কীসের ভিত্তিতে বিসর্জন-নিষেধাজ্ঞা? রাজ্যকে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট, কাল রায়দান
কলকাতা: বিসর্জন-নির্দেশিকা নিয়ে রাজ্যের তীব্র সমালোচনায় কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার শেষ হল শুনানি-পর্ব। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাকেশ তিওয়ারি ও বিচারপতি হরিশ টন্ডনের বেঞ্চে চলছিল শুনানি। এদিন রাজ্যের আইনজীবীর কাছে বিচারপতি জানতে চান, কীসের ভিত্তিতে বিসর্জনে নির্দেশিকা-নিষেধাজ্ঞা? ‘শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে সেটাই বা কী করে বুঝছেন ?’ বিচারপতি জানান, নির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া নিজের চিন্তাভাবনা অন্যদের ওপর চাপাতে পারেন না। এক্ষেত্রে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকেই হাতিয়ার করে উচ্চ আদালত। বিচারপতি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় আছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট হবে যদি এই অনুমান হয়ে থাকে, তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। রাকেশ তিওয়ারির যুক্তি, যদি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় থাকে, তাহলে কেন নিষেধাজ্ঞা ? বিচারপতির মতে, এসপি যদি মনে করেন যে শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে, তাহলে জেলাশাসককে জানাবেন। জেলাশাসক জানতে পারলে লিখিত রিপোর্ট দেবেন। আদালতের প্রশ্ন, সেই রিপোর্ট কোথায় ? হাইকোর্ট এদিন রাজ্যকে মনে করিয়ে দেয়, শাস্তি তখনই হবে যখন অপরাধ সংগঠিত হবে। শুধুমাত্র মাইক্রোফোনের ওপর আগে থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে না। এদিন রাজ্যের আইনজীবীর কাছে আদালত জানতে চায়, আপনি কী মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিতে পারেন ? যদি কোনও ঘটনা না ঘটে, তাহলে কেন দুই সম্প্রদায় একসঙ্গে উৎসব পালন করতে পারবে না ? বিচারপতি বলেন, আমার অনেক বন্ধু আছে যাঁরা হোলি, বকরি ইদ একসঙ্গে পালন করে। তিনি যোগ করেন, যদি সরকার মনে করে হাইকোর্টের ওপর উপগ্রহ ভেঙে পড়বে, তাহলে কী হাইকোর্ট খালি করতে বলবে সরকার ? আদালতের প্রশ্ন, যদি দশেরা ও মহরম একইদিনে পড়ত, তাহলে তখন কী করত সরকার ? হরিশ তিওয়ারি বলেন, নিষেধাজ্ঞার আড়ালে অপদার্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে সরকার। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের কথা বলে আপনারা কী দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছেন না ?, মন্তব্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাকেশ তিওয়ারির। এদিন শুনানি শেষ হল। আগামীকাল বিসর্জন-মামলার রায় ঘোষণা করবে হাইকোর্ট। উচ্চ আদালত কী রায় দেয়, সেদিকেই তাকিয়ে সব পক্ষ।