কলকাতা : রঙের অনন্য উৎসব (Festival of Colours)। প্রাচীন উৎসবগুলির মধ্যেও অন্যতম। কিন্তু, এই উৎসবের উৎস কী ? কীভাবে শুরু হল ? এসব নিয়ে রয়েছে একাধিক কিংবদন্তি। দেখে নেওয়া যাক সেসব ...
হোলি নামের উৎস (Origin of Holi)-
হিরণ্যকাশ্যপ নামে এক রাক্ষস রাজা ছিলেন। যিনি পৃথিবী-জয় করেছিলেন। হিরণ্যকাশ্যপ এতটাই অহঙ্কারী হয়ে উঠেছিলেন যে, রাজ্যের সকলকে কেবল তাঁরই উপাসনা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ছেলে প্রহ্লাদ ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর প্রবল ভক্ত। তিনি বাবার উপাসনা করতে অস্বীকার করেন।
আরও পড়ুন ; রঙের উৎসব, ভারতে কতরকম ভাবে খেলা হয় হোলি ?
সেই কারণে হিরণ্যকাশ্যপ তাঁর ছেলে প্রহ্লাদকে হত্যার বিভিন্ন পরিকল্পনা করতে থাকেন। কিন্তু, ভগবান বিষ্ণু প্রতিবার তাঁকে রক্ষা করে গেছেন। অবশেষে, হিরণ্যকাশ্যপ তাঁর বোন হোলিকাকে প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করতে বলেন। হিরণ্যকশ্যপ জানতেন যে হোলিকার একটি বর আছে। যার জেরে, সে অবাধে আগুনে প্রবেশ করতে পারবে।
বিশ্বাসঘাতকতা করে, হোলিকা প্রহ্লাদকে তার কোলে বসতে প্ররোচিত করেছিল এবং সে নিজেই জ্বলন্ত আগুনে আসন গ্রহণ করে। কিংবদন্তি অনুযায়ী, হোলিকাকে তার অশুভ ইচ্ছার মূল্য দিতে হয়েছিল জীবন দিয়ে। হোলিকা জানত না যে সে একা আগুনে প্রবেশ করলে তবেই বর কাজ করবে।
প্রহ্লাদ, এই গোটা সময়টায় ভগবান বিষ্ণুর নাম জপ করে যান। আর তার জেরেই অক্ষত অবস্থায় আগুন থেকে বেরিয়ে আসেন। কারণ চরম ভক্তির জন্য ভগবান বিষ্ণু প্রহ্লাদকে আশীর্বাদ করেছিলেন। এইভাবে, হোলি নামটি হোলিকা থেকে এসেছে। মন্দের উপর ভালোর জয়ের উৎসব।
হোলি এক ভক্তের জয় হিসাবেও পালিত হয়। কিংবদন্তিতে দেখানো হয়েছে যে কেউ যত শক্তিশালীই হোক না কেন, একজন প্রকৃত ভক্তের ক্ষতি করতে পারে না। এছাড়া যারা ভগবান-ভক্তকে নির্যাতন করার সাহস দেখায় তারা ছাই হয়ে যায়।
রয়েছে আরও এক কিংবদন্তি-
হোলির উৎস সম্পর্কে আরও একটি গল্প রয়েছে যা ভগবান কৃষ্ণের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিংবদন্তি আছে যে, ভগবান কৃষ্ণ শিশু থাকাকালীন পুতানার বুকের দুধে বিষাক্ত হয়ে উঠেছিলেন। তাই তাঁর চামড়া নীল রঙের। কৃষ্ণ চিন্তায় ছিলেন যে, ফর্সা চামড়ার রাধা এবং অন্যান্য মেয়েরা এটা পছন্দ করবে কি না। যদিও রাধা এসে তাঁর মুখ কিছু রঙে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন। নীল চামড়া হওয়া সত্ত্বেও, রাধা কৃষ্ণকে গ্রহণ করেছিলেন এবং সেই দিন থেকে হোলি উৎসব পালিত হচ্ছে। যাইহোক, এটি হোলি সম্পর্কে একটি কম পরিচিত ঘটনা এবং হোলির উৎসের কম স্বীকৃত সংস্করণ।
এই বিশেষ দিনের অর্থ :
হোলি "ফাল্গুন" মাসে পূর্ণিমার পরে উদযাপিত হয়, যা সাধারণত ফেব্রুয়ারি এবং মার্চের মধ্যে পড়ে। এটি প্রচণ্ড ঠান্ডার মরসুম শেষে উষ্ণ দিনের দিকে এগিয়ে যাওয়াকে চিহ্নিত করে। উৎসবটি বসন্তের আগমন, শীতের সমাপ্তি, ভালবাসার ফুটে ওঠা, অন্যদের সাথে দেখা করার, ভাঙা সম্পর্কগুলিকে সংশোধন করার দিন হিসেবে উদযাপিত হয়।