নয়াদিল্লি: ভারতের তৈরি ওষুধে কোভিড চিকিৎসায় সাফল্য। বলছে একটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা।
বিষয়টি কী?
বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, কোভিড সংক্রমণের ফলে হৃদযন্ত্রে প্রভাব পড়ে। কোভিড ভাইরাস হৃদযন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে। এটি কীভাবে রোখা যায়, তা নিয়েই গবেষণা চলছিল। সেই কাজেই সাফল্য মিলেছে। ডিফেন্স রিসার্চ অ্য়ান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO)-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা একটি ওষুধ তৈরি করেছে। যা এই ক্ষতি রুখতে পারে বলে মত। আমেরিকার বাল্টিমোরের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (Maryland University) একদল গবেষক খোঁজ পেয়েছিলেন যে SARS-CoV-2- ভাইরাসের একটি নির্দিষ্ট প্রোটিন হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে। তারপর তাঁরা ভারতীয় সংস্থার তৈরি এই ওষুধ ব্যবহার করে ক্ষতি রুখতে পেরেছেন বলে দাবি করা হয়েছে। ফ্রুট ফ্লাই ও ইঁদুরের উপর পরীক্ষা সফল হয়েছে বলে দাবি।
কোন ওষুধে বাজিমাত:
DRDO এবং ড. রেড্ডিজ ল্যাবরেটরি যৌথ উদ্যোগে 2DG নামে এই ওষুধ তৈরি করেছে। এটি একটি ওরাল ড্রাগ বা খাওয়ার ওষুধ। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সার্স কোভ ২ ভাইরাস শক্তির জন্য গ্লাইকোলিসিস (Glycolysis) বা গ্লুকোজ ব্রেকডাউনের উপর নির্ভর করে। ওই ওষুধের মাধ্য়মে ওই পদ্ধতিকে বাধা দিয়ে ভাইরাস বৃদ্ধিকে ঠেকানো হয়।
যেখানে আশঙ্কা:
কোভিড ১৯-এ সংক্রমিত ব্যক্তিদের হৃদযন্ত্রে প্রদাহের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। এছাড়া হার্টবিটের সমস্যা, রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া, স্ট্রোক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মতো ঝুঁকি থেকে যায়। সংক্রমণের পর থেকে অন্তত এক বছর পর্যন্ত এই ঝুঁকি থাকে।
মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই ক্ষতি এড়াতে ওই ওষুধ ব্যবহার করেন। অন্যতম গবেষক ঝে হান (Zhe Han) জানিয়েছেন, গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে এইচআইভি বা জিকা ভাইরাসের মতোই কোভিড ভাইরাসের নির্দিষ্টি প্রোটিনও দেহের কিছু কিছু অঙ্গে মারাত্মক ক্ষতি করে। এই গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হয়েছে নেচার কমিউনিকেশনস বায়োলজিতে (Nature Communications Biology)।
গবেষক দলটি জানাচ্ছে, তারা কোভিড ভাইরাসের সেই প্রোটিনটির খোঁজ পায় যা হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে। Nsp6-নামের সেই প্রোটিনটি প্রাণীদেহের কোষের পাওয়ারহাউস অর্থাৎ মাইটোকনড্রিয়ারও ক্ষতি করছে বলে দেখা যায়। গবেষকরা এই ক্ষতি এড়াতে ভারতে তৈরি ওষুধ 2DG ব্যবহার করে। যা sugar metabolism-এর পদ্ধতিকে ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন যে এই ওষুধ হৃদযন্ত্র এবং মাইটোকনড্রিয়ার ক্ষতি ঠেকাতে সক্ষম বলে গবেষণায় দেখা গিয়েছে। গবেষক হান বলেছেন, 'কিছু কিছু ভাইরাস থাকে যা সংক্রমিত প্রাণীদেহের কোষের উপর দখল নিয়ে তার মেটাবলিজম প্রক্রিয়ার বদল ঘটনায় যাতে শক্তি সংগ্রহ করতে পারে। আমরা সন্দেহ করেছি কোভিড ভাইরাসও এ কাজে সক্ষম। এর মাধ্যমে তারা বংশবিস্তারও করে। আমরা মনে করছি এই ওষুধ হৃদযন্ত্রের কোষের মেটাবলিজম আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবে, এর ফলে শক্তি সংগ্রহ না করতে পেরে ধ্বংস হবে ওই ভাইরাস।'
কত খরচ:
গবেষক দলটি জানিয়েছে যে 2DG খুব দামি নয়, ফলে তারা গবেষণার কাজে সহজেই ব্যবহার করা গিয়েছে। এই ওষুধ চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য এখনও US food and drug administration-এর ছাড়পত্র পায়নি। ভারতে আপাতত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের স্তরে রয়েছে এই ওষুধটি।
গত বছর এই গবেষক দলটি সার্স কোভিডের আরও একটি প্রোটিনের সন্ধান পেয়েছিলেন যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। সেই ক্ষতি এড়ানোর জন্য একটি ওষুধ কার্যকরী, সেটিও গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন তারা।
আরও পড়ুন: আমেরিকায় নির্বাচিত অরুণা মিলার, কী যোগ ভারতের সঙ্গে?