অমরাবতী: অন্ধ্রপ্রদেশে স্কিল ডেভেলপমেন্ট দুর্নীতি মামলায় (AP Skill Development Scam) রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী গ্রেফতার চন্দ্রবাবু নায়ডু। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও তেলুগু দেশম পার্টির প্রধানকে গ্রেফতার করল সিআইডি। ডিজাইন টেক সিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেড-সহ একাধিক ভুয়ো কোম্পানি খুলে সরকারের টাকা তছরুপের অভিযোগ। সিআইডি-র দাবি, ৩৭০ কোটি টাকার দুর্নীতি মামলার কিংপিন চন্দ্রবাবু। (N. Chandrababu Naidu)
দলীয় কর্মসূচিতে নান্দিয়ালে ছিলেন চন্দ্রবাবু। সেখানেই শুক্রবার রাত ৩টে নাগাদ তাঁকে গ্রেফতার করতে হাজির হয় পুলিশের বিশাল বাহিনী এবং সিআইডি আধিকারিকরা। কিন্তু সেখানে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। টিডিপি-র কর্মী, সমর্থকরা গ্রেফতারিতে বাধা দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দীর্ঘক্ষণ টানাপোড়েন চলার পর আজ সকাল ৬টা নাগাদ গ্রেফতার হন চন্দ্রবাবু। পূর্ব গোদাবরী জেলা থেকে চন্দ্রবাবুর ছেলে নারা লোকেশকেও আটক করেছে অন্ধ্র সিআইডি।
চন্দ্রবাবু যদিও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সামনে এসেছে। সিআইডি-র দাবি, স্কিল ডেভলপমেন্ট প্রকল্পে ৩৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। সেই নিয়ে চন্দ্রবাবুর সহযোগীরা তদন্তকারীদের নজরে রয়েছেন। চন্দ্রবাবুর মোট ২৬ জন সহযোগীকে নোটিস ধরিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
যুব সমাদের জন্য় কর্মসংস্থান তৈরি করতে Andhra Pradesh State Skill Development Corporation (APSSDC) প্রকল্পের সূচনা। তাতেই কোটি কোটি টাকার যে দুর্নীতির অভিযোগ। সংগঠনের তৎকালীন এমডি ঘণ্টা সুব্বা রাও, অবসরপ্রাপ্ত আইএএস আধিকারিক এবং APSSDC-র তৎকালীন ডিরেক্টর কে লক্ষ্মীনারায়ণকও নোটিস ধরিয়েছে ED. অভিযোগ, ২০১৪-'১৫ সালে স্কিল ডেভলপমেন্ট প্রকল্পের জন্য চন্দ্রবাবুর তদানীন্তন সরকারের সঙ্গে দুই সংস্থার চুক্তি হয়, সিমেন্স ইন্ডিয়া সফ্টওয়্যার এবং ডিজাইন টেক। সবমিলিয়ে প্রকল্পে ৩৩০০ কোটি টাকা খরচ পড়বে বলে সেই সময় ঠিক হয়, যার ৯০ শতাঁশ খরচ-খরচা ওই দুই সংস্থা বহন করবে এবং বাকি ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৩৭০ কোটি টাকা অন্ধ্র-সরকার দেবে বলে জানানো হয় সকলকে।
কিন্তু অভিযোগ-
১) কিছু যাচাই না করেই সিমেন্স ইন্ডিয়া এবং ডিজাইন টেকের প্রস্তাব গৃহীত হয়ে যায়। কাজ শুরু হওয়ার আগেই অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের তরফে ৩৭০ কোটি টাকা দিয়ে দেওয়া হয়।
২) কিন্তু সিমেন্স ইন্ডিয়া এবং ডিজাইন টেকের তরফে একটি পয়সাও খরচ করা হয়নি।
৩) সরকারের তরফে যে ৩৭০ কোটি টাকা প্রকল্পের জন্য দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে ২৪১ কোটি টাকা প্রকল্প থেকে বের করে নেওয়া হয়। এর পর হাওয়ালার মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থায় বার বার হাতবদল হতে থাকে ওই টাকা। খরচ-খরচার জাল বিলও তৈরি করা হয়।
৪) ২০১৮ সালে সেই নিয়ে প্রথম অভিযোগটি জমা পড়ে। পণ্য ও পরিষেকা কর দফতর, গোয়েন্দা বিভাগের তরফে দায়ের হয় মামলা পুণেতে। কিন্তু সরকারি ভাবে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। বরং অভিযুক্তদের আড়াল করতে রাজ্য সচিবালয়ই তুলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
এই মামলায় চন্দ্রবাবুকে এক নম্বর অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে সিআইটি। সম্প্রতি চন্দ্রবাবুকে আয়কর দফতরের তরফেও নোটিস ধরানো হয়। একটি পরিকাঠামো সংস্থার কাছ থেকে তিনি ১১৮ কোটি টাকা নিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয় তাতে। ওই ১১৮ কোটি টাকা চন্দ্রবাবু আয়ের হিসেবে দেখাননি কেন, কেন তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে না, সেই নিয়ে শোকজও ধরানো হয়।