তেহরান: হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি। ১২ ঘণ্টা ধরে খোঁজাখুঁজির পর খোঁজ মিলেছে হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ। রইসি, তাঁর বিদেশমন্ত্রী হোসেন আমিরাবদোল্লাহিয়ান এবং বাকি সওয়ারিদের কেউ বেঁচে নেই বলে জানা গিয়েছে। রইসির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর উত্তরসূরি কে হবেন, সেই নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। আপাতত ইরানের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মোখবরই মসনদে বসতে চলেছেন। (Mohammad Mokhber)


রইসির মৃত্যুতে ৬৯ বছর বয়সি মোখবর অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলাবেন আপাতত। ইরানের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্ত মোখবর। দেশের সর্বোচ্চ শাসক আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়েরও ঘনিষ্ঠ তিনি। আন্তর্জাতিক আইন এবং ম্যানেজমেন্টে ডিগ্রি রয়েছে মোখববরের। রইসির মৃত্যুতে আপাতত ইরানের শাসনকার্য সামলাবেন তিনিই। (Ebrahim Raisi Killed)


তবে সিংহাসনে আরোহণ করলেও, আগামী ৫০ দিনের মধ্যে দেশে নির্বাচন করাতে হবে। মোখবর, দেশের সংসদের স্পিকার মহম্মদ বকর কালিবাফ এবং দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রধান গোলামহোসেন মোহসেনি এঝেইয়ের কাঁধেই পরবর্তী নির্বাচন করানোর দায়িত্ব ন্যস্ত থাকবে। গতকাল রইসির কপ্টার দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর আসার পরই শাসনব্যবস্থাকে সুষ্ঠ ভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন খামেনেই। ক্ষমতার হাতবদলে তাঁর অনুমোদন প্রয়োজন।


আরও পড়ুন: Ebrahim Raisi Killed: হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানের প্রেসিডেন্ট, জোরাল হচ্ছে ষড়যন্ত্রের তত্ত্বও, অশান্তির আশঙ্কা


১৯৫৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর জন্ম মোখবরের। ইরানের রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তাঁর। ২০২১ সালে রাইসি নির্বাচিত হওয়ার পর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান। পাশাপাশি, খামেনেইয়ের নির্দেশ কার্যকরের যে সরকারি সংগঠন রয়েছে ইরানে, সেই Setad-এরও দায়িত্বে ছিলেন একসময়। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর বিদ্রোহীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তর জন্য ওই সংগঠনের প্রতিষ্ঠা। পরবর্তী কালে বিতর্ক এবং নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে ওই সংগঠন। পরমাণু এবং ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্র সংক্রান্ত কার্যকলাপের জন্য ২০১০ সালে মোখবরের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। দু'বছর পর যদিও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় তাঁর উপর থেকে।


২০১৩ সালে আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগ Setad এবং তার অধীনস্থ ৩৭টি সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপায়। খামেনেইয়ের পূর্বসুরি, এবং দেশে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতোল্লা রুহোল্লা খোমেইনির নির্দেশেই Setad-এর প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৭৯ সালে বিদ্রোহী-সহ যাঁরা ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়েছিলেন, তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে দেশের কাজে লাগানোর জন্যই ওই সংস্থার প্রতিষ্ঠা। 


সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত বছর অক্টোবর ইরান থেকে মস্কো গিয়েছিলেন ইরানের আধিকারিকরা। ওই দলে ছিলেন মোখবরও। রুশ সেনাকে ভূমি থেকে ভূমিতে আক্রমণ হানতে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে সম্মত হন তিনি। রইসির মৃত্যুতে এবার ইরানের রাজনীতিতে একেবারে মুখ্য ভূমিকায় উঠে এলেন মোখবর। খামেনেইয়ের বিশ্বস্ত হওয়া সত্ত্বেও দেশে লাগাতার বিরোধের মুখে পড়তে হয় রইসিকে। তাঁর রক্ষণশীল নীতি, কট্টরপন্থী অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তাই মোখবরের আগমনে দেশের রাজনীতির ভারসাম্য পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। 


রইসির মৃত্যুতে দেশের সংসদের স্পিকার মহম্মদ বকর কালিবাফের ক্ষমতায় আসার রাস্তা আরও প্রশস্ত হল। দীর্ঘ দিন ধরেই প্রেসিডেন্ট হওয়ার বাসনা তাঁর। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে ভূরি ভূরি। তাই তাঁকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।