নয়াদিল্লি: পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Elections 2024) আগেই সিলমোহর পড়তে পারে বলে জল্পনা শোনা যাচ্ছিল। সেই মতোই কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেল তথ্যসুরক্ষার নতুন বিল। বিলের খসড়া অনুমোদন পেল। আগামী ২০ জুলাই থেকে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হচ্ছে (Monsoon Session)। সেখানেই সেটি উপস্থাপিত করা হতে পারে। তবে তত ক্ষণ পর্যন্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে (Data Protection Bill)। 


এর আগে যে তথ্যসুরক্ষা বিল আনা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল কেন্দ্র। তাতে জাতীয় নিরাপত্তার নামে সাধারণ নাগরিকের আর্থিক লেনদেন থেকে ব্যক্তিগত তথ্য, কাকে ফোন করছেন, কার সঙ্গে কী কথা বলছেন, ডিজিটাল দুনিয়ার গতিবিধি, সবকিছুর উপর নজরদারিতে ছাড়পত্রের সুপারিশ করা হয়। বলা হয়, সরকার বা তার কোনও সংস্থা চাইলে সেই তথ্য মজুত রাখতে পারে। ব্যবহার করা যেতে পারে প্রয়োজনে।


সেই বিলটির তীব্র বিরোধিতা করে কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। ২০১৭ সালে মামলা পৌঁছয় সুপ্রিম কোর্টেও। সেই সময় দেশের শীর্ষ আদালতও বিলটির সমালোচনা করে। নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয় আদালত। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ফের  সেই বিলকে আইনে পরিণত করতে উদ্যোগী হয়েছে মোদি সরকার।


ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল, ২০২২-এর একটি খসড়া গতবছর নভেম্বরেই প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সাধারণ মানুষের তথ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মুছে ফেলতে হবে, নইলে ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে।  তবে কেন্দ্রীয় সরকার বা তার অধীনস্থ কোনও সংস্থাকে সেই গোত্রে রাখা হয়নি। সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য তথ্য় মজুত রাখতে পারে বলে জানা হয়। 


আরও পড়ুন: Chandrayaan 3 News:শেষ পর্যায়ে প্রস্তুতি, ১২-১৯ জুলাইয়ের মধ্যেই কি রওনা দেবে চন্দ্রযান-৩?


নয়া বিলের খসড়ায় সেই প্রস্তাব রেখে দেওয়া হয়েছে, নাকি বাদ দেওয়া হয়েছে, সেই সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা মেলেনি। কারণ বিলটিকে নিয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করছে কেন্দ্র। তবে বিভিন্ন সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বিতর্ক এড়াতেই গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং তার অধীনস্থ সংস্থাগুলির হাতে সাধারণ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের উপর অবাধ নিয়ন্ত্রণ ঘিরে তাই আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।


এই নয়া বিল আইনে পরিণত হলে, দেশের অন্দরে তো বটেই, এ দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া তথ্যের উপরও অবাধ নিয়ন্ত্রণ থাকবে কেন্দ্রের। তাতে অন্য় দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কের উপরও প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্গত দেশগুলির সঙ্গে। এর পাশাপাশি, প্রযুক্তি সংক্রান্ত নীতি-নিয়মের ক্ষেত্রেও বিলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল, ২০২২-এর অংশ ডিজিটাল ইন্ডিয়া বিলও, যা কিনা আদতে ২০০০ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের উত্তরসূরি। আবার ইন্ডিয়ান টেলিকমিউনিকেশন বিল ২০২২ এবং ব্যক্তিগত তথ্যের বাইরে নজরদারি চালানোর প্রস্তাবিত নীতিও রয়েছে।


২০২২ সালের অগাস্ট মাসে সংসদ থেকে তথ্যসুরক্ষা বিলের আগের খসড়া প্রত্যাহার করে নেয় কেন্দ্র। সংসদের যৌথ কমিটিতে বিলটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিরোধী দলের প্রতিনিধিরাও তীব্র বিরোধিতা করেন বিলটির। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও সেই নিয়ে সরব হয়েছিল। আবারও বিলটির নয়া খসড়া ঘিরে আশঙ্কা মাথাচাড়া দিচ্ছে। কারণ আগের সুপারিশগুলির কোনওটিই নয়া খসড়া থেকে বাদ দেওয়া হয়নি বলে দিল্লির একটি সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং অন্য সরকারি সংস্থার সাধারণ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য়ের উপর নজরদারি চালানো এবং সর্বোপরি জাতীয় নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে সেই তথ্য ব্যবহার কোনও ভাবেই কাম্য নয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।


তথ্যসুরক্ষা বিলে যে ডেটা প্রোটেকশন বোর্ডের সুপারিশ ছিল, যার আওতায় কেন্দ্রীয় সরকারের নিযুক্ত লোকজনের হাতে বিধিনিয়ম থেকে শর্তাবলী ন্যস্ত রাখার কথা বলা হয়। নয়া খসড়াতে তা-ও রেখে দেওয়া হয়েছে বেল খবর। শুধু তাই নয়, এই বিল আইনে পরিণত হলে তথ্য জানার অধিকার আইন (RTI)-এর গুরুত্ব লাঘব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।