পায়েল মজুমদার, কলকাতা: কে বলে দোলপূর্ণিমা (dol purnima 2023) মানে শুধুই রঙের উৎসব? উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে রং নিয়ে খেলা হয় বটে, তবে হোলি এখানে গান, নাচ এবং আরও অনেক ঐতিহ্যশালী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পবিত্র পরব। ছোট থেকে বড় এমনকি বৃদ্ধরাও সমান উৎসাহে সামিল হন এই উৎসবে যার নাম 'ইয়াওশাং' (Yaoshang)। কোথায় হয় এটি? আসুন, একবার মণিপুর (Manipur) ঘুরে আসা যাক।


 'ইয়াওশাং' নিয়ে দু-চার কথা...
অল্প কথায় মণিপুরের বাসিন্দাদের কাছে এটি আসলে প্রেমের উৎসব। পাঁচ দিন ধরে চলা এই উৎসবের শুরু হয়  'লামতা ' মাসের পূর্ণিমা থেকে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চেই এই তিথি পড়ে থাকে। উৎসবের শুরুতেই খড়ের তৈরি একটি ছোট্ট কুড়েঘর পুড়িয়ে ফেলার রীতি চলে আসছে বহু যুগ থেকে। এই ছোট কুড়েঘরই নাম  'ইয়াওশাং'। এর পরে রয়েছে বেশ কিছু মজার প্রথা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নিজেদের পছন্দমতো জামাকাপড় পড়ে বাড়ি বাড়ি থেকে চাঁদা তুলতে বেরোয়। এই রীতির নাম  'নাকাথেং '। যে টাকাপয়সা তারা পায়, তা নিয়ে মিষ্টি বা টফি কিনে নিজেদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা করে নেওয়াই রীতি।   


নাচেগানে আনন্দ...
এই উৎসবের মূল আকর্ষণ  'থবলচোঙ্গবা'। মণিপুরের অন্যতম ঐতিহ্যশালী নাচ। এখানে ছেলে ও মেয়েরা হাতে হাত দিয়ে বৃত্তাকারে গাইতে গাইতে নাচ করেন। 'থবলচোঙ্গবা' কথাটির অর্থ আসলে চাঁদের আলোয় যে নাচ করা হয়, সেটি। সাধারণত, রাতে, পূর্ণিমার চাঁদের নিচেই এই নাচ করা দস্তুর। পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকেই এই নাচে সামিল করা দস্তুর। হাসিঠাট্টার সঙ্গে নৃত্য়গীতের মেলবন্ধনে মেতে ওঠেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। বিবাহিতারা আবার  'ইয়াওশাং'-র সঙ্গেই   'থবলচোঙ্গবা'-র আয়োজন করেন। বৈষ্ণব ধর্মবিশ্বাসীদের জন্য এটি সংকীর্তনের অন্যতম সময়। 'পলা এশাই' নামে বিশেষ ভক্তিগীতি শোনান তাঁরা। বিভিন্ন মন্দিরে এই ভক্তিগীতির অনুরণন চলতে থাকে। 


রয়েছে রংও...
একেবারে রংহীন নয় এই উৎসব। খুদেদের মধ্যে একে অন্যকে দিব্যি জল দিয়ে ভেজানোর মজার প্রতিযোগিতা চলে। বড়রা মুখে, গলায় রং লাগান। বস্তুত, এই উৎসবের দ্বিতীয় দিনটির নামই হয়েছে এই রং ও জল খেলার ঐতিহ্য মাথায় রেখে। দিনটির নাম 'পিচকারিনুমিত' বা সোজা কথায় পিচকিরির দিন যা চলতে থাকে উৎসবের পঞ্চম দিন পর্যন্ত। তবে গানবাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সংকীর্তন, ভক্তিমূলক মিছিল 'ইয়াওশাং'-র মূল কথা। রঙের উৎসবের আসলে এভাবেই প্রেমের সুর খোঁজে মণিপুর।


আরও পড়ুন:চোখেমুখে বিরক্তি, শক্তিগড়ে লুচি-তরকারি খেলেন অনুব্রত, দোলের দিনই দিল্লির জন্য রওনা