কলকাতা: রঙিন সুতোয় তৈরি সেই সব ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের কথা মনে আছে? বন্ধুর হাতে পরিয়ে দেওয়ার জন্য কত দিন আগে থেকে চলত তোড়জোড়। যার হাতে যত বেশি ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড, তার বন্ধু তত বেশি। ছোটবেলায় বন্ধুত্বের হিসেব এতটা সরল থাকলেও ধীরে ধীরে সব সম্পর্কের মতো এর মানেও পাল্টে যায়। ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের থেকেও তখন দামি হয়ে ওঠে মুহূর্ত। আনন্দের মুহূর্ত হোক বা ভেঙে পড়ার সময়, বন্ধু মানে তখন কাঁধে একটা ভরসার হাত। এমনই সম্পর্ক উদযাপনের জন্য পালিত হয় আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস (International Friendship Day)।
কবে ও কী ভাবে?
সাধারণ ভাবে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস পালন হয়ে থাকে ৩০ জুলাই। তবে ভারত, বাংলাদেশ, আমেরিকা-সহ একাধিক দেশে অগাস্টের প্রথম রবিবারটি বন্ধুত্ব উদযাপনের জন্য নির্ধারিত। চলতি বছর তাই ভারত-সহ এই দেশগুলিতে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস পালিত হবে ৬ অগাস্ট। অর্থাৎ দেশ-কাল ভেদে বন্ধুত্ব উদযাপনের দিনটা হয়তো আলাদা হতে পারে। কিন্তু বন্ধু মানে যে নির্ভরযোগ্য কাছের মানুষের ছবিটা ফুটে ওঠে সেটা দেশ-কাল নির্বিশেষে একই রকম। অনেকের অবশ্য় প্রশ্ন, যা একান্তই মনের ব্যাপার, তা আবার উদযাপনের দরকার কেন? সেই জন্য ফেরত চলে যেতে হবে ২০১১ সালে। ওই বছরই রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস উদযাপনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির মানুষ যাতে একে অন্যের দিকে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন, সেটিই ছিল এই উদ্যোগের লক্ষ্য। রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে, এখনও বিশ্বের নানা প্রান্তে দারিদ্র্য, মানবাধিকার লঙ্ঘন, শোষণের মতো ঘটনা ভূরি ভূরি ঘটে চলেছে। এমন আবহে পারস্পরিক বিশ্বাস ও ভরসার বাতাবরণ তৈরি করতে এই আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস উদযাপন। সেই ভেবেই দিনটিকে স্বীকৃতি দিয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। মূল লক্ষ্য একটাই। হিংসা ও সংঘাতের পরিবেশ পাল্টে দিয়ে শান্তি নিয়ে আসা। বন্ধু ছাড়া আর কে-ই বা এই কাজ সবচেয়ে ভাল করতে পারে?
শুরুর কথা...
অনেকের মতে, বন্ধুত্ব উদযাপনের আদত ইতিহাস অবশ্য় মোটেও সুখকর নয়। সালটা ১৯৩০। জয়েস হল নামে এক শিল্পপতি প্রস্তাব দিলেন, প্রত্যেক বছর ২ অগাস্ট বন্ধুরা একে অন্যকে কার্ড ও উপহার দিয়ে নিজেদের সম্পর্ক উদযাপন করবেন। প্রস্তাবটি শিল্পপতিদের একাংশের মধ্যে সাদরে গৃহীতও হল। কিন্তু সমাজের বড় অংশের মানুষ মনে করলেন, এটি আসলে বন্ধুত্ব উদযাপনের আড়ালে ব্যবসা বাড়ানোর কৌশল। এর ঠিক পাঁচ বছর পর, অর্থাৎ ১৯৩৫ সালে মার্কিন কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত হয়, বন্ধুত্বের জন্য একটি দিন উদযাপন করা হবে। বিশ্বের বহু মানুষ তখনও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাত বয়ে চলেছেন। এমন আবহে পারস্পরিক ভরসা ও বিশ্বাসের পরিবেশ ফেরাতেই এই সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন কংগ্রেস। সেই সিদ্ধান্ত কতটা ফলপ্রসূ হয়েছিল, তা নিয়ে তর্ক থাকছেই। তবে পরে ২০১১ সালে কার্যত একই যুক্তি শোনা গিয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার সিদ্ধান্তেও।
বন্ধুত্বের জন্য একটি দিন বরাদ্দ রেখে আদৌ ভরসার পরিবেশ তৈরি করা যায় কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে ঠিকই। কিন্তু যে উৎসাহে বিশ্বের নানা দেশ দিনটি উদযাপন করে তা চোখে পড়ার মতো। ভারতও ব্যতিক্রম নয়। এ দেশে বন্ধুত্বের দিন পালিত হয় অগাস্ট মাসের প্রথম রবিবার। অর্থাৎ আর কয়েক দিন বাকি। বন্ধুর জন্য কী করবেন ঠিক করেছেন তো?
আরও পড়ুন:বর্ষায় আবারও ডেঙ্গির প্রকোপ, এক শয্যায় দুই রোগী, ভিড় বাড়ছে জেলার হাসপাতালগুলিতেও