নয়াদিল্লি: সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়া ইস্তক শাসক-বিরোধী সংঘাত নয়া মাত্রা পেয়েছে। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা সঙ্গে বিরোধীদের বাদানুবাদ চোখে পড়েছে। একই ভাবে রাজ্যসভার স্পিকার জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে বচসা বেঁধেছে বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন করায় খড়গের। বিজেপি-র অভিভাবক সংস্থা রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘের সমালোচনা করায় খড়গের ভাষণের অংশ বাদ দিয়েছেন ধনকড়। পাশাপাশি, সঙ্ঘের হয়ে তিনি যে মন্তব্য করেছেন সেই নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। (Jagdeep Dhankhar)


সঙ্ঘের সমালোচনা করায় অধিবেশন চলাকালীনই করায় খড়গেকে তিরস্কার করেন ধনকড়। এর পর রাজ্যসভার স্পিকারের আসনে বসে থাকাকালীনই তাঁর মুখে সঙ্ঘ সম্পর্কে প্রশস্তিবাক্য শোনা যায়। সেই নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়েছে। দেশের উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার স্পিকার ধনকড় সাংবিধানিক আসনে বসে এই ধরনের মন্তব্য করতে পারেন কি না প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। (Dhankhar RSS Remarks)


সঙ্ঘের প্রশংসা করতে গিয়ে রাজ্যসভায় যে মন্তব্য করেছেন ধনকড়, তার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখলে। ওই ভিডিও-য় ধনকড়কে বলতে শোনা যায়, "আজ থেকে ২৫ বছর আগে সদস্যতা গ্রহণের পর আমি করায় খড়গের একলব্য হয়ে উঠি। কেন হলাম? সব তপস্বী মানুষজন, ওঁরা দেশপ্রেমী, আত্মসমর্পণের ভাবনা উৎকৃষ্ট, অন্য বিচারধারাও গ্রহণ করেন। আমি তো আশ্চর্য বোধ করি যে, নিজের কথা না ভেবে দেশ এবং সমাজের কথা ভাবেন।" 



অতীতে জনতা দল করলেও, মাঝে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন ধনকড়। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনেও দাঁড়ান, কিন্তু পরাজিত হন। কংগ্রেসে থাকাকালীন বিজেপি এবং সঙ্ঘের সমালোচনাও করেছিলেন ধনকড়। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ সেকথা স্মরণ করিয়ে দেন ধনকড়কে। জবাবে ধনকড় বলেন, "আমি তো বলছি, ২৫ বছর আগে একলব্য হয়েছি। বাল্মীকির মনের পরিবর্তন হয়, আমারও পাল্টাতে সময় লেগেছে। তবে যবে থেকে মন পাল্টেছে, মনে একটাই কাঁটা খচখচ করে যে, প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় বছরেই কেন হলাম না।"


আরও পড়ুন: Rajya Sabha: রাজ্যসভায় মোদির ভাষণ, ওয়াকআউট বিরোধীদের, খড়্গেকে বলতে না দেওয়ার অভিযোগ ধনকড়ের বিরুদ্ধে


ধনকড়ের ওই ভিডিও পোস্ট করে সাকেত লেখেন, 'শ্রদ্ধেয় উপরাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যসভার স্পিকার প্রকাশ্যে বলছেন, তিনি সঙ্ঘের গর্বিত সদস্য। যে কোনও সংগঠনের সদস্য হওয়ার অধিকার আছে ওঁর। কিন্তু দু'দিন আগে বিরোধী দলনেতা করায় খড়গেজির ভাষণের কিছু অংশ বাদ দেন তিনি, যেখানে সঙ্ঘের সমালোচনা করেছিলেন করায় খড়গেজি। সকলেই জানেন, অতীতে ধ্বংসাত্মক কাজকর্মের জন্য সঙ্ঘকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সঙ্ঘ একটি সাম্প্রদায়িক সংগঠন, দেশের সংবিধানকেও প্রত্যাখ্যান করে তারা। তাই চেয়ারে বসে উপরাষ্ট্রপতির কি সঙ্ঘের প্রশংসা করা আদৌ সমীচীন? এর পরও কি ওঁকে পক্ষপাতহীন মনে করা সম্ভব? অত্যন্ত উদ্বেগের এবং বিপজ্জনক বিষয় যে মোদি সরকার সঙ্ঘের সমালোচনা নিষিদ্ধ করছে কারণ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে নিজেকে সঙ্ঘের গর্বিত সদস্য বলছেন'।



কংগ্রেস নেতা সরল প্যাটেল লেখেন, 'অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। দেশের উপরাষ্ট্রপতি, রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন জগদীপ ধনকড় কক্ষে বসেই বলছেন তিনি সঙ্ঘের অনুগামী এবং অনুরাগী। সঙ্ঘের সদস্যদের তিনি দেশপ্রেমী, তপস্বী বলছেন। দেশের সংসদীয় রীতিনীতির জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং ঝুঁকিপূর্ণও। এর পর ওঁকে পক্ষপাতহীন ভাবা যায় কি? সঙ্ঘকে নিয়ে করায় খড়গেজির ভাষণের অংশও বাদ দিয়েছেন উনি। রাহুল গাঁধী আগেই বলেছিলেন, দেশের প্রতিষ্ঠানগুলিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে সঙ্ঘ, যা গণতন্ত্র এবং সমাজতান্ত্রিক দেশের শিকড়ে আঘাতের সমতুল্য'।রাজ্যসভার অধিবেশন চলাকালীন ইতিমধ্যেই এ নিয়ে করায় খড়গের সঙ্গে বচসায় জড়িয়েছেন ধনকড়। তাঁর মন্তব্য নিয়ে এবার সমালোচনা শুরু হয়েছে।