সৌমিক সাহা, লন্ডন: ব্রিটিশ পার্লামেন্টে (British Parliament) পণ্ডিত রবি শঙ্করের (Pandit Ravi Shankar) সুরের স্মৃতি। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের (Bangladesh War Of Liberation) ত্রাণ সংগ্রহের জন্য় নিউইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন স্কয়্য়ার গার্ডেনে একটি কনসার্টের আয়োজন করেছিলেন পণ্ডিত রবি শঙ্কর। সেই কনসার্ট কার্যত বদলে দিয়েছিল বাংলাদেশ যুদ্ধের গতিপথ। বাংলাদেশি লেখকের বইয়ের হাত ধরে সেই ইতিহাসই আবার আলোচিত হল ব্রিটিশ সংসদে।


কোথা থেকে আলোচনা?
সালটা ১৯৭১। একদিকে, মুক্তিযুদ্ধের জন্য় প্রাণপণ লড়াই করছে বাংলাদেশ, অন্য়দিকে, শরণার্থী শিবিরে বাঁচার জন্য় লড়াই চলছে। ভয়ঙ্কর সেই পরিস্থিতিতে, মূলত তহবিল সংগ্রহের জন্য়, বিখ্য়াত গীতিকার-গিটারিস্ট-গায়ক, বন্ধু জর্জ হ্য়ারিসনকে নিয়ে বিদেশের মাটিতে একটি কনসার্টের আয়োজন করেছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। নাম 'দ্য় কনসার্ট ফর বাংলাদেশ।' কে ছিলেন না সেই কনসার্টে! বব ডিলান থেকে এরিক ক্ল্যাপটনের মতো তারকারা অংশ নেন সেই অনুষ্ঠানে। প্রায় ৪০ হাজার শ্রোতা সমবেত হয়েছিলেন একটা বিপর্যস্ত দেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য়। একটা পারফর্ম্য়ান্স গোটা বিশ্বের কাছে চিরতরে বদলে দিয়েছিল বাংলাদেশ যুদ্ধের গতিপথ। যে আমেরিকা যুদ্ধে পাকিস্তানকে সাহায্য় করছিল, সেই দেশের মানুষই যুদ্ধের বিরোধিতায় সরব হন। আর সেই ঢেউ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। একটা কনসার্ট, মুক্তিযুদ্ধে যে অসামান্য় ভূমিকা নিয়েছিল, সেই ইতিহাস এবার উঠে এল ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অফ লর্ডসে! সৌজন্য়ে একটি বই, 'the concert for bangladesh 1971, united friends of bangladesh'। এই বইয়ের হাত ধরে, সেই সময়ের প্রেক্ষাপট উঠে আসে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপির মুখেও! এমপি লর্ড রেমি রেঞ্জার বলেন, 'সেই সময় বাংলাদেশে কী ঘটছে, গোটা বিশ্ব তা জানতে পেরেছিল। এটা অনুঘটকের কাজ করেছিল। এই কনসার্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণহত্যা, মানুষের যন্ত্রণার কথা তুলে ধরা হয়েছিল।' ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, ' এই বইটা ১৯৭১ -এর পণ্ডিত রবি শঙ্কর, তাঁর ২ জন বন্ধু মিলে করেন। রিফিউজি ফান্ড রেজ করার জন্য়।'  


বইটি সম্পর্কে... 
বইটির লেখক, আবু সঈদ ও প্রিয়জিৎ দেবসরকার। প্রিয়জিৎ বললেন, 'বছরদুয়েক আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বর্ণজয়ন্তীতে গবেষণা করতে গিয়ে দেখতে পাই, বাংলার বাইরে মুক্তিযুদ্ধের কী অবদান।সেখানেই খুঁজে পাই এই ধরনের মাইলফলক একটা ঘটনা ঘটেছিল।'  পরে মণীশ তিওয়ারিও বলেন, 'শুধু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নয়। এই কনসার্ট পাশ্চাত্য দেশগুলির কাছেও ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে পৌঁছে দিয়েছিল। ভারতীয় সঙ্গীত জগতকে সামনের সারিতে নিয়ে এসেছিল।' শোনা যায়, সেদিনের কনসার্ট থেকে তখনকার বাজারে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১১ লক্ষ টাকা উঠেছিলেন। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা, একটা কনসার্ট গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের ভয়াবহ ছবিটা। খাদ্য়াভাব, দুর্ভিক্ষ, নির্বিচারে গণহত্য়া...বিশ্বব্য়াপী একটা যুদ্ধ-বিরোধী গণমত তৈরি করেছিল এই কনসার্ট। প্রমাণ করেছিল, সঙ্গীতের শক্তি বা ক্ষমতা রাজনীতির থেকে অনেক অনেক বেশি। প্রায় ৫১ বছর পর, রবি শঙ্করের সেই কনসার্টের প্রতিধ্বনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অন্দর মহলে...।


আরও পড়ুন:হাওড়ায় অশান্তি নিয়ে অনুরাগ ঠাকুরের মন্তব্যে পাল্টা সুজনের, কটাক্ষ তৃণমূলকেও