নয়াদিল্লি: কাতারের আদালতে মৃত্যুদণ্ডের সাজা হওয়া আট ভারতীয়ের সাজা লাঘব হল। চরবৃত্তির অভিযোগে এ বছর অক্টোবর মাসে ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন আট কর্মীকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায় কাতারের আদালত। সেই থেকে লাগাতার কাতার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল ভারত। বৃহস্পতিবার শেষ মেশ বিবৃতি জারি করে, তাঁদের সাজা লাঘবের কথা জানানো হল। আদালতের রায়ের প্রতিলিপি এখনও সামনে আসেনি। তবে দোষী সাব্যস্ত ওই আটজনের সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কারাবাসে পরিবর্তিত হয়েছে বলে খবর। তবে এখনও এ নিয়ে বিশদ তথ্য হাতে আসেনি। (Qatar Death Penalty)
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, এখনও কাতারে আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। ধৃতদের পরিবারের সঙ্গেও রয়েছে যোগাযোগ। ভাবনাচিন্তা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। ধৃতদের গোড়া থেকেই সবরকমের আইনি সহযোগিতা জোগানো হয়েছে। ভারতীয় কনস্যুলেট সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। আগামী দিনেও কাতার সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলবে। (India Qatar Relations)
সম্প্রতি কাতারের শাসক শেখ তামিম বিন হামাদ-আল থানির সঙ্গে দুবাইয়ে সাক্ষাৎ হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। CoP28 সম্মেলনের ফাঁকে বিশদ আলোচনাও হয় তাঁদের মধ্যে। কী কথা হয় দু'জনের মধ্যে, তা যদিও প্রকাশ করা হয়নি। তবে ওই আট জনের মৃত্যুদণ্ডের প্রসঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে বলে খবর। বিদেশমন্ত্রকও লাগাতার কাতার সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল।
আরও পড়ুন: Sam Pitroda: '৪০০-র বেশি আসন পেতে পারে BJP', কেন একথা বললেন কংগ্রেস নেতা স্যাম পিত্রোদা ?
এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভারতের বন্ধুদেশ ইতালিও। অভিযোগ ছিল, দাহরা গ্লোবাল টেকনোলজিস অ্যান্ড কনসালটেন্সি সার্ভিসেস-এ কর্মরত থাকাকালীন কাতারের গোপন সাবমেরিন প্রকল্পের তথ্য ইজরায়েলকে সরবরাহ করছিলেন ওই আট ভারতীয়। শত্রুপক্ষের নজর বাঁচিয়ে, জলে লুকিয়ে থাকতে সক্ষম, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি ইতালীয় সাবমেরিন তৈরিতেও যুক্ত ছিল ওই সংস্থা। তাই বিষয়টিতে জড়িয়ে পড়ে ইতালিও। প্রাক্তন নৌসেনা আধিকারিক, ওই আট ভারতীয়ের মৃত্যুদণ্ড লাঘবে সচেষ্ট হয় ইতালিও। তারই সুফল মিলেছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিকমহল।
এ বছর অক্টোবর মাসে কাতারের আদালত ওই আট ভারতীয়কে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায়। অভিযোগ ছিল, দাহরা গ্লোবাল টেকনোলজিস অ্যান্ড কনসালটেন্সি সার্ভিসেস-এ কর্মরত থাকাকালীন কাতারের গোপন সাবমেরিন প্রকল্পের তথ্য ইজরায়েলকে সরবরাহ করছিলেন তাঁরা। যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড শোনানো হয়, তাঁরা হলেন প্রাক্তন নৌ আধিকারিক ক্যাপ্টেন নভতেজ সিংহ গিল, ক্যাপ্টেন সৌরভ বশিষ্ঠ, কম্যান্ডার পূর্ণেন্দু তিওয়ারি, ক্যাপ্টেন বীরেন্দ্রকুমার বর্মা, কম্যান্ডার সুগুণাকর পাকালা, কম্যান্ডার সঞ্জীব গুপ্ত, কম্যান্ডার অমিত নাগপাল এবং নাবিক রাগেশ। কাতারের সশস্ত্রবাহিনীকে প্রশিক্ষণ পরিষেবা প্রদান করা দাহরা গ্লোবাল টেকনোলজিস অ্যান্ড কনসালটেন্সি সার্ভিসেস সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। পূর্ণেন্দু তিওয়ারি ভারতীয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাত থেকে প্রবাসী ভারতীয় সম্মান পুরস্কারও পেয়েছিলেন।
কাতার আদালতের নির্দেশে কার্যতই স্তম্ভিত হয়ে যায় দিল্লি। কোন মামলায় ওই চারজনকে জেলে রাখা হয়েছে, সেটা পর্যন্ত জানানো হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। ধৃতদের পরিবারের দাবি, কোন মামলায়, কী ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে, কী কী অভিযোগ রয়েছে, তার কিছুই জানানো হয়নি তাঁদের। কাতার সরকার তো বটেই, ভারতের তরফেও কোনও রকম সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। এর পরই কেন্দ্রের তরফে তৎপরতা দেখা যায়।