নির্দেশ অনুযায়ী অ্যাসিস্ট্যান্ট ছোট ছিদ্র করে ক্যামেরা ঢুকিয়ে দেবে রোগীর শরীরে। অন্যদিকে, সার্জন স্ক্রিনে দেখতে পাবেন কোথায় টিউমারটি রয়েছে। এর পর সার্জন সেন্সরে নির্দেশ দিলে সেই অনুযায়ী অস্ত্রোপচার করবে রোবট। সুতরাং একজন চিকিৎসকের মস্তিষ্কের নির্দেশ এবং রোবটিক আর্মসের সহায়তায় শেষ হবে অপারেশন। 


কী কী সুবিধা: এটি অনেক বেশি সহজ, ঝুঁকিহীন, নির্ভুল এবং নমনীয়। জটিলতা কম থাকায় ব্যথা ও রক্তপাতহীন সার্জারি সম্ভব। এমন কী অতিসুক্ষ্ম সার্জারিও বিনা ঝুঁকিতে করতে পারে রোবটিক আর্মস। রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে দৈনন্দিন কাজকর্মে ফিরতে পারেন বলেও জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। 


ডাঃ দীপ্তেন্দ্র সরকার (Dr Diptendra Sarkar) বলছেন, 'বয়সজনিত কারণে অপারেশনের সময়ে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের হাত কাঁপতে পারে। তবে এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে প্রবীন সার্জনও যেকোনও জটিল অপারেশন করতে পারবেন। কীভাবে? রোবটিক আর্মের মধ্যে 'ট্রেমার কারেকশন মোড' সেট করা রয়েছে। ফলে একজন অভিজ্ঞ প্রবীন সার্জন শুধুমাত্র কম্পিউটরে নির্দেশ পাঠাবেন এবং রোবটিক আর্মসের সাহায্যে জটিল থেকে জটিলতর অপারেশন অনায়াসে করে ফেলতে পারবেন তিনি।'


কী কী সার্জারি? ক্যান্সারের সার্জারি থেকে শুরু করে পরবর্তীতে থাইরয়েডের (Thyroid) মতো ন্যাচরাল অরিফিস সার্জারিও (Natural Orifice Surgery) সম্ভব হবে এই পদ্ধতিতে। 


রোবটের রমরমায় তাহলে কি প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে সার্জনদের? ডাঃ দীপ্তেন্দ্র সরকার বলছেন, 'একেবারেই তা নয় বরং চিকিৎসকদের জন্য খুলে যাচ্ছে নতুন দিগন্ত। এখন একই ওটিতে থেকে কম্পিউটর নিয়ন্ত্রণে রোগীর যে অপারেশন হচ্ছে, আমার বিশ্বাস আগামীদিনে রাজ্যের একপ্রান্তে থাকা সার্জনের নির্দেশ এবং অন্যপ্রান্তে থাকা রোবটের হাত কাজে লাগিয়ে এই অপারেশন সম্ভব হবে এ দেশেও'।  


SSKM-এ রোবটিক সার্জারি: সমস্ত কাজ প্রায় শেষ। তৈরি হয়ে গিয়েছে অপারেশন থিয়েটারও। পুজোর পরেই রোবটিক সার্জারির যন্ত্র পৌঁছে যাবে হাসপাতালে। সার্জনদের একদফা প্রশিক্ষণ হয়েছে। এর পর আরও কয়েক দফার প্রশিক্ষণ হবে। জানা গিয়েছে, শুরুতে মেশিন তদারকির জন্য একজন ইঞ্জিনিয়র নিযুক্ত থাকবেন। থাকবেন একজন ট্রেনারও। বেশ কয়েক বছর আগেই এই অস্ত্রোপচার শুরু হলেও পূর্বভারতের সরকারি হাসপাতালে এই প্রথম। ফলে উপকৃত হতে চলেছেন প্রত্যন্ত গ্রামের রোগীও। 


চিকিৎসার খরত কত? কয়েক কোটি ব্যায়ে কেনা হচ্ছে যন্ত্র। তবে প্রাথমিকভাবে সরকারি হাসপাতালে রোগীদের রোবটিক সার্জারির সমস্ত খরচ বহন করবে সরকার। 


একটি কমিটি গঠন হয়েছে হাসপাতালের তরফে। সেই কমিটিরই অন্যতম সদস্য শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার। তিনি বলছেন, 'আমি স্বপ্ন দেখি আগামী দিনে জেলার হাসপাতালগুলোতেও রোবটিক সার্জারির পরিকাঠামো তৈরি হবে, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লে কমবে খরচও। এর আগে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠা রোবটিক সার্জারি আসেনি। এই প্রথম কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে চলেছে রোবটিক যন্ত্র। এর ফলে ট্রেনিং-এর পরিসর বৃদ্ধি পাবে। পরবর্তী প্রজন্মও শিখবে'।


সবমিলিয়ে, এসএসকেএমের রোবটিক সার্জারির সূচনা রাজ্যের চিকিৎসাক্ষেত্রে যে নয়া দিগন্ত খুলে দেবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।  


আরও পড়ুন: National Nutrition Week : সদ্যোজাতকে মধু খাওয়ান? ৬ মাস বয়স থেকে কী খাওয়াবেন, কী খাওয়ালে বিপদ?