কলকাতা: বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষের উপর জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগে (Hindi Imposition) বিদ্ধ কেন্দ্র। তা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই এ বার আলোচনায় উঠে এলেন অস্কারজয়ী সুরকার তথা সঙ্গীতশিল্পী এআর রহমান (AR Rahman)। সোশ্যাল মিডিয়ায় তামিল ভাষার প্রতি নিজের ভালবাসার ব্যক্ত করেছেন তিনি। আর তা নিয়েই তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।


তামিল পরিচিতির পক্ষে সওয়াল রহমানের!


শুক্রবার নিজদের টুইটার হ্যান্ডল থেকে একটি ছবি পোস্ট করেন রহমান। তাতে রক্তবর্ণ লাল ক্যানভাসে লালপাড় সাদা শাড়ি পরিহিত এক নারীর অলঙ্করণ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তামিলনাড়ুর আঞ্চলিক সংস্কৃতিতে ওই নারীমূর্তি ‘তামিলানাঙ্গু’ অর্থাৎ ‘তামিল দেবী’ হিসেবে বর্ণিত রয়েছে। ‘তামিলানাঙ্গু’ শব্দটি আবার ‘তামিল তাই ভথু’ গানটির অংশ, যা কি না আসলে তামিলনাড়ুর ‘জাতীয় গান’ হিসেবে গৃহীত। মনোন্মনিয়ম সুন্দরম পিল্লাই ওই গানটির রচয়িতা এবং এমএস বিশ্বনাথন সুরকার।


তামিলনাড়ুর আঞ্চলিক পরিচিতির প্রতীক ওই নারীমূর্তি। তাই রহমানের টুইট ঘিরে জল্পনা শুরু হতে সময় লাগেনি। তার আরও একটি কারণ হল, ছবিতে তামিল ভাষায় লেখা একটি উদ্ধৃতি, বাংলায় যার তর্জমা করেল দাঁড়ায়, ‘ভালবাসার তামিলই আমাদের অস্তিত্বের শিকড়।’ একবিংশ শতকের প্রখ্যাত তামিল কবি ভারতীদাসনের ‘তামিলিয়ক্কম’ কবিতার ছত্র সেটি। ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামে ওই পোস্টটি করেন রহমান।তাতেই আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন তিনি।



আরও পড়ুন: Supreme Court on FCRA: সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তি কেন্দ্রের, জাতীয় স্বার্থেই বিদেশি অনুদানে লাগাম, জানাল আদালত


হিন্দি ভাষার প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, সেই সময় রহমানের এই টুইটকে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবেই গ্রহণ করছেন অনেকে। নিজের আঞ্চলিক পরিচিতির পক্ষে সওয়াল করায় তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন বহু মানুষ। আবার হিন্দি ছবিতে কাজ করে পরিচিতির শিখরে পৌঁছনো রহমানকে ‘ভণ্ড’ বলে কটাক্ষও করতে পিছপা হননি অনেকে। তবে ওই পোস্টের পর এ নিয়ে কোনও রকম কৈফেয়ত দিতে দেখা বা শোনা যায়নি রহমানকে।


হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া বিতর্কের মধ্যেই টুইট রহমানের


উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার হিন্দি ভাষার গুরুত্ববৃদ্ধির কথা বলতে শোনা যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে (Amit Shah)। সংসদের ভাষা কমিটির ৩৭তম বৈঠকে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের সরকারি ভাষা হিন্দিতে সরকার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে হিন্দি ভাষার গুরুত্ব বাড়বে। অমিতের কথায়, “দেশের ঐক্য এবং সংহতিতে সরকারি ভাষাকে গুরুত্ব দেওয়ার সময় এসেছে। রাজ্যের বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষ সরকারি ভাষায় কথা হলতে শুরু করলেই হিন্দি দেশের ভাষা হয়ে উঠবে।”


প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অমিতের এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার লাগাতার ভারতের বহুত্ববাদী পরিচিতি নষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এতে দেশের ঐক্য আহত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন।


অমিতের সেই মন্তব্যের বিরোধিতা করতেই রহমান এই টুইট করেছেন কি না, স্পষ্ট নয়। তবে ২০১৯ সালে প্রত্যেক রাজ্যে হিন্দি-সহ তিনটি ভাষা বাধ্যতামূলক করার প্রসঙ্গ উঠলেও তামিল স্বতন্ত্রতার কথা উঠে এসেছিল তাঁর মুখে। দেশের সমস্ত স্কুলে হিন্দি শেখানো বাধ্যতামূলক করার কথা উঠলেও, রহমান জানিয়ে দেন, তামিলনাড়ুতে হিন্দি বাধ্যতামূলক নয়।