নয়াদিল্লি: জি-২০ সম্মেলনের আগে থেকেই সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করেছিল। এবার ভারত-কানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ফাটল আরও চওড়া হল (India Canada Relations)। খালিস্তানপন্থী নাগরিকের মৃত্যুতে সরাসরি দিল্লিকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সোমবার বহিষ্কার করা হয় ভারতীয় কূটনীতিক পবনকুমার রাইকে। এবার কানাডার এক 'হেভিওয়েট' কূটনীতিককে বহিষ্কার করল দিল্লি (India Expels Canada Diplomat)। ওই কূটনীতিকের নাম প্রকাশ করা হয়নি।


মঙ্গলবার সকালে ভারতে কানাডার হাই কমিশনার ক্যামেরন ম্যাকে-কে তলব করে বিদেশমন্ত্রক। সাউথ ব্লক থেকে তিনি বেরনোর পরই কূটনীতিককে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়, 'আজ কানাডার হাই কমিশনারকে তলব করা হয়েছিল। ভারতে সে দেশের এক কূটনীতিককে বহিষ্কারের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে ওই কূটনীতিককে। আমাদের অভ্য়ন্তরীণ বিষয়ে কানাডীয় কূটনীতিকদের মাথা ঘামানো থেকে ভারতবিরোধী কাজকর্মে তাঁদের যুক্ত থাকা নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত সরকার। এই সিদ্ধান্ত তারই প্রতিফলন'।


খালিস্তানি সমব্য়থী এবং কানাডার জনপ্রিয় শিখ নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জরের মৃত্য়ু ঘিরে ভারত এবং কানাডার মধ্যে সংঘাত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ১৮ জুন সারি-তে শিখদের একটি মন্দিরের বাইরে গুলি করে খুন করা হয় হরদীপকে। কানাডায় শিখ নেতা হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। সেই ঘটনায় ভারতের গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (RAW)-এর প্রধান, ১৯৯৭ ব্যাচের আইপিএস অফিসার, দেশের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক পবনকুমার রাইকে সোমবার বহিষ্কার করেছে কানাডা সরকার। 



আরও পড়ুন: India Canada Relations: খালিস্তানপন্থীর মৃত্যুতে ভারতযোগ! অভিযোগ কানাডার, তীব্র প্রতিক্রিয়া ভারতের


শুধু তাই নয়, সদ্য জি-২০ সম্মেলনে ভারত থেকে ঘুরে গিয়ে, দেশের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ভারতের দিকে আঙুল তোলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও। তিনি বলেন, "গত সপ্তাহে জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিষয়টি উত্থাপন করি আমি। কানাডার মাটিতে, কানাডীয় নাগরিকের মৃত্যুর নেপথ্যে অন্য দেশের যোগসূত্র পাওয়া গেলে, তাতে আমাদের দেশের সার্বভৌমিকতা লঙ্ঘিত হয়, যা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই ধরনের ঘটনা স্বাধীন, মুক্ত এবং গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থারও পরিপন্থী।"


কানাডার রাজনীতিকদের সিংহভাগই ভারতের দিকে আঙুল তুলেছেন। NDP নেতা জগমিত সিংহের কথায়, "সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের বিভাজনমূলক রাজনীতি, হিংসা, খুন এবং হামলার নীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আমরা। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে কড়া বার্তা দেওয়ার সময় এসেছে। " ভারতীয় কূটনীতিকে বহিষ্কারের ঘটনাও দুই দেশের মধ্যে সংঘাত বাড়িয়ে তুলেছে। শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের পথেও অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ঘটনা। 


যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে ভারত। বিদেশমন্ত্রকের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, "দেশের পার্লামেন্টে কানাডার প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁদের বিদেশমন্ত্রী যে দাবি করেছেন, তা খারিজ করছি আমরা। ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যে কোনও ধরনের হিংসায় যুক্ত থাকার অভিযোগ অযৌক্তিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, আইনের শাসনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।" তার পরই কানাডার কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হল।