বালেশ্বর : লাশের স্তূপে দিশাহীন হয়ে বিচরণ। একের পর এক মৃতদেহগুলো থেকে সাদা কাপড় সরিয়ে খুঁজে পাওয়ার মরিয়া চেষ্টা। কান্না ভেজা চোখে বুক ফাটা 'মিলতা নেহি হে বেটা' তথা 'ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছি না' কথাগুলো নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের (Coromandel Express Tragedy) ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর গোটা দেশকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছিল যে দৃশ্যগুলো, তার মধ্যে অন্যতম এক হতভাগ্য বাবার ছেলেকে খুঁজে বেড়ানোর ভিডিও।


কেমন আছেন সেই বাবা ? ছেলেকে সেই সময় খুঁজে না পেলেও, পরে পেয়েছেন। তবে বড়ছেলের মৃতদেহ-ই পেয়েছেন ওড়িশার সুগো-র বাসিন্দা রবীন্দ্র সাহু। ছেলেকে হারিয়ে এখনও শোকে পাথর তিনি। কেমন আছেন সেই হতভাগ্য বাবা ? ঘটনা নিয়ে কী জানাচ্ছেন তিনি ? বাহানাগা বাজার স্টেশনের পাশে বাহানাগা হাইস্কুলে রাখা হয়েছিল মৃতদেহগুলি। সেখানেই ২ জুনের করমণ্ডল এক্সপ্রেসে সফররত গোবিন্দ সাহু-র মৃতদেহ খুঁজছিলেন রবীন্দ্র সাহু। ছেলেকে হারানো নিয়ে কান্না চেপে তাঁর বক্তব্য, 'ক্ষতিপূরণের টাকা তো পেয়েছি, কিন্তু সেগুলো কি বাবা বলে ডাকবে ?' 


সংবাদমাধ্যম এনটিটি রবীন্দ্র সাহু-র সুগোর বাড়িতে পৌঁছেছিল তাঁর সঙ্গে কথা বলতে। তাঁদের দেওয়া সাক্ষাৎকারে হতভাগ্য বাবা বলেছেন, বাড়ির একমাত্র উপার্জনকারী তথা আমার বড় ছেলে চলে গিয়েছে, আর কেমন থাকব ? তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর থেকেই টেলিভিশনের সামনে বসেছিলেন। প্রায় পঞ্চাশবার ফোন করেছিলেন ছেলের ফোনে। কিন্তু সে ফোন না ধরায় মনে ধরে গিয়েছিল আতঙ্ক। অনেক খোঁজার পর পরে পেয়েছি ছেলেকে। মৃতদেহ পেয়েছি।


পাশে বসে বুকফাটা কান্না সামলে রেখেছিলেন তাঁর স্ত্রী। তাঁকে দেখিয়ে রবীন্দ্র সাহু বলেন, এই বয়সকালে বড় ছেলেকে হারালাম, আর কীই বা খারাপ হতে পারে। রেল ১০ লক্ষ, ওড়িশা সরকার ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে, কিন্তু ওই টাকার কি ক্ষমতা রয়েছে বাবা বলে ডাকার ? সেটা তো ছেলেই বলতে পারত। তাই দুঃখ কাটিয়ে উঠতে পারিনি এখনও। ঘরের একমাত্র রোজগেরে ছিল। চলে গেছে ও। এখন বাকি ছেলে-মেয়েদের বড় করার দায়িত্ব ফের একা আমাকেই সামলাতে হবে। খাওয়া-দাওয়া করতেও ভাল লাগে না মাঝে মধ্যে। বড় ছেলের স্ত্রী ও ছোট বাচ্চাও রয়েছে। তাঁদেরকেও দেখার দায়িত্ব আপাতত হতভাগ্য বাবার কাঁধেই।


আরও পড়ুন- ভূতের ভয়ে কাঁটা পড়ুয়ারা, ভয় কাটাতে ভেঙে ফেলা শুরু হল বাহানাগা হাইস্কুলের প্রাথমিক বিভাগের বিল্ডিং


কান্না সামলে রবীন্দ্র সাহু-র বক্তব্য, কী আর করা যাবে। শুধু আমার ছেলেকে তো হারায়নি, হাজারও মানুষ চলে গিয়েছেন। প্রসঙ্গত, করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ জন মারা গিয়েছেন। জখম হন হাজারের বেশি মানুষ। এদিকে, যে জায়গায় রাখা ছিল মৃতদেহের স্তূপ, সেই বাহানাগা হাইস্কুল ভেঙে ফেলা হয়েছে।






আরও পড়ুন: শেষপাতে সুস্বাদু ডেজার্ট, আম দিয়ে চটজলদি বাড়িতেই তৈরি আইসক্রিম