কলকাতা: শক্তিবৃদ্ধি করে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে ‘অশনি’ (Cyclone Asani)। তা নিয়ে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি হয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু ‘বুলবুল’, ‘ফণী’, ‘আমফান’, আর এখন ‘অশনি’, বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়গুলির নামকরণ কীভাবে হয়, কেনই বা হয়, নামকরণের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, জেনে নিন খুঁটিনাটি।
দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নামকরণ
ঘূর্ণিঝড় এববং প্রাকৃতিক বিপর্যয় সংক্রান্ত বিষয়গুলির উপর নজরদারি চালায় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (World Meteorological Organisation/WMO), যা কিনা আবার রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনে। ওই সংস্থার মতে, নির্দিষ্ট কোনও ভৌগরলিক ক্ষেত্রে একসঙ্গে একাধিক ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়া মোটেই অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। সে ক্ষেত্রে কোনও রকম বিভ্রান্তি যাতে তৈরি না হয়, তার জন্যই পৃথক নামকরণ জরুরি। যেমন ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র নামকরণ করেছে শ্রীলঙ্কা। সিংহলী ভাষায় ‘অশনি’ শব্দের অর্থ গভীর ক্রোধ।
একেবারে গোড়ার দিকে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নামকরণের প্রথা ছিল না। সতর্কতা জারি, উদ্ধারকার্য, ত্রাণ সরবরাহ, সব কিছু সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন করতেই পরবর্তী কালে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নামকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়, যাতে সংগঠিত প্রক্রিয়ায়, দক্ষ হাতে আগাগোড়া বিপর্যয় সামাল দেওয়া সম্ভব হয়।
আরও পড়ুন: Cyclone Ashani: গভীর নিম্নচাপ পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে, অশনি আশঙ্কায় মুখ্যমন্ত্রীর সফর সূচিতে বদল
ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি সংক্রান্ত বিষয়ে নজরদারি চালানোর জন্য যে ছয় সংস্থা বিশ্ব আবহাওয়া দফতরের অধীনে রয়েছে, ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (India Meteorological Department) তার মধ্যে অন্যতম। ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার অতিক্রম করলে সেটি ঘূর্ণিঝড় বলে বিবেচিত হয়। ইংরেজি বর্ণানুক্রমিকভাবে, লিঙ্গবৈষম্য মুক্ত, রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক পক্ষপাতিত্বহীনতার নিরিখে বিভিন্ন দেশ এই নামকরণের দায়িত্ব পায়। একবার ব্যবহৃত নাম পুনর্ব্যবহার করা যায় না।
২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য ১৬৯টি নামের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাতে ১৩টি দেশের তরফে ১৩টি নাম রাখা হয় তালিকায়। তার আগে আটটি দেশ মিলে ৬৪টি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছিল। ভারতের তরফে প্রস্তাবিত যে নামগুলি এ যাবৎ ব্যবহৃত হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ‘গতি’, ‘মেঘ’, ‘আকাশ’। বাংলাদেশের তরফে নামাকরণ হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলি হল, ‘হেলেন’, ‘ফণী’। পাকিস্তানের তরফে ঘূর্ণিঝড় ‘লায়লা’, ‘নার্গিস’ ‘বুলবুল’-এর নামকরণ হয়।
ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নামকরণে সমান যোগদান সব দেশের
‘অশনি’র প্রকোপ কেটে যাওয়ার পর যে নতুন ঘূর্ণিঝড় তৈরি হবে, কার নামও ঠিক হয়ে গিয়েছে আগে থেকেই, ‘সিতরং’। তাইল্যান্ড এই নামকরণ করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা থেকে ‘ইডা’-কে ইতিমধ্যেই বাদ দিয়েছে বিশ্ব আহাওয়া সংস্থা। তার বিধ্বংসী রূপ এবং পরবর্তী ভয়াবহতার কথা মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত। আগামী দিনে কখনও ওই নাম ব্যবহার করা যাবে না। তবে নামের সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় কতটা বিধ্বংসী, তার কোনও সংযোগ নেই।