নয়াদিল্লি: আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করেন না যেমন, তেমনই মানবাধিকার রক্ষা নিয়েও তাঁর মাথাব্যথা নেই বলে অভিযোগ বরাবরের। সেই আবহেই উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনের নয়া কীর্তি ঘিরে শোরগোল পড়ে গেল। বন্যা পরিস্থিতি এবং ধসের প্রকোপে যখন বিধ্বস্ত গোটা দেশ, সেই আবহে তিনি ৩০ জন সরকারি আধিকারিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছেন বলে খবর। বন্যা এবং ধস রুখতে না পারার জন্য ওই আধিকারিকদের হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। (Kim Jong Un)
ভারী বৃষ্টিতে বন্যায় কার্যত ভেসে গিয়েছে উত্তর কোরিয়া। ধস নেমেছে জায়গায় জায়গায়। এই দুর্যোগে ১০০০-এর বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন এখনও পর্যন্ত। এমন পরিস্থিতির জন্য সরকারি আধিকারিকদেরই ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছেন কিম। বন্যায় যত প্রাণহানি হয়েছে, যত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার জন্য সরকারি আধিকারিকদের কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে জানান তিনি। আর সেই মতোই ৩০ জন সরকারি আধিকারিককে তিনি মৃত্যুদণ্ড দেন বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার Chosun TV. উত্তর কোরিয়ার এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে এই খবর প্রকাশ করেছে তারা। গত মাসেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় বলে জানা গিয়েছে। (North Korea News)
শুধু বন্যার দায়ই নয়, দুর্নীতি এবং কাজে গাফিলতির অভিযোগও আনা হয় সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে। তাঁদের জন্যই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি বলে দাবি করা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৩০ জন সরকারি আধিকারিকের নাম ও পরিচয় সামনে আসেনি এখনও পর্যন্ত। তবে এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। উত্তর কোরিয়ার প্রাক্তন কূটনীতিক লি ইল-গিউ জানিয়েছেন, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির কোনও শেষ নেই। সামাজিক নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে পরিসংখ্যান লুকিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার সরকারি আধিকারিকরা উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। কখন কার ঘাড়ে কোপ পড়ে ঠিক নেই।
এই প্রথম নয় যদিও, করোনার সময় থেকেই উত্তর কোরিয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার হার অত্যধিক বেড়ে গিয়েছে বলে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। করোনার আগে বছরে যদি ১০টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো, করোনার পর থেকে সংখ্যা বেড়ে ১০০ হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু বন্যার দায় ঘাড়ে চাপিয়ে সরকারি আধিকারিকদের হত্যার এই ঘটনা সাড়া ফেলে দিয়েছে সর্বত্র।
গত জুলাই মাসে বন্যার কবলে পড়ে উত্তর কোরিয়া। প্রায় ৪০০০ বাডিঘর ভেঙে পড়ে। গৃহহীন হন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। বন্যায় বিপর্যস্ত এলাকাগুলি নিজে পরিদর্শন করেন কিম। ক্ষয়ক্ষতি সারিয়ে উঠতে বেশ কয়েক মাস লেগে যেতে পারে বলে জানান তিনি। এখনও ত্রাণশিবিরের আশ্রয়ে রয়েছেন বহু মানুষ। মহিলা, শিশু, প্রতিবন্ধী সকলের ঠাঁই হয়েছে ত্রাণশিবিরে। কবে তাঁরা মাথার উপর ছাদ পাবেন, নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি।