কলকাতা : গাঁটে ব্যথা। পেশিতে টান। পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া থেকে শরীরের বিভিন্ন ব্যথা যন্ত্রণা। কখনও খেয়াল করে দেখেছেন বর্ষাকালে এই সমস্ত সমস্যা কেন বাড়ে? এমনিতেই বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। সংক্রমণের আশঙ্কায় নানারকম সুরক্ষিত নিয়ম হয়তো মেনে চলছেন। কিন্তু বর্ষাকাল চলে এসেছে তার চিরাচরিত সমস্যাগুলো নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আবহাওয়ায় আদ্রতার কারণে পেশি এবং গাঁটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। শীতকালের মতো বর্ষাকালেও এই সমস্যা অনেকের মধ্যে দেখা দেয়। তাঁদের মতে, আবহাওয়ার পরিবর্তনও এর অন্যতম কারণ। আবহাওয়ায় এই সময়ে অতিরিক্ত পরিমাণে আর্দ্রতা থাকে। এর ফলে রক্তচাপও বেড়ে গিয়ে শরীরের অঙ্গগুলোতে সঠিকভাবে রক্ত চলাচল হয় না। আর তার জন্য়ই নানারকম শারীরিক অসুস্থতার শিকার হতে হয় আমাদের।
তাঁরা জানাচ্ছেন, যাঁদের আর্থারাইটিসের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য বর্ষাকালের আবহাওয়া একেবারেই সুখকর নয়। এই সময়ে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে জলীয় পদার্থ বের হয়ে গিয়ে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে যখনই জলের অভাব হয়, তখনই গাঁটে ব্যথা, পেশিতে টান ধরা কিংবা পেশি শক্ত হয়ে বিভিন্ন ব্যথা যন্ত্রণার উপসর্গগুলো দেখা দেয়। এই সমস্যা বিশেষ করে ষাট বছরের বেশি বয়সের মানুষদের মধ্যে সচরাচর দেখা দেয়। বর্ষাকালে গাঁটে এবং পেশিতে ব্যথা যন্ত্রণা কীভাবে প্রতিরোধ করবেন বা পেশিতে টান ধরলে বা পেশি শক্ত হয়ে গেলে কী করবেন, তারও পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
১. গাঁটে ব্যথা কিংবা পেশিতে টান ধরার সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন ঠান্ডা গরম জলে সেঁক দেওয়ার। তাঁরা জানাচ্ছেন একটি পাত্রে ঠান্ডা জল এবং একটি পাত্রে গরম জল নিয়ে একটা কাপড়ে ভিজিয়ে সেঁক দিতে পারেন। সেঁক দেওয়া হয়ে গেলে ব্যথা যন্ত্রণায় উপশমকারী কোনও তেল গাঁটে এবং পেশিতে ভালো করে ম্যাসেজ করা দরকার। এতে যন্ত্রণার উপশমের সঙ্গে সঙ্গে গাঁটে এবং পেশিতে রক্ত সঞ্চালনও সঠিক থাকে। বর্ষাকালে যদি শরীরের কোথাও চোট আঘাত লাগে, তাহলে সেই জায়গায় ঠান্ডা জল কিংবা বরফের ম্যাসেজও দারুণ উপকারী।
২. বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, যাঁদের হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা ইতিমধ্যেই রয়েছে, তাঁরা বর্ষাকালে এসির হাওয়া থেকে অবশ্যই দূরে থাকুন। এসির ঠান্ডা হাওয়া ব্যথা যন্ত্রণাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
৩. পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া এবং গাঁটের ব্যথা দূর করতে শারীরিকভাবে অ্যাক্টিভ থাকা খুবই জরুরি। এর জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করা দরকার। প্রতিদিন সকালে এবং বিকেলে হাঁটা, যোগাসন করা কিংবা পায়ের বিভিন্ন ব্যায়াম করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, কখনওই অত্যধিক শরীরচর্চা করবেন না। তাতে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যদি আপনার আগে থেকেই কোনও চোট আঘাতের সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে যতক্ষণ না ব্যথা সারছে, ততক্ষণ পর্যন্ত শরীরচর্চা করা একেবারে উচিৎ নয়।
৪. বিশেষজ্ঞদের মতে, গাঁটে ব্যথার সমস্যা প্রতিরোধ করতে ভিটামিন ই রয়েছে এমন খাবার প্রতিদিনের তালিতায় রাখুন। ভিটামিন ই ব্যথা যন্ত্রণা কমানোর পাশাপাশি হাড় মজবুত করতেও সাহায্য করে। এর জন্য খাবারের তালিকায় বাদাম, অ্যাভোক্যাডো, সবুজ শাক-সব্জি, মাছ রাখুন। তবে, আচার, কেক, পেস্ট্রি, প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। শরীরের ব্যথা কমাতে গরম স্যুপ খেতে পারেন। আর শরীরে জলীয়ভাব বজায় রাখতে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া দরকার।
(বিঃদ্রঃ- এগুলি পরামর্শ মাত্র। এ বিষয়ে কোনও কিছু অনুসরণ করতে হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ও অনুসরণ করুন)