নয়াদিল্লি: বছর ঘুরতে চলেছে দেখতে দেখতে। এখনও যুদ্ধ চলছে পশ্চিম এশিয়ায়। গাজায় লাগাতার আঘাত হেনে চলেছে ইজরায়েল। সেই আবহে যুদ্ধাপরাধ ঘটানোয় অভিযুক্ত ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির দাবি তুলেছেন আন্তর্জাতিক আপরাধ আদালত (ICC)-র মুখ্য কৌঁসুলি করিম খান। যুদ্ধ চলাকালীন গাজায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ঘটানোর অভিযোগ ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইওয়াভ গালান্তের বিরুদ্ধেও। তাঁর বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরায়োনা জারি করতে আবেদন জানিয়েছেন করিম। (Benjamin Netanyahu)


বিগত কয়েক দশকে বার বার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইন। গতবছর ৭ অক্টোবর ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ছোড়ে প্যালেস্তিনীয় সংগঠন হামাস। সেই থেকে এখনও যুদ্ধ চলেছে, যাতে নিরীহ প্যালেস্তিনীয়দের কচুকাটা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ইজরায়েলের বিরুদ্ধে। গাজা, ওয়েস্টব্যাঙ্কে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, হাসপাতাল, স্কুল, কিছু রক্ষা পায়নি। হাজার হাজার মানুষ তল্পিতল্পা গুটিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন, আবার যুদ্ধে হানাহানি চলাকালীন নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। (War Crimes in Palestine)


বার বার আন্তর্জাতিক মহলে শান্তির দাবি উঠলেও, এখনও পর্যন্ত যুদ্ধ থামেনি। বরং গাজাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার কথা বারং বার শোনা গিয়েছে ইজরায়েলের মুখে। সেই নিয়েই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধের মামলা উঠেছে। গাজায় হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়ে এবং হামাসের সশস্ত্র শাখার নেতা মহম্মদ দিয়াব ইব্রাহিম আল-মাসরির বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির করার আবেদন জমা পড়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে।


আরও পড়ুন: Israel-Hamas War: প্যালেস্তাইনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি তিন দেশের, পাল্টা হুঁশিয়ারি ইজরায়েলের


হানিয়ের বিরুদ্ধে বিনাশ, খুন, মানুষকে পণবন্দি করা, ধর্ষণ, বন্দিদশায় যৌন নির্যাতনের অভিযোগ জমা পড়েছে। নেতানিয়াহু এবং গালান্তের বিরুদ্ধে ধ্বংস, যুদ্ধজয়ের লক্ষ্যে মানুষকে অনাহারে রাখা, মানবিক সরবরাহে বাধাদান এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে নিরীহ নাগরিকদের নিশানা করার অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন করিম। ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের যে দীর্ঘ সংঘাতের ইতিহাস, তাতে এখনও পর্যন্ত ইজরায়েলি রাষ্ট্র প্রধানের বিরুদ্ধে এত গুরুতর অভিযোগ আগে ওঠেনি বলে দাবি কূটনৈতিক মহলের।


নেদারল্যান্ডসের হেগ-এ ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রতিষ্ঠা হয়। গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যুদ্ধপরাধের বিচারের জন্যই ওই আদালতে প্রতিষ্ঠা। এমনিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনস্থ নয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার সহযোগিতা পায় তারা। রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রেখেই কাজ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তবে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত (ICJ)-র চেয়ে আলাদা এই আদালত। ICJ রাষ্ট্রপুঞ্জেরই শাখা, যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ওঠে অভিযোগ খতিয়ে দেখে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে না।


আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নেতানিয়াহু এবং বাকিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে এনে মামলা দায়ের করেছেন। সেখানে তিন-চার জন বিচারপতির প্রি-ট্রায়াল চেম্বার রয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে কি না, সেখানেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। তাঁরা অনুমোদন দিলেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবে। এখনও পর্যন্ত যে ৩১টি মামলা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে, তার মধ্যে দু’টিতেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়নি।


কিন্তু গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেই কি নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করতে পারবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, এই প্রশ্নও সামনে আসছে। কূটনৈতিক মহল জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে, সদস্য দেশগুলির ক্ষেত্রে তা মেনে চলাই দস্তুর। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের নিজস্ব কোনও পুলিশ বাহিনী নেই। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি অন্য কোনও সদস্য দেশে পা রাখলে, সংশ্লিষ্ট দেশ তাঁকে গ্রেফতার করতে পারে। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হতে পারে হেগ-এ অবস্থিত বন্দিশিবিরে। তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়, শুরু হয় সাজাদানের প্রক্রিয়া।


আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য দেশের সংখ্যা ১২৪। কিন্তু রাশিয়া, চিন, আমেরিকার সদস্যতা নেই।  কাতার সদস্য দেশ, যেখানে এই মুহূর্তে হানিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর। তবে গ্রেফতার হোন বা না হোন, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে, অভিযুক্তদের গতিবিধি সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য যে ১২৪টি দেশ, সেখানে পা রাখতে পারবেন না বেঞ্জামিন এবং গালান্ত। আর যদি গ্রেফতার হন এবং বিচারে দোষী সাব্যস্ত হন, সেক্ষেত্রে ৩০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। কিছু পরিস্থিতিতে আজীবন কারাবাসের নির্দেশও দেওয়ার বিধান রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, বলিভিয়া, জিবুতির মতো দেশ এর আগে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে। প্যালেস্তাইনে গণহত্যা এবং যুদ্ধপরাধের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তের দাবি জানিয়েছে।