Expert On Yoga Common Myths And Facts: ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছর ২১ জুন পালন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস(International Day Of Yoga)। এই বিশেষ দিনটি উপলক্ষে এবিপি লাইভ বাংলায় এক্সক্লুসিভ আলাপে যোগাসনের নানা উপকারিতার কথা ব্যক্ত করলেন হাওড়া শিবপুর যোগ অঙ্গনের শিক্ষক শ্রী সৌরভশেখর কুণ্ডু। নানা বিষয় নিয়ে এই দিন খোলামেলা আলোচনা করলেন তিনি।


স্থিরম সুখম আসনম


মহর্ষি পতঞ্জলির হাত ধরেই প্রথম যোগব্যায়ামের সূচনা হয়। এর পর বিভিন্ন মুনিঋষিরা নানা সময় যোগাভ্যাসকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করেছেন। আজ বহু হাজার বছর পেরিয়েও সেই ধারা অক্ষুণ্ণ রয়েছে। সেই প্রাচীনকাল  থেকেই পালন যোগাভ্যাসের সঙ্গে জড়িয়ে একটি ‘বেদবাক্য’ - স্থিরম সুখম আসনম। অর্থাৎ অর্থাৎ স্থিরভাবে সুখে অবস্থান করার নাম আসন। অর্থাৎ সুখে থাকতে নীরোগ শরীর পেতে হলে এই অভ্যাস ছাড়লে চলবে না (International Day Of Yoga 2024)।



যোগ দিবসে নার্সদের যোগাভ্যাস (ছবি - PTI)


রোজকার জীবনে কেন যোগাসন প্রয়োজন ?


সৌরভবাবুর কথায়, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধি যেমন ঘাড়, হাঁটু, কোমরের ক্ষয় হতে থাকে। এছাড়াও, বয়স বাড়তে থাকা মানে নানারকম দায়িত্বও কাঁধে এসে পড়া। ফলে সবটা মিলিয়ে রোজকার জীবনের সঙ্গী হয়ে ওঠে নানারকম রোগযন্ত্রণা। এই রোগযন্ত্রণাকে যতটা সম্ভব দমিয়ে রাখে দৈনন্দিন জীবনের যোগাভ্যাস (Yoga Day 2024)।


বিভিন্ন অস্থিসন্ধির যন্ত্রণা কমাতে যে যে যোগ উপকারী


ঘাড়ের যন্ত্রণা - ঘাড়ের ব্যথায় অনেকেই কষ্ট পান। এই ব্যথা নির্মূল করতে পারে ভুজঙ্গাসন। এই ব্যায়াম (Yoga Benefits) নিয়মিত করলে স্পন্ডিলাইটিসের যন্ত্রণা থেকেও রেহাই পাওয়া সহজ। এছাড়াও, ঘাড়ের যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে অর্ধউষ্ট্রাসন। উষ্ট্রাসনে নামকরণের কারণ এই যোগাসনে শরীরের ভঙ্গি উটের মতো হয়। 


হাঁটুর যন্ত্রণা - যদি প্রতিদিন বজ্রাসন যোগব্যায়াম করা যায়, তাহলে অনেকটা উপকার হয় হাঁটুর। যাদের হাঁটুর ব্যথা খুব তীব্র নয়, এই ব্যায়াম তাদের জন্য। যাদের হাঁটুর ব্যথা বেশ তীব্র হয়েছে, তাদের জন্য অবশ্য উত্থানপদাসন করার পরামর্শ দিচ্ছেন সৌরভবাবু। তাঁর কথায়, এই ব্যায়ামটি করলে হাঁটুর উপর খুব চাপ পড়ে না। কিন্তু হাঁটুর উপকার হয়। 


পেটের সমস্যা থেকে রেহাই - পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন গ্য়াস, বদহজম, অম্বলে অনেকেই ভোগেন। এই সমস্যাগুলির থেকে রেহাই দিতে পারে একপদপবনমুক্তাসন, দ্বিপদপবনমুক্তাসন। 


ফুসফুস, হার্টের সমস্যা -  যাদের সিওপিডি অর্থাৎ ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ রয়েছে, শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমাজাতীয় সমস্যা হয়, তাদের জন্য সৌরভবাবু অর্ধকূর্মাসন ও মৎস্যাসন যোগাসনের পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, এই ধরনের ব্যায়াম কার্ডিয়োথোরাসিক সমস্যারও সমাধান খুঁজে দেয়।



ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের সামনে (ছবি - PTI)


যোগব্যায়ামের আগে কী কী করা উচিত (Yoga Necessary Rules) ?


ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ না করলেই নয় - যোগব্যায়াম (International Yoga Day 2024) শুরু করার আগে আমাদের কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন যোগ প্রশিক্ষক। তাঁর কথায়, এটি আবশ্যিক। যারা এটি মেনে যোগাসন (Yoga Health Benefits) করেন না, তাদের শারীরিক আঘাত বেশি লাগে। মিনিট দশেক ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ তাই অবশ্যই করে নেওয়া উচিত। এর মধ্যে হ্যান্ড রোলিং, হিপ রোলিং, ব্যাকওয়ার্ড ফরওয়ার্ড বেন্ডিং, টো টাচিং।


কেন জরুরি ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ (Yoga Common Myths And Facts) ?  কেন এই ব্যায়ামগুলি আগেভাগে করে নেওয়া উচিত ? সৌরভবাবু জানাচ্ছেন, এতে শরীরে রক্তের প্রবাহ অনেকটা বেড়ে যায়। ফলে শরীর কিছুটা ওয়ার্ম আপ বা গরম হয়। এছাড়াও, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বেশ নমনীয় হয়। যা যোগাসন করার সময় বিশেষভাবে জরুরি। কারণ তা না হলে শরীরের কোনও অংশে চোট লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যা থেকে অনেকে যোগাসনটি (International Yoga Day) তাঁর করা উচিত নয় বলে ভেবে বসেন। অর্থাৎ একটি ভুল ধারণার শিকার হন।


শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখা জরুরি -  ডায়নামিক কিছু এক্সারসাইজের থেকে যোগাসন অনেকটাই আলাদা বলে জানাচ্ছেন যোগ প্রশিক্ষক সৌরভ। তাঁর কথায় অনেকেই এই দুটিকে এক বলে ভাবেন। ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষেত্রে কিছু ভুল করে বসেন। সৌরভবাবুর মতে, যোগাসন করার সময় শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখা একান্ত জরুরি। এছাড়াও, শ্বাসপ্রশ্বাস কিছুটা সময় ধরে রাখাও জরুরি বলে জানাচ্ছেন তিনি।


যেমন ধরা যাক, পবনমুক্তাসন প্রথমে ডান পায়ে,তার পর বাম পায়ে ও সবশেষে দুই পায়ে করা উচিত। এটা করতে গিয়ে অনেকেই ডায়নামিক মুভমেন্ট করে ফেলেন। অর্থাৎ ডান পা করে সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিয়ে বাম পায়ে ব্যায়ামটি করেন। এতে কিন্তু যোগাসনের আসল নিয়ম মানা হয় না। সৌরভবাবুর পরামর্শ, প্রথমে ডান পায়ে পবনমুক্তাসন করে কিছুক্ষণ স্থির থাকতে হবে। এর পর বাম পায়ে পরের ব্যায়ামটি করতে হবে।


যোগব্যায়ামের সেরা সময় (Best Time For Yoga)?


সকালের প্রথম প্রহর -  সকালেই অধিকাংশ মানুষ যোগব্যায়াম। কিন্তু এটিই কি সেরা সময় ? যোগ প্রশিক্ষক সৌরভ এই প্রসঙ্গে বললেন, সকালে যোগব্যায়াম করলে আমরা অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা ও শুদ্ধ বাতাসটা নিশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু এটাও ঠিক যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শহরাঞ্চলের চেহারা পাল্টেছে। এখানে শুদ্ধ বাতাস বিরল বললেই চলে। তবুও দিনের অন্যান্য সময়ের তুলনায় সকালের সময়টা বেশি ভাল বলেই জানাচ্ছেন তিনি। 


বেলার দিকে যোগাসন - এছাড়াও, বেলার দিকে ১০-১১ টার সময়েও যোগাসন করা যেতে পারে। অর্থাৎ যারা ঘুম থেকে একটু দেরিতে ওঠেন, তাদের জন্য এই সময়টা মোটেই খারাপ নয়।


বিকেলের দিকে যোগাভ্যাস - দুপুরের দিকে যোগাভ্যাস না করাই ভাল। তাঁর কথায় দুপুরের খাবার খাওয়ার অন্তত তিন-সাড়ে তিন ঘন্টা পর যোগব্যায়াম করা উচিত। অর্থাৎ সেই ক্ষেত্রে বিকেলের সময়টি শরীরের জন্য ভাল। তা না মানলে শরীরের সমস্যাও হতে পারে বলে মন সৌরভের। 


রাতে নৈশভোজের আগে - রাতের দিকেও যোগাসন করার পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত বলেই জানাচ্ছেন সৌরভবাবু। তাঁর কথায়, রাতের সেরা সময় নৈশভোজের আগে যোগব্যায়াম অভ্যাস করা। সন্ধ্যের জলখাবার অল্প পরিমাণে খেয়ে তাঁর এক ঘন্টা পর যোগব্যায়াম করা যেতে পারে। অফিস থেকে ফিরে এভাবেই নিজেকে সুস্থ অভ্যেস নিযুক্ত করা যেতে পারে।



দিল্লিতে যোগাসন অভ্যাসের একটি দৃশ্য (ছবি - PTI)


যোগাসন খালি পেটে না ভরা পেটে (Yoga Rules) ?


যোগ প্রশিক্ষক সৌরভশেখর কুণ্ডুর কথায়, যোগাসন মোটেই খালি পেটে করা ঠিক নয়। খুব সামান্য কিছু খাবার হলেও খাওয়া উচিত। কী কী খাবার খাওয়া যেতে পারে তারও একটি তালিকা করে দেন তিনি। তাঁর কথায়, যোগাসন করার আগে ভেজানো ছোলা খাওয়া যেতে পারে। এতে অনেকটা এনার্জি পাওয়া যায়। এছাড়াও, বিস্কুট খেলেও কিছুটা এনার্জি পায় শরীর।


যোগব্যায়ামে কীভাবে একাগ্রতা অর্জন করা সম্ভব ?


মূলত ধ্যানাসন পর্যায়ের যোগাসনগুলিই একাগ্রতা আনার চাবিকাঠি বলে জানাচ্ছেন যোগ প্রশিক্ষক। তাঁর কথায়, পদ্মাসন, সুখাসন, সিদ্ধাসন, বজ্রাসন এগুলিই প্রধানত ধ্যানাসন। এই আসন করার সময় আমরা চোখ বুজে থাকি সাধারণত। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর এই ধরনের যোগাসন থেকেই একাগ্রতা বাড়ানো যায়। তবে একদিনে ফল পাওয়া যাবে, তেমনটা ভাবলেও ভুল ভাবা হবে। ধরা যাক, আজই পদ্মাসনে বসে থাকলাম কিছুক্ষণ। এতেই যে একাগ্রতা আসবে, তা নয়। কিন্তু রোজ এটি অভ্যাস করলে একাগ্রতা আসবেই।


শুধু ২১ জুন নয়


শুধুমাত্র ২১ জুন বলেই যোগাসন নয়। রোজকার জীবনের সঙ্গে এটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে নেওয়া উচিত বলেই মনে করেন সৌরভবাবু। তাঁর কথায় ২১ জুনের পর ২২,২৩ জুন যোগাসন না করে পরের বছর আবার ২১ জুন যোগাভ্যাস করলে ফল পাওয়া যাবে না। তাই খাওয়া, শোওয়া, ঘুমোনো,অফিস যাওয়া, সিনেমা দেখার মতোই রোজকার রুটিনে যোগাসনটিকেও স্থান দিতে হবে।


আরও পড়ুন - Diabetes Food Myth vs Reality: ‘এই খেয়ো না, সেই খেয়ো না’ - ডায়াবেটিস কি আদৌ এতো বাধানিষেধের রোগ ?


আপনার পছন্দের খবর এবার হোয়াটসঅ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে।