বেজিং: পৃথিবীর অন্য়ত্র পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে গেলেও, এখনও নোভেল করোনাভাইরাসের জেরে উদ্ভুত অতিমারি পরিস্থিতির প্রভাব রয়েছে গিয়েছে চিনে। সেই আবহেই এবার সেখানে নতুন স্বাস্থ্য়সঙ্কট দেখা দিল। নিউমোনিয়ার মতো রহস্যজনক রোগে সেখানে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে শিশুরা। স্কুলে পড়া শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। হাসপাতালগুলি অসুস্থ শিশুতে ভরে গিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। (Mysterious Pneumonia in China)
এখনও পর্যন্ত যে খবর মিলেছে, সেই অনুযায়ী, চিনের বেজিং এবং লিয়াওনিংয়েই আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সেখানকার শিশু হাসপাতালগুলিতে দলে দলে রোগীভর্তি চলছে বলে জানা গিয়েছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক হওয়ায়, একাধিক স্কুল আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। স্কুলে পাঠরত শিশুরা পরস্পরের সান্নিধ্যে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলেই এই সিদ্ধান্ত। এমনকি শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা সামনে এসেছে, যার সঙ্গে কোভিডের সূচনাপর্বের মিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই। (Mysterious Pneumonia in China)
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, দলে দলে শিশুরা এই রহস্যজনক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এই রোগে এখনও পর্যন্ত যে উপসর্গগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলি হল, জ্বর, ফুসফুসের প্রদাহ। কিন্তু ফ্লু হলে যেমন কাশি হয়, এক্ষেত্রে কাশি হচ্ছে না শিশুদের। বেজিংয়ের এক বাসিন্দা সংবাদমাধ্যমে বলেন, "বহু শিশু হাসপাতালে ভর্তি। হাঁচি বা কাশি হচ্ছে না। তেমন কোনও উপসর্গও নেই অনেকের। শুধু জ্বর রয়েছে বেশ। ফুসফুসে ডেলা ডেলা ঠেকছে।"
আন্তর্জাতিক রোগ নজরদারি সংস্থা ProMed এই পরিস্থিতিতে লাল সতর্কতা জারি করেছে মঙ্গলবার। তারা জানিয়েছে, সঠিক ভাবে নির্ণয় করা না গেলেও, নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বহু শিশু। রোগের কার্যকারণ এখনও অস্পষ্ট। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সেভাবে না ছড়ালেও, শিশুদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। স্কুলে পাঠরত শিশুদের মধ্যেই যেহেতু সংক্রমণ বেশি, তাই স্কুল থেকেই রোগটি ছড়িয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
আমেরিকার এপিডেমিওলজিস্ট এরিক ফিগল-ডিং সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। তাতে চিনের লোকজনকে মাস্কে মুখ ঢেকে রাস্তায় বেরোতে দেখা গিয়েছে। ভিডিও-টির সত্যতা যদিও যাচাই করে দেখেনি এবিপি আনন্দ। তবে রোগ বিশেষজ্ঞদের অনুমান, মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়ে-তে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, যা আসলে একটি ব্যাকটিরিয়া জনিত সংক্রমণ। চলতি কথায় 'ওয়াকিং নিউমোনিয়া' নামেও পরিচিত এই রোগ। মাঝারি মানের সংক্রমণ থেকে পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে, হাসপাতালেও ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি হতে পারে এই রোগে।
অক্টোবরের গোড়ার দিক থেকে চিনে শিশুরা দলে দলে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে বলে জানা গিয়েছে। তবে পরিস্থিতি গুরুতর হলেও, মৃত্যুর খবর নেই এখনও পর্যন্ত। বিষয়টি নিয়ে চিনের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, 'সম্প্রতি অন্য একটি রিপোর্টে শ্বাসযন্ত্রের অসুখ বাড়ছে বলে জানানো হয়। এই রোগের সঙ্গে তার কোনও সংযোগ রয়েছে কিনা, তা স্পষ্ট নয় এখনও পর্যন্ত।'
এর আগে, ১৩ নভেম্বর চিনের ন্যাশনাল হেল্থ কমিশন শাসযন্ত্রের রোগ বাড়ছে বলে সাংবাদিক বৈঠক করে জানায়। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে হলে জানায় তারা। চিনের চিকিৎসক এবং গবেষকদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে WHO.