নয়াদিল্লি: ঘুম মানুষের জীবনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ (one third) জুড়ে থাকে, বা প্রত্যেক রাতের হিসেবে ৮ ঘণ্টা। মানুষের কেন ঘুম (necessity of proper sleep) প্রয়োজন, তার অজস্র কারণ রয়েছে। এর মধ্যে স্মৃতির একত্রীকরণ, শক্তি সঞ্চয় এবং পুনরায় নিজেকে সতেজ করে তোলা, সবই অন্তর্ভুক্ত। ফলে ঘুম যে মানব শরীরে অত্যন্ত জরুরী, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু যদি পরিমিত বা পর্যাপ্ত ঘুম (Sleep Deprivation) না হয়, তাহলে? রোগ দেখা দিতে পারে? কোনও শারীরিক বা মানসিক সমস্যা হতে পারে?


পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব কী সমস্যা তৈরি করে?


শারীরিক সুস্থতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, মানসিক এবং জ্ঞানীয় সুস্থতার জন্য, পর্যাপ্ত ঘুম পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক মার্কিন সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ৩০ শতাংশই ঘুমের অসুবিধার শিকার। ঘুমের পরিমাণ কমলে সেই সঙ্গে একগুচ্ছ অসুস্থতাও আসে। যেমন, স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে অমনযোগী হওয়া, বিলম্বিত স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, দুর্ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাওয়া, মানসিক অসুস্থতা যেমন ড্রাগ সেবন, ডিপ্রেশন, উদ্বেগে থাকা, এমনকী গর্ভাবস্থাতেও একাধিক সমস্যার সম্ভাবনা তৈরি হয়।


কম ঘুম বা ঘুমাতে না পারার জন্য কর্মক্ষেত্রে ঠিক করে পারফর্ম করতে না পারলে তা মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে, যার ফলে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক অর্থাৎ অন্যান্যদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল রাখতে অসুবিধা করতে পারে। কর্মক্ষেত্রে যা কাজের পরিবেশ নষ্ট করে, কাঙ্ক্ষিত আউটপুটের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। কাজের ক্ষেত্রে তখন উদ্বেগ ও ডিপ্রেশন জাঁকিয়ে বসে। 


ধীর প্রতিক্রিয়ার সময় গুরুতর আঘাত, স্থায়ী অক্ষমতা, এবং বাড়িতে, কর্মক্ষেত্রে এবং রাস্তার পাশে সংঘর্ষে মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়ায়। 


ঘুম কম অর্থাৎ ইনসমনিয়া শুধু শারীরিক অসুস্থতাই নয়, বয়ে আনে ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, মাদক সেবনের মতো মানসিক সমস্যাও। অনিদ্রা এবং মানসিক অসুস্থতা বিপরীতভাবে সম্পর্কযুক্ত, এবং নিজের পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করার জন্য একইসঙ্গে উভয় পরিস্থিতির চিকিত্সা করা অপরিহার্য।


ড্রাগ বা মাদক সেবন, অনিদ্রা দুইয়ের সঙ্গেই মানসিক অবস্থার সম্পর্ক রয়েছে। অনেকেই এমন আছেন যাঁদের অনিদ্রার সমস্যা আছে, সেই সঙ্গে তাঁরা মাদক সেবনও করেন প্রবল পরিমাণে। অনেকক্ষেত্রেই তাঁরা হয়তো 'ভুলে'ই গেছেন যে সিডেটিভ বা ওষুধ ছাড়া ঘুমোতে কীভাবে হয়। 


পর্যাপ্ত ঘুম না হলে হৃদরোগ এবং হাইপারটেনশনের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। করোনারি হার্ট ডিজিজ, বুক ধড়ফড়, বা হৃদযন্ত্রের হঠাৎ কাজ বন্ধ করে দেওয়া, এই সমস্তই হতে পারে অপর্যাপ্ত ঘুম হলে। এছাড়া সুগার, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের আশঙ্কা বাড়ে। দুই ক্ষেত্রেই এগুলোর সঙ্গে শরীরে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও চাপ পড়তে পারে। ঘুম কম হওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে, যার জেরে বারবার ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা বাড়ে, বা কোনও রোগ থেকে সেরে উঠতে বেশি সময় লাগে। 


আরও পড়ুন: Tips For Parents: সহজে মিশতে বা বন্ধু তৈরিতে সন্তানের অনীহা? অভিভাবকদের জন্য রইল কিছু টিপস


ঘুম কম হলে আরও একটি সাংঘাতিক সমস্যা হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় একাধিক জটিলতা তৈরি করতে পারে অপর্যাপ্ত ঘুম। এর ফলে, নির্ধারিত সময়ের পূর্বে সন্তান জন্ম দেওয়া, সি-সেকশন হওয়া, লেবরের সময় বেশি যন্ত্রণার আশঙ্কা বাড়ে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় ডিপ্রেশন হতে পারে বা সন্তানের ওজন কম হতে পারে। 


(ডিসক্লেইমার : কপিতে উল্লেখিত দাবি, পদ্ধতি পরামর্শস্বরূপ। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপদ্ধতি ফলো করার জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ / চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ও সেইমতো নিয়ম মেনে চলুন।)