টোকিয়ো: অতিমারি (COVID Pandemic) সঙ্গে নিয়ে দু’বছর কাটতে চলল। কিন্তু ডেল্টা, ওমিক্রনের (COVID Variant Omicron) মতো যে ভাবে একের পর এক করোনাভাইরাসের নয়া রূপ সামনে আসছে, তাতে এখনই প্রকোপ কাটার কোনও লক্ষণ দেখছেন না গবেষকরা। এমন পরিস্থিতিতে করোনা পরীক্ষাবাবদ সাধারণ মানুষের খরচ বাঁচানোর উপায় বার করলেন জাপানের একদল গবেষক। উটপাখির কোষ ব্যবহার করে বিশেষ ধরনের মাস্ক (COVID-19 Detecting Mask) তৈরি করেছেন তাঁরা, যা অতিবেগুনি রশ্মির নীচে ফেললেই বোঝা যাবে, মাস্ক পরিহিত ব্যক্তি করোনায় সংক্রমিত কি না।
পশ্চিম জাপানের কিয়োতো পারফেকচুরাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই বিশেষ মাস্ক তৈরি করেছেন। এতে কম খরচে বাড়িতেই করোনা পরীক্ষা হয়ে যাবে বলে দাবি তাঁদের। এমনিতেই পাখিদের ভাইরাস প্রতিরোধী ক্ষমতা বেশি। উটপাখি আবার এ ব্যাপারে সবার থেকে এগিয়ে। তাই তার শরীর থকে সংগ্রহ করে, মাস্কের ফিল্টারটি তৈরি করা হয়েছে। মাস্ক পরে কিছু ক্ষণ থাকার পর সেটি অতিবেগুনি রশ্মির (Ultra Violet Ray) নীচে ফেললে সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস (COVID-19) রয়েছে কি না বোঝা যাবে।
কিয়োতো পারফেকচুরাল ইউনিভার্সিটির পশু চিকিৎসার অধ্যাপক তথা ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ইয়াসুহিরো সুকামোতো এবং তাঁর সহযোগীরা এই মাস্ক আবিষ্কার করেছেন। সুকামোতো জানিয়েছেন, উটপাখি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা করছেন তিনি। তাদের শরীর থেকে অ্যান্টিবডি সংগ্রহ করে বার্ড ফ্লু, অ্যালার্জি এবং সংক্রমিত রোগ প্রতিরোধের চেষ্টায় গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কোভিডের ক্ষেত্রেও উটপাখির অ্যান্ডিবডি (Ostrich Antibody) ব্যবহার করে প্রথমে নিজের জন্য একটি মাস্ক তৈরি করেন সুকামোতো। তাতে কোভিড ধরা পড়ে তাঁর। তার পর নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠালে দেখা যায়, সত্যিই সত্যিই কোভিডে সংক্রমিত হয়েছেন তিনি। তাতেই সার্বিক ব্যবহারের জন্য ওই মাস্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
হাতেনাতে মাস্কটির কার্যকারিতা প্রমাণে কিছু মানুষকে নিয়ে পরীক্ষারও আয়োজন করেন গবেষকরা। তাতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সকলকে ওই মাস্ক পরানো হয়। আট ঘণ্টা পর সেগুলি নিয়ে পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথমে মাস্ক থেকে ফিল্টার খুলে আলাদা করে নেন গবেষকরা। তার উপর রাসায়নিক তরল ছিটিয়ে সেটিকে অতিবেগুনি রশ্মির নীচে রাখেন। তাতে সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত মাস্কের নাক এবং মুখের কাছটা চকচক করতে দেখা যায়। তাতেই মাস্ক পরিহিত ব্যক্তি কোভিড আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হন গবেষকরা। পরে পরীক্ষা করাতেও রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তবে মাস্কটিকে আরও উন্নত, সহজলভ্য করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন গবেষকরা। অতিবেগুলি রশ্মির পরিবর্তে যাতে সংক্রমণের হদিশ মিললে আপনা আপনি মাস্কটি চকচক করে ওঠে, তার চেষ্টা চলছে।