নয়াদিল্লি: হীরে, মুক্ত ও রূপোর গয়নাগাঁটি সহ ফেরার হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদি ও তাঁর মামা মেহুল চোকসির মালিকানাধীন বিভিন্ন সামগ্রী হংকং থেকে ফেরত আনা হয়েছে। বুধবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) জানিয়েছে যে, এই সামগ্রীগুলির ঘোষিত মূল্য ১,৩৫০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, ইডি নীরব মোদি ও চোকসির মালিকানাধীন সংস্থার কাছ থেকে ২,৩৪০ কেজি ওজনের হিরে, মুক্তো ও রূপোর গহনা উদ্ধার করেছে। এই দামী সামগ্রীগুলি ১০৮ প্যাকেটে হংকং থেকে মুম্বইয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এরমধ্যে ৩২ টি নীরব মোদির নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাগুলি থেকে এবং বাকি চোকসির নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাগুলির কাছ থেকে।
ইডি জানিয়েছে, মূল্য নির্ধারণ ও বাজেয়াপ্তকরণের প্রক্রিয়া চলছে। মুম্বইয়ের পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের শাখায় বহু হাজার কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির মামলায় ইডি নীরব মোদি ও চোকসি-উভয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে ইডি।
তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ওই মূল্যবান সামগ্রীগুলি ফিরিয়ে আনার জন্য হংকং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। ২৩ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার পিএনবি দুর্নীতির মূল অভিযুক্ত নীরব মোদি ২০১৯-র মার্চ থেকে ব্রিটেনের জেলে বন্দি।চোকসি  বর্তমানে অ্যান্টিগাতে রয়েছেন। এই মামলায় দুই অভিযুক্তেরই প্রত্যর্পণের চেষ্টা চালাচ্ছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
মুম্বইয়ের একটি বিশেষ আদালত নীরব মোদির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। পলাতক আর্থিক অপরাধ আইন (এফইওএ) এর আওতায় এই প্রথম এ সংক্রান্ত নির্দেশ দিয়েছে আদালত। নির্দেশে আদালত বলেছে যে, এফইও আইনের ধারা অনুযায়ী ইডি একমাসের মধ্যে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।


৪৯ বছরের ব্যবসায়ীকে গত বছরের ডিসেম্বরে পলাতক আর্থিক অপরাধী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। লন্ডনের জেলে বন্দি অভিযুক্ত বর্তমানে ভারতে প্রত্যর্পণ এড়াতে আইনি লড়াই করছেন। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও আর্থিক তছরূপের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

গত বছরের জানুয়ারিতে সিবিআইয়ের দায়ের করা এফআইআরের পরিপ্রেক্ষিতে  নীরব মোদি ও মেহুল চোকসি এবং অন্য অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এই দুর্নীতির ঘটনায় দুটি মামলা রুজু করে ইডি।
ইডি-র অভিযোগ, এই দুই ব্যক্তি কিছু ব্যাঙ্ক কর্মীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে পিএনবি-র সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। অবৈধ উপায়ে তাঁদের সংস্থাগুলির জন্য লেটার্স অফ আন্ডারটেকিং হাতিয়ে তাঁরা এই প্রতারণা করেছেন।এরফলে ব্যাঙ্ককে লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়েছে।

ইডি আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে, নীরব মোদি ও চোকসি দুর্নীতি যুক্ত মোটা অঙ্কের অর্থ বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। বুধবার ভারতে যে প্যাকেটগুলি আনা হয়, সেগুলি দুই অভিযুক্ত বিদেশে খেপে খেপে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যাতে কারুর সন্দেহ না হয় সেজন্য দুর্নীতি থেকে প্রাপ্ত অর্থ গয়নাগাঁটির আকারে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ভারতে যে গয়নাগাঁটিগুলি ফেরত আনা হয়েছে সেগুলির ওজন ২৩৪০ কেজি।

এই সব গয়নাগাঁটি ২০১৮-র শুরুতেই ভারত থেকে দুবাই হয়ে হংকংয়ে পাঠানো হয়েছিল। ইডি-র আধিকারিকরা ২০১৮-র জুলাইতে এই সামগ্রীগুলি সম্পর্কে গোপন সূত্র মারফত জানতে পেরেছিলেন। সংস্থার তত্কালীন প্রধান হংকং কর্তৃপক্ষ সব সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং সেগুলি হংকংয়ের সিল করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে সেগুলি দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।