পটনা: মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল দীর্ঘ পাঁচ বছর। আড়ালে-আবডালে তো বটেই, প্রকাশ্যে লাগাতার পরস্পরকে আক্রমণ করে এসেছেন তাঁরা। কিন্তু বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার (Nitish Kumar) এবং লালুপুত্র তেজস্বী যাদবের (Tejashwi Yadav) মধ্যে কি সমীকরণ পাল্টাচ্ছে! শুক্রবার রাতে পাশাপাশি দু'জনের ছবি সামনে আসার পর থেকে মনই জল্পনা জোর পাচ্ছে বিহারের রাজনীতিতে। তবে এ বার তেজস্বী বা লালু নন, 'বিশ্বাসঘাতক' নীতীশের তরফে বরফ গলানোর চেষ্টা চলছে বলে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD) সূত্রে খবর। সেই কারণেই শুক্রবার তেজস্বীর ইফতার পার্টিতে আচমকা তিনি হাজির হন বলে খবর। 


তেজস্বীর পার্টিতে নীতীশের উপস্থিতি নিয়ে জল্পনা


বাবার অনুপস্থিতিতে বিধানসভা নির্বাচনে একার নেতৃত্বে দলকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে তুলে আনার পর থেকেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন তেজস্বী। সম্প্রতি উপনির্বাচনেও সাফল্য পেয়েছে তাঁর দল। সেই আবহেই শুক্রবার রাতে নিজের বাড়িতে ইফতার পার্টির আয়োজন করেন তিনি। সেখানে যাদব পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও চিরাগ পাসোয়ান, অওধেশ নারায়ণ সিংহ, সৈয়দ শাহনওয়াজ হুসেন-সহ বিহার রাজনীতির বহু হেভিওয়েট নেতাই উপস্থিত ছিলেন।


কিন্তু সকলকে চমকে দিয়ে ইফতার পার্টিতে প্রবেশ ঘটে নীতীশের। ছাড়াছাড়ি হওয়ার পাঁচ বছর পর শুক্রবারই প্রথম যাদবদের বাড়িতে পা রাখলেন নীতীশ। লালু-জায়া রাবড়ি দেবীর বাড়ি থেকে ৫০ মিটার দূরে গাড়ি দাঁড় করান নীতীশ। সেখান থেকে পায়ে হেঁটেই ইফতার পার্টিতে প্রবেশ করেন। সেখানে যাদব পরিবারের সকলের সঙ্গে আলাপচারিতা করতে দেখা যায় নীতীশকে। এমনকি তেজস্বীর পাশে বসে তাঁর সঙ্গেও কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে। পায়ে হাত দিয়ে নীতীশকে প্রণাম করেন চিরাগও, বাবা রামবিলাস পাসোয়ানের মৃত্যুর পর বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন যিনি। 


আরও পড়ুন: TMC Fact Finding Team: জাহাঙ্গিরপুরীতে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে বাধা, অভিযুক্ত দিল্লি পুলিশ


পশুখাদ্য মামলায় অতি সম্প্রতিই জামিন পেয়েছেন লালুপ্রসাদ যাদব। তাতেই এ বারের ইফতার পার্টিতে বাড়তি আনন্দ যোগ করেছিল। সেই আবহে ধূমধাম করে ইফতারের আয়োজন, তাতে বিরোধী শিবিরের সকল রাজনীতিকে আমন্ত্রণ, নিজে শক্তি প্রদর্শনই তেজস্বীর লক্ষ্য ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তাতে নীতীশের যোগদান জল্পনা আরও বাড়িয়েছে। বিশেষ করে শনিবার যখন বিহার সফরে আসছেন অমিত শাহ।


লালুর দলের সঙ্গে জোট গড়ে ক্ষমতায় এলেও, ২০১৭ সালে রাতারাতি সেই জোট ভেঙে বিজেপি-র সঙ্গে হাত মেলান নীতীশ। নীতীশের তৎকালীন ডেপুটি তেজস্বীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলছিল বিজেপি। দুর্নীতিগ্রস্ত কারও সঙ্গে জোটে থাকতে নারাজ বলে সেই সময় দোহাই দিয়েছিলেন নীতীশ। কিন্তু গত কয়েক বছরে বিজেপি-র সঙ্গে সমীকরণ বদলেছে নীতীশের। ২০২০-র নভেম্বরে চতুর্থবাররে জন্য যদিও নীতীশই মুখ্যমন্ত্রী হন।


বিজেপি-র সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে নীতীশের!


কিন্তু তাঁর দল সংযুক্ত জনতা দল (JDU) মাত্র ৪৩টি আসন জেতে। বিজেপি জয়ী হয় ৭৪টি আসনে। ফলে নীতীশকে নামমাত্র মুখ্যমন্ত্রী করে রেখে বিজেপি-ই সবকিছু পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি বিধানসভাতেও বিজেপি-র বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা যায় নীতীশকে। তার পর থেকে নীতীশের ইস্তফার দাবি তুলছে বিজেপি। কোনও পদ দিয়ে তাঁকে দিল্লিতে পাঠিয়ে গেরুয়া শিবির থেকে অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ি বয়ে তেজস্বীর ইফতারে নীতীশের যোগদান ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে।