দেহরাদূণ: কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনল পরিবার। শীতের সকালে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুকে বার বার ডুব দেওয়ানো হল গঙ্গায়। তাতে বেঘোরে মৃত্যু হল ওই শিশুর। গঙ্গায় ডুব দিলে ক্যান্সার সেরে যাবে বলে বিশ্বাস জন্মেছিল পরিবারের সদস্যদের মনে (Cancer Cure)। সেই বিশ্বাস থেকেই সকাল সকলা কনকনে ঠান্ডায় গঙ্গায় বার বার ডুব দেওয়ান সকলে মিলে। আশপাশ থেকে সকলে বারণ করলেও, কথা শোনেনি তাঁরা। তাতেই মর্মান্তিক পরিণতি হল। পরিবারের সদস্যদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। (Haridwar News)


উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারের হর কি পউরি এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। ওই পরিবার আসলে দিল্লির বাসিন্দা। পাঁচ বছর বয়সি ওই বালকটি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল। দিল্লির হাসপাতালে চিকিৎসা চলছি তার। কিন্তু সম্প্রতি সেখানকার চিকিৎসকরা হাত তুলে নেন। শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। অসহায় অবস্থায় এৎ পর আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারস্থ হন পরিবারের সদস্যরা। গঙ্গায় ডুব দিলেই রোগের নিরাময় হবে বলে ধারণা জন্মায় সেখান থেকেই। সেই মতো বুধবার সকালে দিল্লি থেকে গোটা পরিবার হরিদ্বারের উদ্দেশে রওনা দেয়। 


যে গাড়িতে চেপে ওই পরিবার রওনা দিয়েছিল, তার চালক পুলিশকে জানিয়েছেন, মা-বাবা এবং এক আত্মীয়ার সঙ্গে গাড়িতে ওঠে শিশুটি। অত্যন্ত অসুস্থ দেখাচ্ছিল তাকে। জানতে চাইলে, পরিবারের লোকজনই চালককে জানান, শিশুটি ক্য়ান্সারে আক্রান্ত। গঙ্গার জলে রোগের নিরাময় হওয়ার আসা নিয়েই হরিদ্বার যাচ্ছেন তাঁরা। সেই মতো হরিদ্বার পৌঁছে, সাতসকালে কনকনে ঠান্ডায় এদিন শিশুটিকে বার বার গঙ্গায় ডুব দেওয়ানো হয়। 



আরও পড়ুন: Ram Temple: রামমন্দিরের বিরুদ্ধে লড়েছেন মামলা, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়ে 'খুশি' ইকবাল, বললেন..


ঘটনাস্থল থেকে যে ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সাতসকালে ওই দৃশ্য দেখে চারপাশে ভিড় করেন সাধারণ মানুষ। শিশুটির পরিবারকে নিরস্ত করার চেষ্টাও করেন কেউ কেউ। কিন্তু কারও কথা শোনেননি পরিবারের লোকজন। বার বার শিশুটিকে জলে ডোবাতে এবং তুলতে থাকেন তাঁরা। একটা সময় আশপাশের লোকজনই জোর করে শিশুটিকে জল থেকে টেনে তুলতে যান। কিন্তু শিশুটির আত্মীয়া তাতে বাধা দেন। শেষ পর্যন্ত শিশুটিকে যখন জল থেকে তোলা হয়, তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। হাসপাতাবে নিয়ে গেলে শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।


সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও একটি ভিডিও সামনে এসেছে, যেখানে শিশুটির নিথর দেহের পাশে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে তাঁর আত্মীয়াকে। তাঁকে বলতে শোনা যায়, শিশুটির দেহে প্রাণ ফিরে আসা সময়ের অপেক্ষা। আবার দৌড়ে বেড়াবে আগের মতো। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় হরিতদ্বার পুলিশ। শিশুটিকে তারাই হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসকরাই শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করে। শিশুটির দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।


হরিদ্বার শহরের পুলিশ প্রধান স্বতন্ত্র কুমার জানিয়েছেন, শিশুটির ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু চিকিৎসকরা হাত তুলে নেন। জানিয়ে দেন, শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব নয়। তাতেই কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে পড়ে পরিবার। গঙ্গায় ডুব দেওয়ালেই রোগের নিরাময় হবে বলে বিশ্বাস জন্মায় তাঁদের মনে। দিল্লির যে হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল, সেখান থেকে রিপোর্ট তলব করেছে হরিদ্বার পুলিশ। শিশুটির মা-বাবা এবং ওই আত্মীয়াকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।