কলকাতা: কিছুদিন আগেই তিনটি ব়়াজ্য-রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ঝড়ের সামনে প্রায় খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে কংগ্রেস (Congress)। হাত-শিবিরের হাতে ছিল শুধুমাত্র তেলঙ্গানা। কংগ্রেসের এই হারের পরেই তৃণমূলের দিক থেকে ধেয়ে এসেছিল কটাক্ষের সুর। এই ঘটনায় বিজেপির (BJP) সাফল্যের বদলে কংগ্রেসের ব্যর্থতাকেই রাজনৈতিকভাবে নিশানা করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। তা নিয়ে উষ্মার স্বর শোনা গিয়েছিল কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরীর (Adhir Chowdhury) মুখে। এমনকী ফলপ্রকাশের পরেই I.N.D.I.A-জোটের বৈঠকও ভেস্তে যায়। তৃণমূল যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। বিরোধী জোটের (Opposition Unity) তথৈবচ অবস্থা দেখে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল এর ভবিষ্যৎ নিয়েও। ঠিক তখনই শুক্রবার মহুয়া মৈত্রের (Mahua Moitra) বহিষ্কার-ইস্য়ু ঘিরে কার্যত মাঠে নেমে ঐক্য দেখালেন বিরোধীরা। 


লোকসভার (Parliament) ভিতরে-বাইরে মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কারের বিরুদ্ধে তীব্র তোপ দাগলেন অধীর চৌধুরী। সংসদ কক্ষের বাইরে সাংবাদিক বৈঠকের সময়ে মহুয়ার সঙ্গেই দাঁড়িয়েছিলেন সনিয়া গাঁধী, অধীর চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধী জোটে একাধিক নেতা। লোকসভার অন্দরেও মহুয়া মৈত্রের হয়ে গলা ফাটিয়েছেন বিরোধী জোটে থাকা দলগুলির সাংসদরা। ছিলেন বিএসপি (BSP) সাংসদ দানিশ আলিও।  


মহুয়াকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া নিয়ে কার্যত ধুন্ধুমার বেঁধে যায় লোকসভায়। সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের পাশে দাঁড়িয়ে রিপোর্ট পড়ে দেখার জন্য তিন-চারদিন সময় চান অধীর চৌধুরী, মনীশ তিওয়ারিরাও। পাল্টা, ২০০৫ সালে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় স্পিকার থাকাকালীন ১১ সাংসদের বহিষ্কারের প্রসঙ্গকে হাতিয়ার করে বিজেপি। 


শুক্রবার মহুয়া-ইস্য়ুতে আলোচনার জন্য়, প্রথম বিরোধীদের বক্তব্য় শুনতে চান স্পিকার। প্রথম বলতে বলা হয়, অধীর চৌধুরীকে। এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পড়ে দেখার জন্য়, ও মহুয়াকে বলতে সুযোগ দেওয়ার জন্য় স্পিকারের কাছে আর্জি জানান তিনি। কিন্তু স্পিকার তা খারিজ করে দিন। এরপর সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্য়ায় সরাসরি দাবি তোলেন, নিজের সপক্ষে না হলেও, তৃণমূলের হয়ে বলতে দেওয়া হোক মহুয়াকে। 


৩-৪ দিন সময় দেওয়ার দাবি করেন কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারিও। তিনি বলেন, 'আকাশ ভেঙে পড়বে না, যদি আপনি ৩-৪ দিন সময় দেন। কারণ এটা অত্য়ন্ত সংবেদনশীল মামলা। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বক্তব্য় রাখার সুযোগ পেলেন না। এটা কী ধরনের ন্য়ায় প্রক্রিয়া?'


মহুয়া মৈত্রকে কথা বলতে দেওয়ার জন্য বারবার দাবি জানান সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদে অন্তত ১০ মিনিট মহুয়া মৈত্রকে কথা বলতে দেওয়ার জন্য আবেদন করেন তিনি। কিন্তু সেই আবেদন গ্রাহ্য করেননি স্পিকার। সংসদের পুরনো ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দেন তিনি।   


একাধিকবার উঠে দাঁড়াতে দেখা যায় মহুয়া মৈত্রকে। কিন্তু স্পিকার রাজি না হওয়ায় বসে পড়তে হয় তাঁকে। এরইমধ্য়ে মহুয়া মৈত্র ও কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে নিজেদের মধ্য়ে কথা বলতে শোনা যায়। এরপর মহুয়ার হয়ে ব্য়াট ধরেন তৃণমূল সাংসদ কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। তিনি বলেন, 'ফেয়ার ট্রায়াল তখনই হতে পারে, যখন আক্রান্তের কথাও শোনা হয়। আক্রান্তের কথা না শুনলে, সেটা ফেয়ার ট্রায়াল হয় না। তথ্য় প্রযুক্তি আইনে কোথায় বলা আছে, আইডি পাসওয়ার্ড দেওয়াটা অন্য়ায়? ক্রস এক্সামিন করতে দেওয়া হয়নি।' 


অবশেষে ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে যায় মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত।


আরও পড়ুন: পাহাড়ের সঙ্গে 'ব্লাড রিলেশন', উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী, কী কী রইল তাতে?