নয়াদিল্লি: রক্ষণাবেক্ষণের সময় আগুন লেগে বিপত্তি। পুড়ে গেল ভারতীয় নৌবাহিনীর রণতরী 'INS ব্রহ্মপুত্র'। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে নিখোঁজ যুদ্ধজাহাজের এক জুনিয়র নাবিক। সোমবার মুম্বইয়ে নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ডে ওই যুদ্ধজাহাজটিতে আগুন লাগে। নিখোঁজ নাবিকের খোঁজ চলছে। বাকিদের নিরাপদে উদ্ধার করা গিয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। (INS Brahmaputra)


নৌবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, সোমবার মুম্বইয়ের ডকইয়ার্ডে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল যুদ্ধজাহাজটিতে। সেই সময়ই আগুন লাগে। দমকলবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে যুদ্ধজাহাজের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। কিন্তু আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাহাজটি। নৌবাহিনীর তরফে বিবৃতিতে বলা হয়, 'দমকলবাহিনী ও যুদ্ধজাহাজের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এর পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখা হয়। চলে স্যানিটাইজেশনের কাজ'। (Indian Navy Warship)


কিন্তু নৌবাহিনীর তরফে এই বিবৃতি দেওয়া হলেও, বিকেলের দিকে যুদ্ধজাহাজটি একদিকে হেলে পড়ে। হাজার চেষ্টা চালিয়েও সোজা দাঁড় করানো যায়নি যুদ্ধজাহাজটিকে। এখনও একদিকে হেলে পড়ে রয়েছি সেটি। কী কারণে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটল, কোথা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে, তা খতিয়ে দেখছে নৌবাহিনী। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


আরও পড়ুন: RSS: আরএসএসকে তুষ্ট করতে নিষেধাজ্ঞা তুলেছে মোদি সরকার, প্রতিবাদে সরব কংগ্রেস সহ বিরোধীরা


দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি 'INS ব্রহ্মপুত্র' ওই শ্রেণির প্রথম যুদ্ধজাহাজ। ওই যুদ্ধজাহাজ থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায়। মাঝারি পাল্লার যুদ্ধবিমান ধ্বংসকারী অস্ত্রশস্ত্র, ভূমি থেকে ভূমি ও ভূমি থেকে আকাশে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র এবং টর্পেডো লঞ্চারে সুসজ্জিত যুদ্ধজাহাজটি।


কলকাতার গার্ডেন রিচে তৈরি হয় 'INS ব্রহ্মপুত্র'। ১২৫ মিটার দীর্ঘ যুদ্ধজাহাজটির ওজন ৫ হাজার ৩০০ টন। গতিবেগ ঘণ্টায় ২৭ নটিক্যাল মাইলের বেশি।  ২০০০ সালের এপ্রিল মাসে যুদ্ধজাহাজটি ভারতীয় নৌবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়। ৪০ জন আধিকারিক এবং ৩৩০ জন নাবিক ওই যুদ্ধজাহাজে সওয়ার হয়ে অভিযানে বেরোন। উপকূলীয় নিরাপত্তার সব ধরনের প্রযুক্তিই রয়েছে যুদ্ধজাহাজটিতে। চেতক হেলিকপ্টারও অবতরণ করতে পারে। দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট Seaking কপ্টারও ওঠানামা করে। 


২০১৭ সালে CAG রিপোর্টে বলা হয়, ২০০৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভারতীয় নৌবাহিনীর ৩৮টি জাহাজ এবং ডুবোজাহাজ দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছে। নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজগুলির নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে রিপোর্টে। তার পরও নৌবাহিনীর একাধিক জাহাজ এবং যুদ্ধজাহাজ দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছে। যুদ্ধবিমান পরিবহণকারী বিক্রমাদিত্যও দুর্ঘটনাগ্রস্ক হয়েছে। এর মধ্যে বন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও রয়েছে। ২০১৬ সালে INS Betwa জাহাজটিও নোঙর করার সময় ডুবে যায়। সেবার দু'জন মারা যান, আহত হন ১৪ জন। 


গত ১০ বছরে মুম্বই বন্দরেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেছে। কখনও আগুন লেগেছে, কখনও ধাক্কা লেগেছে দুই জাহাজের মধ্যে, কখনও আবার ঘটেছে বিস্ফোরণ। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে মুম্বইয়ের বন্দরে নোঙর করা 'INS রণবীর' জাহাজটিতে বিস্ফোরণ ঘটে,যাতে তিন নাবিক মারা যান। আহত হন ১১ জন।  ২০১৩ সালের অগাস্ট মাসে 'INS সিন্ধুরক্ষক' জাহাজটিতেও আগুন লাগে। দু'টি টর্পেডো থেকে ওয়ারহেড ছিটকে অন্য জাহাজে আঘাত হানে, তাতে ১৮ জন মারা যান। 'INS তলোয়ার' ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি মাছ ধরার ট্রলারে ধাক্কা মারে। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে 'INS Betwa' বন্দরে নোঙর করার সময় দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। ধাক্কা লেগে জলে ডুবে যায়, তাতে দুই নাবিক মারা যান, আহত হন ১৪ জন। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে 'INS সিন্ধুরত্ন' সাবমেরিনটি ধোঁয়ায় ভরে যায়। দমবন্ধ হয়ে দুই আধিকারিক মারা যান। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে মুম্বইয়ের বন্দরে 'INS কলকাতা' যুদ্ধজাহাজটিতে বিষাক্ত গ্যাসে ভরে যায়, তাতে এক আধিকারিকের মৃত্যু হয়।