নয়াদিল্লি: ছত্রাক সংক্রমণ। এই বিষয়টিই এখন চিন্তায় ফেলছে বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীদের। কিন্তু কেন? এখন একাধিক ছত্রাকনাশক ওষুধ রয়েছে, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। তাও কেন উদ্বেগ ছত্রাক নিয়ে? বিষয়টি খোলসা করে জানিয়েছে খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। 


বিপজ্জনক ছত্রাকের তালিকা:
এই প্রথম একটি তালিকা তৈরি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেখানে ১৯টি ছত্রাক (Fungi) প্রজাতির নাম রয়েছে। যেগুলি বিশ্বের জনস্বাস্থ্য়ের উপর বিপদ আনতে পারে। এই তালিকার নাম WHO fungal priority pathogens list (FPPL). যা এই প্রথম তৈরি করা হল। ফাঙ্গাল প্যাথোজেন চিনে তা কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, সেই প্রভাব রুখতে কী কী স্তরে গবেষণা করতে হবে, তারই সামগ্রিক একটি চিত্র তুলে ধরতেই এই তালিকা। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি (University of Sydney)-এর নেতৃত্বে হওয়া একটি গবেষণার উপর নির্ভর করেই এই রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। 


তালিকায় তিন ভাগ:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই তালিকায় তিনটি ভাগে ছত্রাক প্রজাতিগুলিতে রাখা হয়েছে। একটি গুরুতর (Critical), উচ্চ গুরুত্ব (High), মাঝারি (Medium). কোভিডের সময় যে মিউক্রোমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের কথা শোনা গিয়েছিল, সেই ছত্রাকের গ্রুপ মিউকোব়্যালস (Mucorales) রাখা হয়েছে High গ্রুপে। Critical গ্রুপে রয়েছে ক্যানডিডা আউরিস (Candida auris) যা ভীষণরকম ওষুধ প্রতিরোধী।


কেন উদ্বেগ:
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে যা যা তথ্য হাতে আসছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ক্রমশ ছত্রাকজনিত নানা রোগের ঘটনা বাড়ছে। এই রোগের ভৌগোলিক ক্ষেত্রও বাড়ছে, অর্থাৎ আরও বেশি এলাকায় এর প্রকোপের দেখা মিলছে। এর জন্য সবার আগে দুটি কারণকে দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা, প্রথমটি বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming) এবং দ্বিতীয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে বাণিজ্য এবং যাতায়াত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোভিড মহামারি চলাকালীন এমন বহু ঘটনা দেখা গিয়েছে যে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর দেহের অভ্যন্তরে ছত্রাক সংক্রমণ ঘটেছে। এছাড়া উদ্বেগের আরও কারণ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, যে যে ছত্রাক সাধারণত প্রায়শই ত্বকে সংক্রমণ ঘটায়, সেগুলি আগের মতো প্রচলিত ওষুধ দিয়ে থামানো যাচ্ছে না।   


কাদের বেশি বিপদ:
ছত্রাক সংক্রমণের বিপদ সবারই রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই যাঁরা গুরুতর অসুস্থ, যাঁদের ইতিমধ্যেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তলানিতে এবং যাঁরা প্রসূতি বা অন্তঃসত্ত্বা। এদের ছত্রাক সংক্রমণের বিপদ অনেকটাই বেশি থাকে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।  ক্যানসার, এইচআইভি আক্রান্ত, শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর সমস্যা রয়েছে, কিডনির গুরুতর সমস্যা রয়েছে, টিবি আক্রান্তদের বিপদ বেশি। যাঁদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন রয়েছে, বড়সড় উদ্বেগ থাকে তাঁদের নিয়েও। 


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অ্যাসিস্টান্ট ডিরেক্টর জেনারেল (অ্য়ান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্ট) ড. হানান বালখি (Hanan Balkhy) বলেছেন, 'অ্যান্টিব্যাকটেরিয়ারোধী মহামারির উদ্বেগের মাঝেই দেখা যাচ্ছে ছত্রাকজনিত সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা ওষুধ দিয়ে সহজে দমানো যাচ্ছে না। এই ঘটনা সামগ্রিক বিশ্বের জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের।'  


কীভাবে রোধ:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মূলত ওষুধ দিয়ে ঠেকানো হয় এই সংক্রমণ। এখন বাজারে চার রকমের ছত্রাকনাশক ওষুধ পাওয়া যায়। আরও কিছু ওষুধ গবেষণার স্তরে রয়েছে।    


আরও পড়ুন:  দিনে ৫ ঘণ্টারও কম ঘুম? বিপদ আসবে, বলছেন গবেষকরা