অভিজিৎ চৌধুরী, করুণাময় সিংহ, মালদা: টুকলি করতে গিয়ে ধরা পড়ে শিক্ষকদের হাতে সাজা পাওয়ার ঘটনা বিরল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বরং টুকলিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে কেন, সেই দাবিই জোরাল হচ্ছে দিনে দিনে। এ বার মালদায় সেই নিয়েই তুলকালাম বাধল। স্কুলের চেয়ার-টেবিল তো ভাঙচুর করা হলই, প্রধান শিক্ষককে ধরে বেধড়ক মারের অভিযোগও উঠল ছাত্রদের বিরুদ্ধে। গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত স্কুল কর্তৃপক্ষ (HS Exam)।


পড়ুয়াদের একাংশের বিরুদ্ধে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছে


মালদা (Malda News) জেলার মোথাবাড়ি থানা এলাকার ঘটনা। বৃহস্পতিবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন ছিল। এ দিন ইংরেজি পরীক্ষা চলছিল রথবাড়ি হাইস্কুলে। সেখানেই তুলকালাম বাধে। পড়ুয়াদের একাংশের বিরুদ্ধে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাকে ঘিরে এ দিন দুপুরে তেতে ওঠে গোটা এলাকা। তুমুল উত্তেজনা ছড়ায়। 


স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ দিন দুপুরে স্কুলে তাণ্ডব চালান পরীক্ষার্থীদের একাংশ। ইংরেজি পরীক্ষা চলাকালীন টুকলি করতে বাধা দেওয়া হল কেন প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। রাগ গিয়ে পড়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং পাহারা থাকা শিক্ষকদের উপর। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে তাণ্ডবের মাধ্যমে। প্রথমে ক্লাসরুমের চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করা হয়। তার পর বেধড়ক মারধর করা হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষককে।


স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পরীক্ষার্থীদের একাংশের মারধরে ঠোঁট ফেটে গিয়েছে প্রধান শিক্ষকের। তাঁদের হাতে আহত হয়েছেন আরও এক শিক্ষক। উত্তেজনা থামাতে রথবাড়ি স্কুলের অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ছুটে আসেন। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। মুহূর্তের মধ্যে ক্লাসরুম লন্ডভন্ড করে দেন অভিযুক্ত পড়ুয়ারা। 


আরও পড়ুন: Civic Volunteers: আপাতত স্থগিত সিভিক ভলান্টিয়ারদের স্কুলে পড়ানোর সিদ্ধান্ত


পরীক্ষা কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সিভিক ভলান্টিয়ার এবং পুলিশ কর্মীরা। তাঁরাও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিছুতেই উত্তেজনা না থামায় এর পর খবর দেওয়া হয় মোথাবাড়ি থানায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। তার পর পরীক্ষার্থীদের একাংশ এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিশদ আলোচনা হয়। আলাপ আলোচনার মাধ্য়মে তার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। 


পরীক্ষার্থীদের হাতে আক্রান্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক সমন্বয় সরকার জানিয়েছেন, পরীক্ষা চলাকালীন কয়েক জন নকল করছিলেন। মোবাইল নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করেছিলেন বেশ কিছু পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার এক ঘণ্টার মধ্যে বিষয়টি জানতে পারেন তিনি। হাতেনাতে ওই ছাত্রদের ধরে ফেলেন তিনি। মেবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। সেই সময় যে পরীক্ষার্থীর হাতে নকলের কাগজ ছিল, তিনি উত্তেজনা তৈরি করেন। ইন্ধন জুগিয়ে বাকিদের তাঁর উপর হামলা করান। তাতেই শুরু হয় তাণ্ডব। 


খবর পেয়েই পুলিশ এবং প্রশাসনের কর্তারা স্কুলে ছুটে এসেছিলেন


অভিযোগ, মারমুখী কয়েক জন পরীক্ষার্থীর  দেখাদেখি  ক্লাসরুমের অন্য পরীক্ষার্থীরাও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তার পরেই তুমুল গোলমাল শুরু হয়।
 সমন্বয়বাবুর বক্তব্য, "এমন চলতে থাকলে আমরা নিরাপত্তাহীনতায বোধ করছি। কঠোর পুলিশি নিরাপত্তা ছাড়া এরকম ভাবে পরীক্ষা নেওয়াও আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।" যদিও ঘটনার খবর পেয়েই পুলিশ এবং প্রশাসনের কর্তারা স্কুলে ছুটে এসেছিলেন। তাঁদের হস্তক্ষেপেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে।